শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য তুষার, পাবনা জেলা প্রতিনিধি
স্কুলের ২৫ জন শিক্ষার্থীর সবাই কৃষক। তাদের রয়েছে খাতা কলম ও নির্দিষ্ট সিলেবাস। মৌসুমব্যাপী ১০ টি সেশনে (ক্লাসে) শেখানো হয় ফসলের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। মাঠে গিয়ে হাতে কলমে রোগের লক্ষণ সনাক্ত ও প্রতিকার ব্যবস্থাপনা। শেখানো হচ্ছে কৃষক কৃষাণীদের। ক্ষতিকর পোকা চেনা ও ক্ষতির লক্ষণ দেখিয়ে তার প্রতিকার ব্যবস্থাপনা নির্ধারণের পাশাপাশি উপকারী পোকা সনাক্ত ও তার বংশবৃদ্ধির বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ সম্মত উপায়ে চাষাবাদের আধুনিক এ কারিকুলামে পরিচালিত হচ্ছে কৃষক মাঠ স্কুল।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে চলতি রবি মৌসুমে ধান, গম,সরিষা, ডাল ফসল ও নিরাপদ সবজি-ফল উৎপাদনে এরুপ ১৩ টি স্কুলে কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ২৫ জনের কৃষক-কৃষাণী নিয়ে গঠিত এই কৃষক মাঠ স্কুলে আধুনিক জাত নির্বাচন, পরিবেশসম্মত উপায়ে চাষাবাদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে হাতে কলমে এই শিক্ষাদান ব্যবস্থা কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
উপজেলার বিভিন্ন কৃষক মাঠ স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, উপ- আনুষ্ঠানিক এই শিখন ব্যবস্থা কৃষকেরা আনন্দের সাথে গ্রহন করেছে। ম্যানিলা পেপারে লেখা দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী ওই দিনের দিবস নেতা একজন কৃষক স্কুলের সূচি বর্ণনা করছেন। সে অনুযায়ী উপজেলা কৃষি অফিসের ২ জন প্রশিক্ষক কৃষকদের ফলস চাষাবাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন। মাঠে গিয়ে গ্রুপ ভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষকদল রোগ পোকা সনাক্ত করছেন। মাঠেই সেগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন তারা।
কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর চাটমোহরের দেওয়া তথ্য মতে, পার্টনার প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় এ সকল কৃষক মাঠ স্কুলে ফসলের আধুনিক জাত নির্বাচন থেকে শুরু করে নিরাপদ উপায়ে অধিক উৎপাদনের যাবতীয় কারিগর শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এ কৃষক মাঠ স্কুলে।
সরেজমিনে ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কামালপুর ব্লকে কৃষক মাঠ স্কুলে গিয়ে কথা হয় মাঠ স্কুলের শিক্ষার্থী মাসুদ রানার সাথে। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, পূর্বে আমরা উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে অনেক প্রশিক্ষণ নিয়েছি, সে সকল প্রশিক্ষণে রোগ পোকার বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা হলেও আমরা মাঠে গিয়ে সেগুলো ঠিক মতো বুঝতে পারতাম না।ভিডিওতে রোগ পোকা দেখানো হলেও সেগুলো মাঠে গিয়ে চিনতে আমাদের কষ্ট হতো। পার্টনার প্রকল্পের মাঠ স্কুলের স্যারগন ক্ষেতে নিয়ে রোগ পোকা আক্রমণের লক্ষণ হাতে ধরে শিখিয়ে দিচ্ছে। এতে করে আমরা অনেক উপকার পাচ্ছি।
কৃষাণী নাজমা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, কৃষি অফিস আমাদের মাঠে এসে এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় আমাদের অংশগ্রহণ সহজ হয়েছে। এতে করে বীজ সংরক্ষণের পাশাপাশি আমাদের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কৃষক মাঠ স্কুলের প্রশিক্ষক সাইদুর রহমান সাঈদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, পার্টনার প্রকল্পের এ কৃষক মাঠ স্কুল কৃষকদের জন্য আর্শীবাদ হয়েছে। আমরা কৃষকের মাঠে এসে তাদেরকে বাস্তবসম্মত উপায়ে আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে শিক্ষা দিচ্ছি। ১০ টি সেশনে কৃষকদের জাত নির্বাচন থেকে শুরু করে সার, সেচ ও রোগ পোকার দমন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা দিচ্ছি। এতে করে উপজেলার কৃষকেরা স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদনে সক্ষম হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জসিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে জানান, আমরা প্রতি ব্লকে আধুনিক কৃষিতে আগ্রহী ২৫ জনের কৃষক-কৃষাণীর দল গঠন করে আধুনিক চাষাবাদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। প্রশিক্ষণ শেষে এ সকল কৃষক-কৃষাণীদের কে সনদ প্রদান করা হবে। এ সকল প্রশিক্ষিত কৃষক-কৃষাণীর মাধ্যমে গ্রামের অন্যান্য কৃষকেরাও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে শিখতে পারবেন বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।
প্রিন্ট