মোঃ কামরুল হাসান, বিশেষ প্রতিনিধি
নানা আয়োজনে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুইদিন ব্যাপী মহম্মদপুরের ঐতিহ্যবাহী বড়রিয়া ঘোড়দৌড় ও পৌষ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। একশ’ বছরের অধিক সময় ধরে বাংলা পৌষ মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এ মেলা। কিন্তু এ বছর মেলাটিকে একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ মেলাকে ঘিরে এলাকাজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। নব সাজে সজ্জিত ছিল বড়রিয়াসহ আশে-পাশের গ্রামগুলো। অন্তত ৫০ গ্রামে চলে নানা আয়োজন। মেলার প্রধান আকর্ষণ ঘোড়দৌড় দেখার জন্য রাস্তায় রাস্তায় নামে মানুষের ঢল। প্রতি বছরের মত এ বছর ও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমূখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে এ মেলাটি উৎযাপিত হয়েছে। যেখানে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে।
উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের বড়রিয়া গ্রামে প্রায় চার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসে মেলার স্টল। চারু, কারু, কাঠ-বাস, বেত আসবাবপত্র. তৈজষপত্র, মিষ্টি মাছসহ রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে হাজার হাজার স্টল ও পুরো মেলা জুড়ে চলে ক্রেতা-বিক্রেতার মিলন মেলা। মাগুরাসহ আসপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক লাখ মানুষ সমাগত হয় এই মেলায়। মূল মেলা দুই দিন হলেও মেলার আগে ও পরে পক্ষকালব্যাপী চলে মেলার কেনা-বেচা।
এ মেলার মূল আকর্ষণ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ২১টি ঘোড়া আনা হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য থাকে নানা ব্যবস্থা। নাগরদোলা, পুতুল নাচ ও বিচারগান এ মেলার অন্যতম আকর্ষণ। মেলার আশপাশের গ্রামগুলোতে কয়েকদিন আগে থেকেই পরিনত হয়েছিল উৎসবের আমেজে। মেলাকে ঘিরে এসব গ্রামে জামাই আদর রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ঈদে না হলেও অন্তত মেলা উপলক্ষে জামাই-মেয়েকে দাওয়াত দেওয়া হয়। বাড়ি বাড়ি চলে পিঠাসহ রকমারি খাবারের ধুম।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেলা এলাকায় বিক্রেতারা নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। তিন-চার দিন আগে থেকেই তারা দোকান নিয়ে বসে আছেন। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কেনা-বেচাও ভালো হয়েছে বলে আশা জানান বিক্রেতারা।
ঢাকার বিক্রমপুর থেকে ৪ ট্রাক কাঠের ফার্নিচার এনেছেন আনিস মিয়া। তিনি জানান, তার পিতাও মেলায় পণ্য বিক্রি করতে আসতেন। গত পনের বছর ধরে তিনি এ মেলায় আসছেন। প্রতি মেলায় তিনি ফার্নিচার বিক্রি করে ভালো লাভ করেন। অন্য বছরের তুলনায় এবার তার বেচা-কেনা ভাল হয়েছে বলে তিনি জানান।
মিষ্টি বিক্রেতা সুমেন ঘোষ বলেন, প্রতি বছর তিনি মেলায় মিষ্টির স্টল দিয়ে থাকেন। এ মেলার বৈশিষ্ট যে, মেলায় যারা আসেন সবাই মিষ্টি কেনেন। তিনি ৫শ মণ মিষ্টি বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।
সন্ধ্যায় ঘৌড়দৌড় শেষে মেলা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খাঁন বাচ্চু এবং সাধারন সম্পাদক সাহাজান সর্দারসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে বিজয়িদের মধ্যে রাতে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
প্রিন্ট