ঢাকা , শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

যশোরের বিতর্কিত সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানকে বিদায় সংর্বধনা

কাজী নূর, যশোর জেলা প্রতিনিধি

যশোরের বিতর্কিত সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানকে ফরিদপুর সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি করা হয়েছে। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দিয়ে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করে। সংর্বধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী এবং সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রেহেনেওয়াজ রনি।

বুধবার (১ জানুয়ারি) যশোরের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করবেন গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা।

 

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৪ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব শোভন রাংসা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ডা. মাহমুদুল হাসানকে বদলির আদেশ দেয়া হয়। আদেশ পেয়ে তিনি সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) ডেপুটি সিভিল সার্জনের কাছে তার বুঝিয়ে দেন।

 

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, ডা. মাহমুদুল হাসান গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছিলেন। গত ১০ জুন যশোরের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তার নিকটআত্নীয় কুড়িগ্রাম ৪ আসনের সাবেক সাংসদ বিপ্লব হাসান পলাশ, যশোর ৩ আসনের সাবেক সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদ ও যশোর ৬ আসনের সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল ইসলামের ডিও লেটার নিয়ে যশোরের সিভিল সার্জন হন তিনি। অভিযোগ ছিলো ডা. মাহমুদুল হাসান যশোরে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স হালনাগাদ করতে মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। এমনকি নতুন লাইসেন্সের জন্য টাকার অংক নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। বিগত দিনে সিলগালা করা অনেক অযোগ্য ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চালু করে দিয়েছেন। আউটসোর্সিং নিয়োগ দেওয়ার নামে নিয়োগ বাণিজ্যে করেছেন তিনি।

 

সূত্র জানায়, সারাদেশে যখন শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছিলো সেই সময়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনের বিরোধিতা করে যশোর জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গনে জেলার চিকিৎসকদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। ওই বিক্ষোভ সমাবেশে সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেওয়া একটি বক্তব্যর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এক মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ায় নানা ধরণের সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ভিডিওতে সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান আন্দোলনকারীদের ‘ফ্যাাসিবাদী ও জঙ্গি’ বলে আখ্যা দেন। বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা কোটা আন্দোলনের প্রতিটা দাবি মেনে নিয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনের নামে এক দফা দাবি উঠিয়েছে। সেটা কখনো আমরা মেনে নিতে পারি না। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই শক্তিকে আমরা ঘৃণা করি। এই শক্তিকে আমরা প্রতিহত করবো।’ এ সময় সব স্তরের চিকিৎসককে এক দফার দাবির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধও জানান তিনি।

 

সূত্রটি আরো জানায়, ছাত্র- জনতার গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে ভোল পাল্টে জামায়াত সাজেন ডা. মাহমুদুল হাসান। আধিপত্য বিস্তার করতে কর্মস্থলে কয়েকজন বহিরাগতকে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেন। সিভিল সার্জন অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা- কর্মচারীরা তার অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ট হয়ে ওঠেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের দালাল হিসেবে পরিচিতি অর্জন করা ডা. মাহমুদুল হাসান জামায়াত সেজেও নিজেকে শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। যশোর থেকে তাকে ফরিদপুরে সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি করা হলো। এতে খুশি হয়েছেন সিভিল সার্জন অফিসসহ যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগের সকল স্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারিরা।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

রাজবাড়ীতে ডিবি পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ মাদকব্যবসায়ী গ্রেফতার

error: Content is protected !!

যশোরের বিতর্কিত সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানকে বিদায় সংর্বধনা

আপডেট টাইম : ১০:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
কাজী নূর, যশোর জেলা প্রতিনিধি :

কাজী নূর, যশোর জেলা প্রতিনিধি

যশোরের বিতর্কিত সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসানকে ফরিদপুর সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি করা হয়েছে। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দিয়ে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করে। সংর্বধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী এবং সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রেহেনেওয়াজ রনি।

বুধবার (১ জানুয়ারি) যশোরের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করবেন গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা।

 

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৪ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব শোভন রাংসা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ডা. মাহমুদুল হাসানকে বদলির আদেশ দেয়া হয়। আদেশ পেয়ে তিনি সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) ডেপুটি সিভিল সার্জনের কাছে তার বুঝিয়ে দেন।

 

অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, ডা. মাহমুদুল হাসান গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছিলেন। গত ১০ জুন যশোরের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তার নিকটআত্নীয় কুড়িগ্রাম ৪ আসনের সাবেক সাংসদ বিপ্লব হাসান পলাশ, যশোর ৩ আসনের সাবেক সাংসদ কাজী নাবিল আহমেদ ও যশোর ৬ আসনের সাবেক সাংসদ খন্দকার আজিজুল ইসলামের ডিও লেটার নিয়ে যশোরের সিভিল সার্জন হন তিনি। অভিযোগ ছিলো ডা. মাহমুদুল হাসান যশোরে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স হালনাগাদ করতে মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। এমনকি নতুন লাইসেন্সের জন্য টাকার অংক নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। বিগত দিনে সিলগালা করা অনেক অযোগ্য ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চালু করে দিয়েছেন। আউটসোর্সিং নিয়োগ দেওয়ার নামে নিয়োগ বাণিজ্যে করেছেন তিনি।

 

সূত্র জানায়, সারাদেশে যখন শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন চলছিলো সেই সময়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলনের বিরোধিতা করে যশোর জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গনে জেলার চিকিৎসকদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। ওই বিক্ষোভ সমাবেশে সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেওয়া একটি বক্তব্যর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এক মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ায় নানা ধরণের সমালোচনার সৃষ্টি হয়। ভিডিওতে সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান আন্দোলনকারীদের ‘ফ্যাাসিবাদী ও জঙ্গি’ বলে আখ্যা দেন। বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা কোটা আন্দোলনের প্রতিটা দাবি মেনে নিয়েছেন। এসব শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনের নামে এক দফা দাবি উঠিয়েছে। সেটা কখনো আমরা মেনে নিতে পারি না। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই শক্তিকে আমরা ঘৃণা করি। এই শক্তিকে আমরা প্রতিহত করবো।’ এ সময় সব স্তরের চিকিৎসককে এক দফার দাবির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধও জানান তিনি।

 

সূত্রটি আরো জানায়, ছাত্র- জনতার গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলে ভোল পাল্টে জামায়াত সাজেন ডা. মাহমুদুল হাসান। আধিপত্য বিস্তার করতে কর্মস্থলে কয়েকজন বহিরাগতকে সময় কাটানোর সুযোগ করে দেন। সিভিল সার্জন অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা- কর্মচারীরা তার অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ট হয়ে ওঠেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের দালাল হিসেবে পরিচিতি অর্জন করা ডা. মাহমুদুল হাসান জামায়াত সেজেও নিজেকে শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। যশোর থেকে তাকে ফরিদপুরে সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি করা হলো। এতে খুশি হয়েছেন সিভিল সার্জন অফিসসহ যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগের সকল স্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারিরা।


প্রিন্ট