ঢাকা , শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo সদরপুর থানায় নবাগত ওসি নাজমুল হাসানের যোগদান Logo রূপগঞ্জে বালুনদীর উপর চনপাড়া সেতু যেন মরনফাঁদ! Logo ইমাম কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo কাঁফনের কাপড় মাথায় বেঁধে ফরিদপুর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের গণমিছিল Logo সরকারি খাল দখল করে তিনতলা ভবন নির্মাণ, বোয়ালমারীতে কৃষকদের মানববন্ধন Logo রাজশাহী রেঞ্জ ও জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হলেন গোদাগাড়ী থানার রুহুল আমিন Logo নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল জনগণ প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে —ডঃ হামিদুর রহমান Logo বায়তুন নূর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ফ্রি ওমরাহ পালন: মানবসেবায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত Logo আলমডাঙ্গার সিঙ্গাপুর প্রবাসী মহেশপুরের সায়ের আলি মারা গেছে Logo কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‌ ফরিদপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ‌ অবস্থান কর্মসূচি ‌ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বিএমডিএতে অস্থিরতা, ভরা মৌসুমে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা !

আলিফ হোসেনঃ

রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিএমডিএ) এখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। অনেকে বলছে, বিএমডিএর চেয়ারম্যানের ব্যর্থতার জন্য এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, সাবেক নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে কার্যালয় থেকে যেতে বাধ্য করার প্রেক্ষিতে মামলা, চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর, সাময়িক বরখাস্ত ও শোকজের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারাও পাল্টা কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। এতে ভরা মৌসুমে যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে সেচ কার্যক্রম বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

.

এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে ইডি শফিকুল ইসলাম অফিস ছাড়ার পর গত ৭ এপ্রিল সোমবার বিএমডিএতে নতুন ইডি নিয়োগ করেছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত সচিব তরিকুল আলমকে ইডি নিয়োগ করা হয়েছে। তা নিয়েও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, বিএমডিএ’র কাজ প্রকৌশল বিদ্যার। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ পদে অযোগ্য।

.

আওয়ামী সরকারের আমলে গত বছরের ১৪ জুলাই বিএমডিএর ইডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। সূত্র বলছে, শফিকুল ইসলাম একসময় রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সহকারী ছিলেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু একমাস ধরেও তিনি বিএমডিএ ছাড়ছিলেন না।

.

ফলে গত ২৩ মার্চ একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী গিয়ে তাকে দফতর ছাড়তে বাধ্য করেন। এরপরই তাকে হেনস্থার অভিযোগে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন শফিকুল ইসলাম। ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে তিনি মামলাও করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ৬০ জনকে। ঘটনার পর পরই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন সহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে আরও আটজনকে। গত ২৫ মার্চ স্বাক্ষর করা শোকজের এই চিঠি তারা পেয়েছেন গত ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার । একের পর এক এসব পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে তারাও পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন। ইতোমধ্যে গত ২৬ মার্চ রাজশাহী ও ২৭ মার্চ ঠাকুরগাঁও এবং রংপুরে মানববন্ধন করা হয়েছে।

.

এদিকে বিএমডিএর একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ইডি শফিকুল ইসলাম ছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তা। তাই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রভাব খাটিয়ে একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর ও দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করিয়েছেন। তদন্তের আগেই এভাবে অব্যাহতি ও সাময়িক বরখাস্ত করা একেবারেই নজিরবিহীন। ফলে বিএমডিএর সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। তারাও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে সেচ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।

.

সুত্র বলছে, শফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সুপারিশে বিএমডিএর ইডি হয়েছিলেন বলে জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে আওয়ামী সরকারের পতনের পরই তার সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি আরও প্রকট হয় যখন আওয়ামী সরকারের পতনের পরও সেই দলের সমর্থক ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করতে থাকেন শফিকুল ইসলাম।

.

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাহফুজুর রহমান নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছাড়া কাউকেই পাত্তা দিতেন না ইডি শফিকুল ইসলাম। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের চাকরি বিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ মনোনিত আইইবি রাজশাহী কেন্দ্রের সদস্য। তার পরামর্শ মোতাবেক ইডি গত ১৭ বছর থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজশাহীতে বদলি করে না এনে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদেরই একের পর এক নানা সুবিধা দিতে থাকেন।

.

নিজের বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল ইসলাম বিএমডিএর নাজিরুল ইসলাম নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে বদলির আদেশ জারি করেন। অথচ নাজিরুল ইসলাম বিগত সরকারের আমলে অনুমোদিত ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হিসেবে কাজ করছেন। নাজিরুল ইসলাম গত সরকারের আমলে মোট তিনটি প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বিভিন্ন সময় সামনে এসেছে।

.

বিএমডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ইডি শফিকুল ইসলামের বন্ধু। যিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের, তিনি দিনে যে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অফিস করেন তার বেশিরভাগ সময়ই থাকতেন ইডির কক্ষে। ইডিকে কব্জা করে তিনিই চালাচ্ছিলেন বিএমডিএ। গত ৯ ডিসেম্বর ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ৯৫টি লটের বিপরীতে দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। এই টেন্ডারের অন্তত ৩০টি লটের গোপন দরপত্র পিডি শহীদুর রহমান তৎকালীন ইডি শফিকুলের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানকে জানিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে পিডি শহীদুর রহমান শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামান ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে বিষয়টি ইডিকে অবহিত করেন। কিন্তু ইডি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বিষয়টি ধাঁমাচাঁপা দিতে দ্রুত টেন্ডার বাতিলের ব্যবস্থা করেন।

.

জানা গেছে, বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল গত ১৩ মার্চ দুটি আদেশে ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি আরও দুই আদেশে ২৭ জনকে বদলি করা হয়।আর যেসব কর্মচারী জুলাই আন্দোলন দমনে সরাসরি লাঠি হাতে মাঠে নামেন, তাদের বহাল রাখা হয়। ইডির বদলির আদেশের পর মাহফুজুর রহমান কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের ডেকে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনপত্র পাঠানোর নির্দেশনা দেন। এতে শফিকুল ইসলামকে বিএমডিএতেই রাখার দাবি জানাতে বলা হয়।

.

সূত্র আরও জানায়, বিএমডিএ’র আওয়ামীপন্থী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সাত্তার এবং সম্পাদক জীবন ৪ আগস্ট আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে লাঠি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। কিন্তু ইডি সাত্তারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। শুধু চেয়ারম্যানের অনুরোধে জীবনকে বদলি করেন। আর আবদুস সাত্তার শেষ পর্যন্ত ইডির জিপচালক ছিলেন। এসব নিয়ে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কথা বলতে গেলে ইডি দুর্ব্যবহার করতেন বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ। তাদের দাবি, ইডি বলতেন যে এখনও বিএনপি বা অন্য কোনো দল ক্ষমতায় আসেনি। এসব নিয়ে ক্ষোভ ছিল সবার।

.

এসব বিষয়ে কথা বলতে গত বুধবার বিএমডিএর সদ্য সাবেক ইডি শফিকুল ইসলামকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিএমডিএতে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা ঠিক। তবে এটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টা এখন মন্ত্রণালয় দেখছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সদরপুর থানায় নবাগত ওসি নাজমুল হাসানের যোগদান

error: Content is protected !!

বিএমডিএতে অস্থিরতা, ভরা মৌসুমে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা !

আপডেট টাইম : ১০:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

আলিফ হোসেনঃ

রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (বিএমডিএ) এখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। অনেকে বলছে, বিএমডিএর চেয়ারম্যানের ব্যর্থতার জন্য এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, সাবেক নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে কার্যালয় থেকে যেতে বাধ্য করার প্রেক্ষিতে মামলা, চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর, সাময়িক বরখাস্ত ও শোকজের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারাও পাল্টা কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। এতে ভরা মৌসুমে যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে সেচ কার্যক্রম বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

.

এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে ইডি শফিকুল ইসলাম অফিস ছাড়ার পর গত ৭ এপ্রিল সোমবার বিএমডিএতে নতুন ইডি নিয়োগ করেছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত সচিব তরিকুল আলমকে ইডি নিয়োগ করা হয়েছে। তা নিয়েও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, বিএমডিএ’র কাজ প্রকৌশল বিদ্যার। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ পদে অযোগ্য।

.

আওয়ামী সরকারের আমলে গত বছরের ১৪ জুলাই বিএমডিএর ইডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। সূত্র বলছে, শফিকুল ইসলাম একসময় রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সহকারী ছিলেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু একমাস ধরেও তিনি বিএমডিএ ছাড়ছিলেন না।

.

ফলে গত ২৩ মার্চ একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী গিয়ে তাকে দফতর ছাড়তে বাধ্য করেন। এরপরই তাকে হেনস্থার অভিযোগে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন শফিকুল ইসলাম। ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে তিনি মামলাও করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ৬০ জনকে। ঘটনার পর পরই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন সহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে আরও আটজনকে। গত ২৫ মার্চ স্বাক্ষর করা শোকজের এই চিঠি তারা পেয়েছেন গত ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার । একের পর এক এসব পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে তারাও পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন। ইতোমধ্যে গত ২৬ মার্চ রাজশাহী ও ২৭ মার্চ ঠাকুরগাঁও এবং রংপুরে মানববন্ধন করা হয়েছে।

.

এদিকে বিএমডিএর একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ইডি শফিকুল ইসলাম ছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তা। তাই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রভাব খাটিয়ে একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর ও দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করিয়েছেন। তদন্তের আগেই এভাবে অব্যাহতি ও সাময়িক বরখাস্ত করা একেবারেই নজিরবিহীন। ফলে বিএমডিএর সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। তারাও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে সেচ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।

.

সুত্র বলছে, শফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সুপারিশে বিএমডিএর ইডি হয়েছিলেন বলে জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে আওয়ামী সরকারের পতনের পরই তার সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি আরও প্রকট হয় যখন আওয়ামী সরকারের পতনের পরও সেই দলের সমর্থক ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করতে থাকেন শফিকুল ইসলাম।

.

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাহফুজুর রহমান নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছাড়া কাউকেই পাত্তা দিতেন না ইডি শফিকুল ইসলাম। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের চাকরি বিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ মনোনিত আইইবি রাজশাহী কেন্দ্রের সদস্য। তার পরামর্শ মোতাবেক ইডি গত ১৭ বছর থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজশাহীতে বদলি করে না এনে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদেরই একের পর এক নানা সুবিধা দিতে থাকেন।

.

নিজের বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল ইসলাম বিএমডিএর নাজিরুল ইসলাম নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে বদলির আদেশ জারি করেন। অথচ নাজিরুল ইসলাম বিগত সরকারের আমলে অনুমোদিত ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) হিসেবে কাজ করছেন। নাজিরুল ইসলাম গত সরকারের আমলে মোট তিনটি প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বিভিন্ন সময় সামনে এসেছে।

.

বিএমডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান ইডি শফিকুল ইসলামের বন্ধু। যিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের, তিনি দিনে যে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অফিস করেন তার বেশিরভাগ সময়ই থাকতেন ইডির কক্ষে। ইডিকে কব্জা করে তিনিই চালাচ্ছিলেন বিএমডিএ। গত ৯ ডিসেম্বর ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণের মাধ্যমে সেচ এলাকা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ৯৫টি লটের বিপরীতে দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। এই টেন্ডারের অন্তত ৩০টি লটের গোপন দরপত্র পিডি শহীদুর রহমান তৎকালীন ইডি শফিকুলের নির্দেশে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানকে জানিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে পিডি শহীদুর রহমান শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান ড. এম আছাদুজ্জামান ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে বিষয়টি ইডিকে অবহিত করেন। কিন্তু ইডি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বিষয়টি ধাঁমাচাঁপা দিতে দ্রুত টেন্ডার বাতিলের ব্যবস্থা করেন।

.

জানা গেছে, বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল গত ১৩ মার্চ দুটি আদেশে ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি আরও দুই আদেশে ২৭ জনকে বদলি করা হয়।আর যেসব কর্মচারী জুলাই আন্দোলন দমনে সরাসরি লাঠি হাতে মাঠে নামেন, তাদের বহাল রাখা হয়। ইডির বদলির আদেশের পর মাহফুজুর রহমান কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের ডেকে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনপত্র পাঠানোর নির্দেশনা দেন। এতে শফিকুল ইসলামকে বিএমডিএতেই রাখার দাবি জানাতে বলা হয়।

.

সূত্র আরও জানায়, বিএমডিএ’র আওয়ামীপন্থী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সাত্তার এবং সম্পাদক জীবন ৪ আগস্ট আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে লাঠি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। কিন্তু ইডি সাত্তারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। শুধু চেয়ারম্যানের অনুরোধে জীবনকে বদলি করেন। আর আবদুস সাত্তার শেষ পর্যন্ত ইডির জিপচালক ছিলেন। এসব নিয়ে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কথা বলতে গেলে ইডি দুর্ব্যবহার করতেন বলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ। তাদের দাবি, ইডি বলতেন যে এখনও বিএনপি বা অন্য কোনো দল ক্ষমতায় আসেনি। এসব নিয়ে ক্ষোভ ছিল সবার।

.

এসব বিষয়ে কথা বলতে গত বুধবার বিএমডিএর সদ্য সাবেক ইডি শফিকুল ইসলামকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিএমডিএতে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা ঠিক। তবে এটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টা এখন মন্ত্রণালয় দেখছে।


প্রিন্ট