আব্দুল হামিদ মিঞাঃ
রাজশাহীর বাঘায় পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে সংকট আরো তীব্র হয়েছে রাজশাহী বাঘা উপজেলায় । সব জায়গায় অধিকাংশ টিউবওয়েলেই সহজে মিলছে না সুপেয় পানি। দৈন্দিন কাজের চাহিদা মেটাতে ভরসা করতে হচ্ছে পুকুরের পানি। যেখানে পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই হাঁড়ি পাতিল কলস নিয়ে ছুটতে হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি আনতে। পানির সংকট দুর করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুপেয় পানি সরবরাহ করছে ‘সাগর’।
.
আনসার ভিডিপির সদস্য সাগর ইসলাম আড়ানি পৌরসভার চক সিংগা গ্রামের বাসিন্দা। পরিচিত মানুষেরা চেনে ‘সাগর’ নামে।
পানির সংকটে ভাবলেন বাড়ি বাড়ি পানি পৌঁছে দেওয়ার কথা। তার এমন ভাবনা থেকেই শুরু করলেন এলাকায় পানি পৌঁছে দেওয়ার কাজ। তাকে কাজে সহযোগিতা করছেন এলাকার আনসার ভিডিপির কযেকজন সদস্য। আড়ানি পৌরসভা ছাড়াও আড়ানি ইউনিয়নের যেসব গ্রামে পানির সংকট বেশি সেখানে ছুটে যান পানি নিয়ে। তাতেই যেন আনন্দ খেলে যাচ্ছিল তাঁর মনে।
দুুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাঁর এই পানি সরবরাহের কাজ । সাব মার্সেবল (জল মটর) টিউবওয়েল থেকে ৫০০ লিটারের প্লাস্টিকের ট্যাংকিতে (ড্রাম) পানি ভরে সেগুলো ভ্যানে তোলে যান গ্রামে গ্রামে। সেই পানি শেষ হলে আবারো পানি ভরে নিয়ে যান আরেক গ্রামে। এর আগে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে দুপুর পর্যন্ত ভাড়া মারেন।
.
সাগর জানান, যা করছেন,তা নিজের টাকায়। ‘ পানির সংকট দেখে মানুষের সেবা হিসেবে পানি সরবরাহের কাজ শুরু করেছেন। তার কাজে সহযোগিতা করছেন এলাকার আনসার ভিডিপির সদস্য,রাব্বি হোসেন,হাফিজা খাতুন,রাশিদা খাতুন।
সাগর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। তার বযস ৫২ বছর। ২৫ বছর আড়ানি মনোমোাহনী উচ্চ বিদ্যালয়ে সামান্য বেতনে নৈশ প্রহরির কাজ করেছেন। পরে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন ভানগাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সাগরের পানি সরবরাহের প্রশংসা করে আব্দুল হালিম বলেন,পানির সংকটের সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পানি দেওয়ায় খাবার পানির সংকট কাটছে।
.
জানা গেছে, ২টি পৌরসভাসহ উপজেলার অভীর নলকূপের সংখ্যা- সরকারি বেসরকারি(ব্যক্তিগত) মিলে চব্বিশ হাজারের বেশি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিককালে আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। এ কারণে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন বেশ কিছু হস্তচালিত অগভীর নলকূপে পানি না উঠায় উপজেলা ও পৌরবাসীর মধ্যে পানির সমস্যা বিরাজ করছে।
.
মিলিকবাঘা গ্রামের কৃষক ও আম ব্যবসায়ী আবু বক্কর জানান,খরতাপে গাছের আমসহ গ্রীষ্মকালীন ফল ঝরে পড়ছে। স্যলোচালিত নলকূপে পানি উঠছেনা। পানির সমস্যায় ধানের ক্ষেত নিয়েও চিন্তিত কৃষকরা।
.
বাঘা পৌরসভার বাজুবাঘা গ্রামের মহসিন আলী বলেন, তার বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। পাশের যে বাড়িতে সাব মার্সেবল টিউবওয়েল আছে,সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করে চাহিদা মেটাচ্ছেন।
পৌরসভার উত্তর মিলিক বাঘা গ্রামের নাসির উদ্দীন বলেন, বাসা বাড়ির টিউবওয়েলে ১৭০ ফুট পাইপ বসিয়েছি। এর পরেও পানি উঠছেনা। বাধ্য হয়ে জল মর্টার বসিয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি।
.
হিজলপল্লী গ্রামের গ্রামের আম চাষি জাম্বার হোসেন বলেন, পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় স্যালো মেশিনে পানি উঠছেনা। ধানের ক্ষেত রক্ষার জন্য পাশের মালিকের পুকুর থেকে সেচ দিচ্ছি। সেই পানি নিতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে।
.
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের,বাঘা উপজেলার সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল মোমিন বলেন, কোথাও কোথাও ৩০ থেকে ৩৫ ফিট পানির স্তর নীচে নেমে গেছে। পানির স্তর নিচে নামার কারণে হাত টিউবওয়েলে নিচু স্থান থেকে পানি সরবরাহ করতে পারে না। যারা ১২০ ফিট থেকে ১৩৫ র্ফিটের কম পাইপ দিয়ে ব্যক্তি মালিকানায় নলকূপ স্থাপন করেছেন তাদেরই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ১৫০ ফিট পর্যন্ত পাইপের সংযোগ দেওয়া না হলে ভালো পানি পাওয়া যাবে না। তবে সরকারিভাবে সাবমার্সিবল নলকূপে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
.
সাবমার্সিবল নলকূপ ১৫০ ফিট পাইপ দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে। তারপরও পানির যেটুকু সমস্যা রয়েছে,বৃষ্টি হলে এই সমস্যা থাকবেনা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে কৃষি, গৃহস্থালি এবং সুপেয় পানি পানের ক্ষেত্রে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, বর্ষাকালে নদী-নালা, খালবিলের পানি সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু কৃষিতে পানির ব্যবহার বেশি হয়, সেক্ষেত্রে যে সমস্ত ফসলে সেচ কম লাগে সেই ফসলের আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমেও পানির স্তর ঠিক রাখা যায়। বৃষ্টি না হওয়ায় ফসল উৎপাদন করতে কৃষকের সেচ খরচ বেশি লাগছে। জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।
প্রিন্ট