ঢাকা , শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo গোপালগঞ্জে নিহতের সংখ্যা পাঁচঃ তিন মামলায় আসামি আড়াই হাজার Logo জুলাই-আগস্টে শহীদদের স্মরণে মহম্মদপুরে বিএনপির মৌন মিছিল Logo গোয়ালন্দ নাজির উদ্দিন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সাধারণ সভা Logo কাশিমপুরে বস্তাবন্দি ছিন্নভিন্ন মরদেহ মানব কঙ্কাল উদ্ধার Logo তানোরে নিষিদ্ধ চায়না রিং ও কারেন্ট জালে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় মাছ Logo ইবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ২ তদন্ত কমিটি গঠন Logo লালপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে বৃদ্ধার মৃত্যু Logo গোপালগঞ্জ দেশের মানচিত্রে না থাকাই ভালো -আমির হামজা Logo কুষ্টিয়ায় বাবার জমি লিখে নিয়েও থামছেন না ছেলে Logo কুষ্টিয়ায় ইবি শিক্ষার্থীর জানাজা সম্পন্ন, তদন্তের আশ্বাস প্রশাসনের
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

তানোরে জাল সনদে ১৫ বছর শিক্ষকতা

আলিফ হোসেন, তানোরঃ

রাজশাহীর তানোরে জাল সনদে প্রায় ১৫ বছর ধরে শিক্ষকতার অভিযোগ উঠেছে। আলোচিত ওই শিক্ষকের নাম মহসিন আলী। তিনি উপজেলার কামারগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী (শরীর চর্চা) শিক্ষক।

 

স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার পালের যোগসাজশে জাল সনদে মহসিন দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবত শিক্ষকতা করে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। কারণ ঘটনা জানার পরেও প্রধান শিক্ষক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন।

অভিভাবক ও সচেতন মহল প্রধান শিক্ষক সুব্রত ও সহকারী শিক্ষক মহসিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সরকারের আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দাবি করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কামারগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পান মহসীন আলী। বিগত ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নম্বর ১০৪২২১৭৮, নিবন্ধন নম্বর ২০০৮ রেজি নম্বর ১২২১১০৬৬৭ ও রোল নম্বর ৮০০০৬৩৮৪। কিন্তু শিক্ষক মহসীনের নিবন্ধনটি জাল বা অন্য একজন শিক্ষকের বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে মহসিন কামারগাঁ শ্রীখণ্ডা গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগমারা উপজেলায়। তিনি ২২ হাজার ৯২৩ টাকার বেতন পান। যোগদান থেকে তার চাকরির বয়স ১৫ বছর। বছরে ২ লাখ ৭৫ হাজার ০৭৬ টাকা বেতন ভাতা পেয়েছেন। সেই হিসেবে ১৫ বছরে প্রায় ৪১ লাখ ২৬ হাজার ১৪০ টাকা বেতন পেয়েছেন এই জালিয়াত শিক্ষক। অর্থাৎ তিনি প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে সরকারি কোষাগার থেকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা লোপাট করে এখানো বহাল রয়েছেন।

স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে মহসিন জেনে বুঝে জাল সনদে চাকরি নিয়ে প্রায় ১৫টি বছর আরাম আয়েশ করেছেন। তিনি বলেন, মহসিনের জাল সনদের ঘটনায় গত বছরের শুরুতে মিনিস্ট্রি অডিট আসে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তিন লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে অডিট কমিটিকে ম্যানেজ করেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
অভিভাবকগণ বলেন, শুধু মহসিন নয়, প্রধান শিক্ষক ও ওই সময়ের কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে জালিয়াতি মামলা করা উচিৎ। যাতে আগামিতে এমন অপকর্ম করার দুঃসাহস কেউ না পায়।

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষক মহসীন আলী অকপটে ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, গত ফেব্রুয়ারী কিংবা মার্চ মাসে মিনিস্ট্রি থেকে তদন্ত টিম এসেছিল। ওই টিম যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে গেছে। তারা আমার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, আমি সেটা মেনে নিবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার পাল বলেন, এটা কর্তৃপক্ষের বিষয়, তারা দেখবেন। তবে অডিট কমিটিকে ঘুষ দেবার অভিযোগ সঠিক নয়। আপনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কেনো জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা আমার বিষয় না, তদন্ত টিম দেখবে। আমাকে এসব নিয়ে কোনকিছু বলবেন না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনিও জানান, তদন্ত টিম দেখবে। তারপরও অভিযোগ পেলে দেখা যাবে বলে এড়িয়ে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি স্কুলের নাম ও শিক্ষকের নাম বলতে বলেন। তাকে স্কুল ও শিক্ষকের নাম বলা হয়।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

গোপালগঞ্জে নিহতের সংখ্যা পাঁচঃ তিন মামলায় আসামি আড়াই হাজার

error: Content is protected !!

তানোরে জাল সনদে ১৫ বছর শিক্ষকতা

আপডেট টাইম : ০৫:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

আলিফ হোসেন, তানোরঃ

রাজশাহীর তানোরে জাল সনদে প্রায় ১৫ বছর ধরে শিক্ষকতার অভিযোগ উঠেছে। আলোচিত ওই শিক্ষকের নাম মহসিন আলী। তিনি উপজেলার কামারগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী (শরীর চর্চা) শিক্ষক।

 

স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার পালের যোগসাজশে জাল সনদে মহসিন দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবত শিক্ষকতা করে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। কারণ ঘটনা জানার পরেও প্রধান শিক্ষক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উল্টো ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন।

অভিভাবক ও সচেতন মহল প্রধান শিক্ষক সুব্রত ও সহকারী শিক্ষক মহসিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সরকারের আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দাবি করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কামারগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীর চর্চা শিক্ষক হিসেবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পান মহসীন আলী। বিগত ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নম্বর ১০৪২২১৭৮, নিবন্ধন নম্বর ২০০৮ রেজি নম্বর ১২২১১০৬৬৭ ও রোল নম্বর ৮০০০৬৩৮৪। কিন্তু শিক্ষক মহসীনের নিবন্ধনটি জাল বা অন্য একজন শিক্ষকের বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে মহসিন কামারগাঁ শ্রীখণ্ডা গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি বাগমারা উপজেলায়। তিনি ২২ হাজার ৯২৩ টাকার বেতন পান। যোগদান থেকে তার চাকরির বয়স ১৫ বছর। বছরে ২ লাখ ৭৫ হাজার ০৭৬ টাকা বেতন ভাতা পেয়েছেন। সেই হিসেবে ১৫ বছরে প্রায় ৪১ লাখ ২৬ হাজার ১৪০ টাকা বেতন পেয়েছেন এই জালিয়াত শিক্ষক। অর্থাৎ তিনি প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে সরকারি কোষাগার থেকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা লোপাট করে এখানো বহাল রয়েছেন।

স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে মহসিন জেনে বুঝে জাল সনদে চাকরি নিয়ে প্রায় ১৫টি বছর আরাম আয়েশ করেছেন। তিনি বলেন, মহসিনের জাল সনদের ঘটনায় গত বছরের শুরুতে মিনিস্ট্রি অডিট আসে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তিন লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে অডিট কমিটিকে ম্যানেজ করেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
অভিভাবকগণ বলেন, শুধু মহসিন নয়, প্রধান শিক্ষক ও ওই সময়ের কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে জালিয়াতি মামলা করা উচিৎ। যাতে আগামিতে এমন অপকর্ম করার দুঃসাহস কেউ না পায়।

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষক মহসীন আলী অকপটে ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, গত ফেব্রুয়ারী কিংবা মার্চ মাসে মিনিস্ট্রি থেকে তদন্ত টিম এসেছিল। ওই টিম যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে গেছে। তারা আমার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, আমি সেটা মেনে নিবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার পাল বলেন, এটা কর্তৃপক্ষের বিষয়, তারা দেখবেন। তবে অডিট কমিটিকে ঘুষ দেবার অভিযোগ সঠিক নয়। আপনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কেনো জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা আমার বিষয় না, তদন্ত টিম দেখবে। আমাকে এসব নিয়ে কোনকিছু বলবেন না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনিও জানান, তদন্ত টিম দেখবে। তারপরও অভিযোগ পেলে দেখা যাবে বলে এড়িয়ে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি স্কুলের নাম ও শিক্ষকের নাম বলতে বলেন। তাকে স্কুল ও শিক্ষকের নাম বলা হয়।


প্রিন্ট