রাশেদ শরীফঃ
মাগুরার মহম্মদপুরে চলছে রমরমা বালু ব্যবসা। শুধু চলছেই না দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে ব্যবসার পরিধি। মহম্মদপুর উপজেলায় বালু ডাম্পিং বা ড্রেজিং, এর কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি বলছে জেলা প্রশাসন সূত্র। সেক্ষেত্রে মহম্মদপুরের সব ধরনের বালু ব্যবসা, ডাম্পিং বা ড্রেজিং মাটি বালি ব্যবস্থাপনা আইনে অবৈধ বলে বিবেচিত হবে বলেও জানাচ্ছেন সূত্রটি। তারপরেও প্রশাসনের নাকের ডগায় হরহামেশাই চলছে অবৈধ বালু ব্যবসা।
মধুমতীর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ব্যবসার ক্ষেত্র। রীতিমতো অবৈধ বালু ব্যবসার স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং মধুমতি নদীর কল ঘেঁষে গড়ে ওঠা মহম্মদপুর উপজেলার ভূখণ্ড। অদৃশ্য কারণে অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায় না এখানে। তাছাড়া বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে হয়রানির শিকার হতে হয়, অভিযোগ স্থানীয়দের।
০৮ মার্চ ২০২৫ ইং তারিখ সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার ঝামা বরকতুল উলুম ফাজিল(ডিগ্রী) মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি ডাম্পিং ইয়ার্ডে মধুমতি নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বালু ডাম্পিং করা হচ্ছে। ডাম্পিং ইয়ার্ডটি মাদ্রাসার প্রধান ফটক থেকে মাত্র ৫ মিটার দূরে অবস্থিত। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এতটা নিকটবর্তী স্থানে বালু ডাম্পিং করে ব্যবসা পরিচালনা করা কতটুকু আইনসিদ্ধ ও পরিবেশ বান্ধব এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের।
এছাড়া হরেকৃষ্ণপুর বাজারের পূর্বপাশে একটি ডাম্পিং ইয়ার্ড এবং পুকুর ভরাটের উদ্দেশ্যে ডাম্পিং ইয়ার্ডের পাশ দিয়ে ড্রেজার মেশিনের পাইপ টনতে দেখা যায়। মহম্মদপুর উপজেলা পরিষদের আনুমানিক ৫০০ মিটার এবং মধুমতি ব্রিজের আনুমানিক ৩০০ মিটারের মধ্যে নদীর দুই পাড়ে ০২টি বালু ডাম্পিং স্টেশন এবং ০৩টি বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ড্রেজার মেশিন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পাইপলাইন টানানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোপালনগরে নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বালু এনে পুকুর ভরাট করতে দেখা গেছে। এছাড়া উপজেলার রয়পাশা, শ্মশান ঘাট, কাশীপুর, শিরগ্রাম সহ অন্তত ০৮-১০ টি স্থানে বালু ডাম্পিং করে বিক্রয় করার সত্যতা পাওয়া গেছে।
মাটি বালি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৬২ নং আইনের ১৬ ধারা মোতাবেক বালু স্তুপ করতে হলে ঠিকাদারকে তার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জেলা মাটি বালি কমিটির অনুমোদিত স্থানে স্তুুপ করতে হবে। কিন্তু মহম্মদপুরের বালু ব্যবসায়ীরা দেশের প্রচলিত এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অথরিটির কোনরকম অনুমতি ছাড়াই পৃথক স্থানে বালু ডাম্পিং, পাইপলাইন দিয়ে বালু ভরাট সহ তাদের অবৈধ বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে এক দিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার অন্যদিকে অপরিকল্পিত স্থানে স্তুপকৃত বালু ভারী যানবাহন দিয়ে পরিবহনের সময় নষ্ট হচ্ছে রাস্তা ঘাট। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ চান সচেতন এলাকাবাসী।
জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া বাল্কহেডে বালু পরিবহন এবং পাইপ লাইনের মাধ্যমে তা অপসারণ মাটি বালি ব্যবস্থাপনা আইনে অবৈধ বলে বিবেচিত হয় বলে জানান মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মোঃ মাহাবুবুল আলম।মহম্মদপুরে মধুমতি নদী থেকে ০৬-০৭ টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এবং ০৮-১০টি স্থানে অনুমতি ছাড়া বালু ডাম্পিং করে বিক্রয় করা হচ্ছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন মর্মে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিক সাংবাদদের উপস্থিতিতে সহকারী কমিশনার ভূমি মহম্মদপুর বাসুদেব কুমার মালো কে মোবাইল ফোনে অবৈধ বালু উত্তোলন ডাম্পিং এবং ব্যবসা বন্ধ করা সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
প্রিন্ট