মোঃ হাসান আলী, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
আজ ১৪ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস। ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হয়ে সিরাজগঞ্জ মুক্ত করার জন্য শপথ গ্রহণ করেন। ১০ ডিসেম্বর সহস্রাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহর থেকে ৩ মাইল দূরে শৈলাবাড়ি ক্যাম্পসহ শহরের বিভিন্ন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে একযোগে আক্রমণ শুরু করেন। ৩ দিনের এই যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে মরণপণ লড়াই করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী টিকতে না পেরে ১৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে রেলপথে ঈশ্বরদীর দিকে পালিয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে হাজার হাজার জনতা এবং বিজয়ী মুক্তিবাহিনী সিরাজগঞ্জ শহর দখল করে নেয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে সিরাজগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর মনোবল দুর্বল হতে শুরু করে। তাদের সহযোগী তথাকথিত শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আল বদরদেরও শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। ১৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেন এবং স্থল ও নৌপথ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। একমাত্র রেলপথ তাদের দখলে ছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বীর প্রয়াত আমির হোসেন ভুলু, পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আব্দুল লতিফ মির্জা, আব্দুল আজিজ সরকার, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, মরহুম লুৎফর রহমান অরুন, কোম্পানি কমান্ডার টিএম শামীম পান্না প্রমুখ ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জের রেলওয়ে ঘাট, যমুনা নদীর তীর, কাজীপুর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় সমবেত হন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বেসরকারি সাব সেক্টর কমান্ড পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের চিফ-ইন-কমান্ড (সিএনসি) সোহরাব আলী সরকার জানান, ৯ ডিসেম্বর শহরের উত্তরে শৈলাবাড়ী পাকিস্তানি ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা হামলা করেন। তুমুল যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্রের সামনে টিকতে না পারলেও পিছু হটেননি। ওই যুদ্ধে সুলতান মাহমুদ শহিদ হন। ১০ ডিসেম্বর বিশ্রামের পর ১১ ও ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে একের পর এক হামলা চালান।
১৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে তিন দিক থেকে আক্রমণ করা হয় এবং রাত ৩টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী পালিয়ে যায়।
মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রবর্তী বাহিনীর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারদের পালিয়ে যাওয়ার খবর নিশ্চিত হয়ে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে সমবেত হন। সেখানে তারা দেশ গঠনের শপথ নেন। প্রয়াত আমীর হোসেন ভুলুকে মুক্তিবাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়ক এবং প্রয়াত ইসমাইল হোসেনকে প্রশাসনিক প্রধান ঘোষণা করা হয়।
সিরাজগঞ্জ শহর থেকে পাকিস্তানি হানাদাররা পালিয়ে যাওয়ার পর বেলকুচি, কামারখন্দ, রায়গঞ্জ, চৌহালী, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুরসহ অন্যান্য এলাকা শত্রুমুক্ত হয়।
আরও পড়ুনঃ রাজশাহীতে পুকুর ইজারায় পুকুর চুরি
আজ, ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও সিরাজগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা বিএনপি, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহিদ মিনার ও মুক্তির সোপানে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা এবং স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান।
প্রিন্ট