আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর দলিল লেখক কাবেরুল ইসলাম সোনারুলের বিরুদ্ধে বাগমারা উপজেলার গণিপুর জমি জালিয়াতিসহ দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার রাজশাহী নগরীর ফটো জার্নালিষ্ট কার্যালয়ে কাবেরুল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছেন গণিপুর ইউনিয়নের (ইউপি) বুজরুক কোলা গ্রামের সনাতন ধর্মালম্বী ও মুসলিম পরিবারের ভুক্তভোগী সদস্যরা। ভুক্তভোগীরা অভিযুক্ত দলিল লেখকের লাইসেন্স বাতিল ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
.
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, দলিল লেখক কাবেরুল ইসলাম সোনারুল একজন খুনি, ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য, চাঁদাবাজ, জমি জালিয়াতকারী, মিথ্যা মামলাবাজ ও জমি দখলদার। কাবেরুল ইসলাম সোনারুল ও তার ভাই মিনারুল ইসলাম, মাইনুল ইসলাম ও সাবেরুল ইসলাম এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা এলাকায় জোর-জবরদখল ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
.
তাদের কাজে বাধা দিলে নেমে আসে খুন জেল-জুলুম। তাদের বিরুদ্ধে বাগমারা থানা মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরই প্রেক্ষিতে তাদের ভয়ে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা আরও বলেন, এসব বিষয়ে স্থানীয় গণিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. মনিরুজ্জামান রঞ্জুর কাছে অভিযোগ করলেও কাবেরুল গং এর ভয়ে তিনি কোন সমাধান করতে পারেন নি।
.
এদিকে আদালত থেকে ওই জমির ভোগদখল থেকে বিরত থাকতে বললেও তারা প্রকৃত জমির মালিকদের ভয়-ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। বুজরুক কোলা মৌজার জেএল নং ১০৩ এ প্রায় ৪৮ বিঘা জমির ৩০ জন মালিক রয়েছে। যার বেশিরভাগ সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে জমি দখলে উঠে-পড়ে লেগেছে। সোনারুল পেশায় একজন দলিল লেখক হওয়ায়, তিনি ভুক্তভোগীদের ৩০ মালিকের ভোগদখলে থাকা জমির ভুয়া কাগজ বানিয়ে তা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
.
এর আগে প্রতিবাদ করায় ১৯৮৯ সালে প্রকাশ্যে দিবালোকে নাদের আলী মাস্টারকে খুন করে। এছাড়াও তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় ২০২১ সালে মাধাইমুড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমানকে হত্যা করে। মামলাটি এখনও চলমান আছে। আবার নিজেরাই কোন অঘটন ঘটিয়েও অপরের ওপর মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়। যার কারণে মামলা-হামলা ও প্রাণনাশের ভয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকে। বর্তমানে প্রাণনাশের হুমকি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে ভূক্তভোগীরা। এমতবস্থায় এসব সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।পাশাপাশি তারা দখলদার মুক্ত জমিপ্রাপ্ত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেন-তার সহযোগিতা চেয়েছে।
.
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাড. মনিরুজ্জামান রঞ্জু বলেন, গেল ৩/৪ মাস আগে ভুক্তভোগীরা তার কাছে এসেছিলেন। পরে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত দুই পক্ষকেই নিয়ে বসা হয়।
তবে ওই বৈঠকে অভিযুক্ত কাবেরুল ইসলাম সোনারুল তার পক্ষে কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি নি। অজুহাত হিসেবে তারা জানিয়ে ছিলেন, তাদের সকল কাগজ আদালতে আছে। তাই জমির কোনো কাগজ দেখানো সম্ভব নয়। ফলে বিষয়টির কানো সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান রঞ্জু আরও বলেন, ভুক্তভোগীদের দখলে থাকা জমি কাবেরুল ইসলাম সোনারুল জবরদখল করার চেষ্টা করছেন।
.
তবে অভিযুক্ত দলিল লেখক কাবেরুল ইসলাম সোনারুল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা জমি দখল ও হুমকির অভিযোগ সত্য নয়। বিষয়টি সুরাহা করতে আদালতের দারস্থ হয়েছি। সেখানেই সু-বিচার পাবো। এদিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী মানিক সরকার, অখিল সরকার, রতন প্রামানিক, মান্নান শেখ, আইয়ুব আলী ও আবু বাক্কার প্রমুখ।
প্রিন্ট