ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

চাটমোহরের তরুণ দুই ভাই হয়ে উঠছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা

ধৈর্য্য, পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা আর ইচ্ছা শক্তিই যে কোন কাজের সফলতার মূলমন্ত্র তা প্রমান করলেন পাবনা চাটমোহরের তরুণ দুই ভাই। শূণ্য থেকে তারা হয়ে উঠছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এ দুই ভাই চাটমোহর পৌরসদরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কবির হোসেন ও আশরাফুন নাহার দম্পতির সন্তান। ঢাকার একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করার সুবাদে কবির হোসেন ঢাকায় থাকেন। আশরাফুন নাহার স্থানীয় একটি প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষিকা।
এ দম্পতির বড় সন্তান ওয়াহিদিল সরকার অমিয় ঢাকা কমার্স কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনার কারণে বন্ধ থাকায় প্রায় এক বছরের বেশি সময় বাড়িতে কাটাচ্ছেন ওয়াহিদিল। ওয়াহিদিলের ছোট ভাই আহনাফ তাহমিদ অর্নব স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুল বন্ধ থাকায় অর্নব ও বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছিল। এমন সময় অনলাইনে খাবার বিক্রির ধারণা মাথায় আসে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র অর্নবের। এখন থেকে মাস দুয়েক পূর্বে “অর্নব ফুড ইম্পোরিয়াম” নামের একটি ফেসবুক পেজ খোলে সে। অর্নবের সাথে যোগ দেয় বড় ভাই ওয়াহিদিল সরকার অমিয়। এর পর ধীরে ধীরে প্রচার প্রসার ঘটতে থাকে তাদের এ ক্ষুদ্র উদ্যোগ।
ওয়াহিদিল সরকার অমিয় জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশের স্কুল কলেজ বন্ধ। ছোট ভাই ফেসবুক পেজ খোলার পর ধীরে ধীরে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। মায়ের মাধ্যমে আমাদের এ প্রচেষ্টা ব্যবসায় রূপ নেয়। আমাদের উদ্যোগের কথা মা তার সহকর্মীদের জানালে তারাও আমাদের নিকট থেকে খাবার কিনতে আগ্রহী হয়। গত ৯ মে সর্ব প্রথম  একটা ফ্রাইড রাইসের অর্ডার পাই আমরা। এখন অনেকেই আমাদের তৈরী খাবার কিনছেন।
আমরা এগ ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই ও ভেজিটেবল প্যাকেজ, চিকেন চিজ বার্গার, ইটালিয়ান স্পেশাল পিজ্জা, চিকেন বিরিয়ানী, দুইটি ফালুদার একত্র প্যাকেজ, ভ্যানিলা মিল্কশেক, চকলেট মিল্কশেক, ভুনা ডিম খিচুরীসহ মোট ২৮ আইটেমের খাদ্য সামগ্রী বাড়িতে তৈরী করে ভোক্তাদের বাড়িতে সরবরাহ করছি। প্রথম অবস্থায় তেমন কোন পুজিই বিনিয়োগ করতে হয় নি আমাদের। বাড়ির উপকরণ দিয়ে প্রথম যে ফ্রাইড রাইস সরবরাহ করি সেটিই আমাদের মূল পুজি। প্রথম  মাসেই চার হাজার টাকা লাভ করি। ধীরে ধীরে খাবারের অর্ডার বাড়ছে। বাড়ছে আয়ও। পড়া লেখার পাশাপাশি আমরা এটা চালিয়ে যাচ্ছি। অর্নব খাবার তৈরী করে আমি সরবরাহ করি। এটি এখন আমাদের বাড়তি আয়ের উৎস হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র অর্নব জানান, ছোট বেলা থেকে মা ফুপু খালার রান্না করা দেখতাম ও তাদের রান্নার কাজে সহযোগিতা করতাম। এছাড়া ইউটিউব থেকে বিভিন্ন খাবার তৈরী শিখেছি। এখন আমি  বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরী করতে পারি। আশা করছি আমরা এ কাজটা ধরে রাখবো।
৯৭ টি অর্ডার পেতে যখন তাদের এক মাসের বেশি সময় লেগেছিল তখনও তারা হাল ছাড়ে নি। বর্তমান সময়ে তারা প্রচুর পরিমানে অর্ডার পাচ্ছেন। এখন অমিয়, অর্নব ও তাদের মা  কাজ ভাগ করে নিয়েছেন। ওয়াহিদিল আরো জানান, কোন কাজই ছোট নয়। আমি খাবার হোম ডেলিভারীর পাশাপাশি বার্গার তৈরী করি, মা রাইস আইটেম করে আর অর্নব পিজ্জাসহ অন্যান্য আইটেম তৈরী  করে।
করোনার কারণে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এমন সময় এভাবেই ১৩ বছরের এক আগ্রহী তরুণের উদ্যোগে  দাড়িয়ে যাচ্ছে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ কাজে তাদের মা উৎসাহ যোগানোর পাশাপাশি সরাসরি সহায়তাও করছেন।
অমিয় ও অর্নবের মা আশরাফুন নাহার জানান, এই করোনার আমাদের সন্তানেরা ঘরে বসে সময় নষ্ট না করে মাসুষের মাঝে খাবারের মান ভালো রেখে সেবা পৌছে দিচ্ছে  এতে আমি খুব খুশি। আমি আমার অবসর সময়ে তাদেরকে ভালো খাবারের মান নিশ্চিত করতে সাহায্য করি।আপনার সবাই দোয়া করবেন ওরা যেন আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

চাটমোহরের তরুণ দুই ভাই হয়ে উঠছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা

আপডেট টাইম : ০৭:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই ২০২১
ধৈর্য্য, পরিশ্রম, সময়ানুবর্তিতা আর ইচ্ছা শক্তিই যে কোন কাজের সফলতার মূলমন্ত্র তা প্রমান করলেন পাবনা চাটমোহরের তরুণ দুই ভাই। শূণ্য থেকে তারা হয়ে উঠছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এ দুই ভাই চাটমোহর পৌরসদরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কবির হোসেন ও আশরাফুন নাহার দম্পতির সন্তান। ঢাকার একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকুরী করার সুবাদে কবির হোসেন ঢাকায় থাকেন। আশরাফুন নাহার স্থানীয় একটি প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষিকা।
এ দম্পতির বড় সন্তান ওয়াহিদিল সরকার অমিয় ঢাকা কমার্স কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনার কারণে বন্ধ থাকায় প্রায় এক বছরের বেশি সময় বাড়িতে কাটাচ্ছেন ওয়াহিদিল। ওয়াহিদিলের ছোট ভাই আহনাফ তাহমিদ অর্নব স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুল বন্ধ থাকায় অর্নব ও বাড়িতে অলস সময় কাটাচ্ছিল। এমন সময় অনলাইনে খাবার বিক্রির ধারণা মাথায় আসে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র অর্নবের। এখন থেকে মাস দুয়েক পূর্বে “অর্নব ফুড ইম্পোরিয়াম” নামের একটি ফেসবুক পেজ খোলে সে। অর্নবের সাথে যোগ দেয় বড় ভাই ওয়াহিদিল সরকার অমিয়। এর পর ধীরে ধীরে প্রচার প্রসার ঘটতে থাকে তাদের এ ক্ষুদ্র উদ্যোগ।
ওয়াহিদিল সরকার অমিয় জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশের স্কুল কলেজ বন্ধ। ছোট ভাই ফেসবুক পেজ খোলার পর ধীরে ধীরে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। মায়ের মাধ্যমে আমাদের এ প্রচেষ্টা ব্যবসায় রূপ নেয়। আমাদের উদ্যোগের কথা মা তার সহকর্মীদের জানালে তারাও আমাদের নিকট থেকে খাবার কিনতে আগ্রহী হয়। গত ৯ মে সর্ব প্রথম  একটা ফ্রাইড রাইসের অর্ডার পাই আমরা। এখন অনেকেই আমাদের তৈরী খাবার কিনছেন।
আমরা এগ ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই ও ভেজিটেবল প্যাকেজ, চিকেন চিজ বার্গার, ইটালিয়ান স্পেশাল পিজ্জা, চিকেন বিরিয়ানী, দুইটি ফালুদার একত্র প্যাকেজ, ভ্যানিলা মিল্কশেক, চকলেট মিল্কশেক, ভুনা ডিম খিচুরীসহ মোট ২৮ আইটেমের খাদ্য সামগ্রী বাড়িতে তৈরী করে ভোক্তাদের বাড়িতে সরবরাহ করছি। প্রথম অবস্থায় তেমন কোন পুজিই বিনিয়োগ করতে হয় নি আমাদের। বাড়ির উপকরণ দিয়ে প্রথম যে ফ্রাইড রাইস সরবরাহ করি সেটিই আমাদের মূল পুজি। প্রথম  মাসেই চার হাজার টাকা লাভ করি। ধীরে ধীরে খাবারের অর্ডার বাড়ছে। বাড়ছে আয়ও। পড়া লেখার পাশাপাশি আমরা এটা চালিয়ে যাচ্ছি। অর্নব খাবার তৈরী করে আমি সরবরাহ করি। এটি এখন আমাদের বাড়তি আয়ের উৎস হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র অর্নব জানান, ছোট বেলা থেকে মা ফুপু খালার রান্না করা দেখতাম ও তাদের রান্নার কাজে সহযোগিতা করতাম। এছাড়া ইউটিউব থেকে বিভিন্ন খাবার তৈরী শিখেছি। এখন আমি  বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরী করতে পারি। আশা করছি আমরা এ কাজটা ধরে রাখবো।
৯৭ টি অর্ডার পেতে যখন তাদের এক মাসের বেশি সময় লেগেছিল তখনও তারা হাল ছাড়ে নি। বর্তমান সময়ে তারা প্রচুর পরিমানে অর্ডার পাচ্ছেন। এখন অমিয়, অর্নব ও তাদের মা  কাজ ভাগ করে নিয়েছেন। ওয়াহিদিল আরো জানান, কোন কাজই ছোট নয়। আমি খাবার হোম ডেলিভারীর পাশাপাশি বার্গার তৈরী করি, মা রাইস আইটেম করে আর অর্নব পিজ্জাসহ অন্যান্য আইটেম তৈরী  করে।
করোনার কারণে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এমন সময় এভাবেই ১৩ বছরের এক আগ্রহী তরুণের উদ্যোগে  দাড়িয়ে যাচ্ছে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ কাজে তাদের মা উৎসাহ যোগানোর পাশাপাশি সরাসরি সহায়তাও করছেন।
অমিয় ও অর্নবের মা আশরাফুন নাহার জানান, এই করোনার আমাদের সন্তানেরা ঘরে বসে সময় নষ্ট না করে মাসুষের মাঝে খাবারের মান ভালো রেখে সেবা পৌছে দিচ্ছে  এতে আমি খুব খুশি। আমি আমার অবসর সময়ে তাদেরকে ভালো খাবারের মান নিশ্চিত করতে সাহায্য করি।আপনার সবাই দোয়া করবেন ওরা যেন আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।