মোঃ ইমরান হোসাইন আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে আমতলী উপজেলার শাখারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়নি।
ওই দিন প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান বিদ্যালয় ছুটি ঘোষনা করেছেন। উপজেলা সকল বিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করলেও ব্যতিক্রম শুধু ওই বিদ্যালয়। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত টানানোর কথা থাকলেও পূর্ণভাবে টানানো হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রুত ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলায় ২২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১৫৩ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৭ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ২৯ টি ও ৭টি কলেজ রয়েছে। সরকারীভাবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাতৃভাষা দিবস পালন করলেও ব্যতিক্রম শুধুই শাখারিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম শাহ আলম গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় ছুটি ঘোষনা করেছেন। ফলে শুক্রবার কোন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেনি এবং মাতৃভাষা দিবস পালন করেনি। শুধুমাত্র সকালে বিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী আব্দুল কুদ্দুস জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন। এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক একেএম শাহ আলম আওয়ামীলীগ দোসর। তিনি তার বিদ্যালয়ে বসে আওয়ামীলীগ কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারী প্রধান শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের অতিথি করা হয়। কিন্তু বিএনপি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। পরে উপজেলা প্রশাসন ওই অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেন।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষসহ সকল শ্রেণী কক্ষ তালাবদ্ধ। কোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নেই। জাতীয় পতাকা টানানো কিন্তু তাও অর্ধনমিত নয়, পূর্ণভাবে।
বিদ্যালয় অভিভাবক গুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়নি। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, প্রধান শিক্ষক স্যারে বৃহস্পতিবার আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারী স্কুলে যেতে বারণ করেছে। তাই আমরা স্কুলে যাইনি। তারা আরো বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস পালন করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন না করলে আমাদের কি করার আছে? প্রধান শিক্ষকের খামখেয়ালীর কারণে মাতৃভাষা দিবস পালন হয়নি।
বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক একেএম শাহ আলম বলেন, আমার ভুল হয়েছে। আমি ক্ষমা চাই। তবে তাকে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অলি আহাদ বলেন, সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে থাকলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ তারেক হাসান বলেন, উপজেলা নিবার্হী অফিসার স্যারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারী পালন না করা অন্যায়। বিদ্যালয় মাতৃভাষা দিবস পালন না করলে ওই বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রিন্ট