পদ্মা নদী ঘেষা ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার বিভিন্ন খাল,বিল ও কোল সহ নদ-নদীতে কারেন্ট জালের পাশাপাশি চায়না দুয়ারী নামের একপ্রকার ফাঁদ ব্যাবহার করে মৎস্য সম্পদ ধ্বংশ করে চলছে এক শ্রেনীর অসাধু মৎস্য শিকারীরা।জানা যায় এই চায়না দুয়ারী দৈর্ঘে প্রায় ৮০/৯০ফিট লম্বা হয়। এই দুয়ারীর দুই দিকে মুখ থাকার পাশাপাশি এক অভিনব পদ্ধতিতে প্রস্তুত করায় উজান ও ভাটি সব দিক থেকে মাছ ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারেনা।ঘন ফাঁসের এই দুয়ারীতে পোনা মাছ থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের মাছ আটকা পড়ায় ধ্বংশ হচ্ছে মৎস্য সম্পদ।
জনশ্রুতি আছে কয়েকবছর আগে চীন দেশের শ্রমিকেরা বাংলাদেশে কোন এক ব্রীজের কাজ করতে এসে ‘সাপ’ ধরার জন্য নদীতে এই ফাঁদ ব্যাবহার করে। কিন্তু সাপ ধরার জন্য এই ফাঁদ নদীতে রাখা হলে সাপের তুলনায় বেশি পরিমানে মাছ ধরা পরে। সেই থেকে আমাদের দেশের মানুষ এই ফাঁদকে চায়না দুয়ারী নামকরন করে এবং বিভিন্ন নদ-নদীতে এই দুয়ারীর ব্যাবহারে ধ্বংশ করছে মৎস্য সম্পদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্য শিকারীর সাথে কথা বলে জানা যায় প্রথম দিকে এই দুয়ারী চীন হতে আমদানী করা হতো দামও ছিল চড়া একেকটি দুয়ারী কিনতে প্রায় ৬/৭ হাজার টাকা খরচ পরত। বর্তমানে একই আদলে আমাদের দেশের বিভিন্ন কারখানায় তৈরী হচ্ছে এই ফাঁদ। একেকটি দুয়ারীর মুল্য আগের তুলনায় অর্ধেক হওয়ায় নানা শ্রেনী পেশার মানুষ এই ফাঁদ ব্যাবহার করে শিকার করছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ।
বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায় সারা বছরই বিভিন্ন স্থানে এই ফাঁদ দিয়ে মাছ শিকার করলেও বর্ষা মৌসুমে যেন অসাধু শিকারীরা মাছ ধরার মহোৎসবে নামে।জোয়ারের পানির সাথে ডিমওয়ালা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খাল,বিলসহ বিভিন্ন স্থানে বংশ বিস্তারের জন্য আসার গতি পথ সহ বিভিন্ন স্থানে এই ফাঁদ দিয়ে শিকার করা হচ্ছে মাছ।
মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রশাসন কি পদক্ষেপ গ্রহন করবে জানতে চাইলে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউএনও চরভদ্রাসন (অ:দা:) মোঃ মাসুম রেজা মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান ‘ইতি মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ হতে চরভদ্রাসনে দুটি মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি আড়াআড়ি বাঁধ অপসারন ও চায়না দুয়ারী বিনষ্ট করা হয়েছে।এছাড়া মৎস্য সম্পদ রক্ষায় উপজেলা মৎস্য অফিসারের সাথে কথা বলে যেসব খাল বিলে কারেন্ট জাল ও চায়না ফাঁদ ব্যাবহার করা হচ্ছে সে সব বিষয়ে খোজ নিয়ে দ্রুত আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে’।
এই ফাঁদের বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন ‘লোহার চিকন তার ও ঘন সুতা দিয়ে তৈরী এমন ফাঁদে নদী,নালা,খাল -বিলের ডিমওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা পড়ায় আমাদের মৎস্য সম্পদ এখন হুমকির মুখে পড়ছে। সারাদেশে করোনায় লকডাউন থাকায় অভিযান পরিচালনায় কিছুটা সমস্যা থাকলেও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের দিক নির্দেশনায় দ্রুত এই চায়না দুয়ারী বিনষ্টে আমরা অভিযানে নামবো।
প্রিন্ট