আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরে চলতি মৌসুমে অনুকুল আবহাওয়া ও বাজারে ভাল দাম পাবার আশায় কৃষকেরা রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। ইতমধ্যে সরিষার কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। তবে ফলন কম ও দাম নিয়ে চাষিদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।
কারণ গত বছরের তুলনায় এ বছর সরিষা চাষে খরচ বেশি হয়েছে। শ্রমিক, সার, কীটনাশক ও সেচের খরচ আগের চেয়ে বাড়তি দিতে হয়েছে। কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) বাবুল জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে মাত্র ৬ মণ ফলন হয়েছে। কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, চকপ্রভুরাম গ্রামের জসিম উদ্দীনের এক বিঘা, আলমের চার বিঘা রহিদুলের এক বিঘা, খোকনের তিন বিঘা, সোবহানের দেড় বিঘা জমিতে সরিষা উত্তোলন করে মাড়ায় করেছেন।
বিষায় কারো ৫ মণ, কারো ৬ মণ, উর্ধ্বে ৭ মণ করে ফলন হয়েছে। সুমন নামের আরেক চাষি জানান, ২ বিঘা জমিতে সরিষা মাড়ায় করে ১২ মণ মতো ফলন পেয়েছি। আব্দুল ও আইয়ুব নামের চাষিরা জানান, দেড় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করে মাত্র ৫ মণ ফলন পেয়েছি। কম ফলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, সরিষায় কয়েকবার রোগ হয়েছিল। মূলত এ কারণে ফলন কম হয়েছে। গতবার ভালো ফলনও পেয়েছিলাম এবং দামও ভালো ছিল। কিন্তু এবারে লোকসান গুনতে হয়েছে। তমিজ বলেন, এক বিঘায় মাত্র ৪ মণ সরিষা হয়েছে, যা গত বারের থেকে অনেক কম।
এবার সরিষার যে অবস্থা তাতে আগামীতে অনেকেই সরিষা চাষ করবেন না। কারণ এক বিঘা জমি আলুর জন্য ভাড়া দিলে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পায়। আর সরিষা ভালো হলেও বিঘাতে উর্ধ্বে ৬ মণ হয়। বর্তমান বাজারে এক মণ সরিষা বিক্রি হচ্ছে ১৯শ’ থেকে ২৫শ’ টাকা। আগামীতে সরিষা চাষে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে চাষিরা। তালন্দ এলাকার চাষি মেহেদী জানান, দুই বিঘা জমিতে সরিষা মাড়াই করে ১০ মণ ফলন পেয়েছি।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, উপজেলায় প্রথমবারের মতো ১০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যা ইতোপূর্বে কখনো দিন চাষ হয়নি। গত বছর ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। উপজেলার পাড়া-মহল্লায় সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ, কৃষক মাঠ দিবসসহ নানাভাবে আগ্রহ তৈরি করার কারণেই এবারে রেকর্ড ১০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা ও চাষিদের মধ্যে সার্বক্ষণিক তদারকির কারণে ফলনও ভালো হয়েছে। হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৫ মেট্রিক টন ফলন ধরা হয়েছে। সেই হিসেবে ১০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ৩০০ টন সরিষার তেল উৎপাদন হবে।
প্রিন্ট