ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo খোকসায় বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি প্রকাশ করায় আনন্দ মিছিল Logo আগে বিচার হবে সংস্কার হবে এরপরে নির্বাচন Logo চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার মাসিক পরিদর্শন Logo মধুখালীতে শিষা কারখানয় বিস্ফোরণের দগ্ধ শ্রমিকের মৃত্যু Logo খোকসায় জাবাল-ই-নূর মাধ্যমিক বিদ্যালয় উদ্বোধন Logo নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিকে কুপিয়ে জখম Logo ফরিদপুরে রোটারি ক্লাবের উদ্যোগ শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠিত Logo ছাত্রদের অধিকার আদায়ে মেজর জিয়া ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেছিলেনঃ -শামা ওবায়েদ Logo নাটোরে ট্রাক-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ১ Logo চট্টগ্রামের পটিয়ায় পাহাড় কাটার দায়ে ৩ জনের কারাদণ্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

জীবন সংগ্রামে পরাজিত বালিয়াকান্দির যাত্রাশিল্পী তারাপদ

-যাত্রাপালার মঞ্চ কাঁপানো অভিনেতা তারাপদ কর্মকার।

গোলাম মোর্তবা শিকদার রিজু, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

সত্তর দশকের যাত্রাপালার মঞ্চ কাঁপানো অভিনেতা তারাপদ কর্মকার (৭২) এখন সংসার জীবনে পরাজিত সৈনিক। যাত্রার মঞ্চে অভিনয় করে হাজার হাজার দর্শকের মন জয় করলেও শেষ বয়সে এসে তিনি এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। তারাপদ শুধু অভিনয় শিল্পীই নয়। একাধারে তিনি যাত্রা দলের মালিকও ছিলেন।

 

যাত্রার স্বর্ণযুগে তারাপদের অগ্রগামী নাট্য সংস্থায় জনবল ছিল প্রায় ৭৫ জনের মতো। সবার পরিবারের খরচ চলত এই দলের আয় থেকে। সেই সময়ের যাত্রাদলের মালিক এখন বিনা চিকিৎসায় ধুকছেন। ছেলে মিটুল কর্মকারের ছোট একটি চায়ের দোকন থেকে যে আয় হয় সেই অর্থ দিয়েই চলছে ৬ সদস্যের যাত্রাশিল্পী পরিবারের সংসার। অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়েই চলছে খ্যাতিমান এই যাত্রাশিল্পীর জীবন।

 

তারাপদ কর্মকার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির রামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) কথা হয় তারাপদ ও তাঁর বড় ছেলে মিটুলের সাথে। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে সব সময় বিছানায় থাকতে হয় তাকে। তিন শতক জমির ওপর নির্মিত টিনের ছোট ঘরের একটি কক্ষের মধ্যেই কাটছে তার জীবন। স্পষ্ট করে বলতে পারেন না কথা। তারপরও চেষ্টা করেন অতীতের স্মৃতি স্মরণ করতে। অস্পষ্ট ভাষায় গল্প শোনাতে চান তার যৌবনের সোনালী দিনের কথা।

 

তারাপদ কর্মকারের বড় ছেলে মিটুল কর্মকার জানান, তারা সবাই যাত্রাপালার সাথে সম্পৃক্ত। অগ্রগামী নাট্য সংস্থা নামে তাদের সরকারি অনুমোদিত একটি যাত্রা দল ছিল। সেখানে ৭৫ জনের মতো শিল্পী ও কলা-কৌশলী ছিলেন। তার মা রেনুকা কর্মকার এবং বাবা দুজনই যাত্রাশিল্পী। তিনি নিজেও বাদ্যযন্ত্র শিল্পী। তার স্ত্রী লক্ষী কর্মকার প্রিন্সেস (নায়িকা) ছিলেন। এক সময় তাদের সুখের সংসার ছিল। কোন অভাব তাদের ছিলনা। কিন্তু সময়ের আবর্তনে যাত্রাশিল্পে ধস নামলে তাদের জীবনেও নেমে আসে অন্ধকার।

 

তিনি আরও জানান, ছোট বসত বাড়ীটি ছাড়া তাদের কোন সম্পত্তি নেই। চায়ের দোকান থেকে যে আয় হয় তাই দিয়েই চলতে হয়। তার বাবা ২০০৬ সালে স্টক করেন। সেই থেকে ঘরের মধ্যেই থাকতে হয় তাকে। তার যে ওষুধের প্রয়োজন সেটা তিনি মেটাতে পারছেন না। বিনা চিকিৎসায় তার বাবার এখন দিন কাটাতে হচ্ছে। বয়স্ক ভাতা ছাড়া আর কোন সরকারি সহযোগিতা পাননা তিনি। তবে বেশ কয়েক মাস আগে তিনি সমাজসেবায় আর্থিক সহযোগিতার জন্য আবেদন করেছেন। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়ে তিনি সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। যাত্রাশিল্পী হিসেবেও মেলেনি কোন সম্মাননা।

 

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কবি সুজয় কুমার পাল বলেন, বাঙালি জীবনের একটি গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যাত্রাপালা। অসম্প্রদায়িক চেতনা ও সাম্য মৈত্রীর আহবান উচ্চারিত হয় যাত্রাপালার শিল্পীদের কণ্ঠে। প্রশাসনিক জটিলতা, ভীনদেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন আর আকাশ সংস্কৃতির অবাধ বিচরণের ফলে আজ ধ্বংসের মুখে দেশীয় যাত্রা শিল্প। যাত্রাশিল্প ধ্বংসের সাথে সাথে যাত্রার সাথে সম্পৃক্ত সাংস্কৃতিকমনা মানুষগুলোও এখন নিদারুণ কষ্টে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারি দপ্তরগুলোর উচিত এদের দিকে বিশেষ নজর দেয়া।

 

জেলা কালচারাল কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম দাস জানান, সরকারি ভাবে যাত্রা বন্ধের কোন নির্দেশনা নেই। বরং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের যাত্রাশিল্প রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরই মধ্যে নভেম্বরে ঢাকাতে সপ্তাহব্যাপী যাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে একটি চিঠি প্রদান করেছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোন নিবন্ধিত দল যাত্রা করার করার জন্য অনুমতি চান তাহলে সেটা ১ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

খোকসায় বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি প্রকাশ করায় আনন্দ মিছিল

error: Content is protected !!

জীবন সংগ্রামে পরাজিত বালিয়াকান্দির যাত্রাশিল্পী তারাপদ

আপডেট টাইম : ০৬:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
গোলাম মোর্তবা শিকদার রিজু, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি :

গোলাম মোর্তবা শিকদার রিজু, বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

সত্তর দশকের যাত্রাপালার মঞ্চ কাঁপানো অভিনেতা তারাপদ কর্মকার (৭২) এখন সংসার জীবনে পরাজিত সৈনিক। যাত্রার মঞ্চে অভিনয় করে হাজার হাজার দর্শকের মন জয় করলেও শেষ বয়সে এসে তিনি এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। তারাপদ শুধু অভিনয় শিল্পীই নয়। একাধারে তিনি যাত্রা দলের মালিকও ছিলেন।

 

যাত্রার স্বর্ণযুগে তারাপদের অগ্রগামী নাট্য সংস্থায় জনবল ছিল প্রায় ৭৫ জনের মতো। সবার পরিবারের খরচ চলত এই দলের আয় থেকে। সেই সময়ের যাত্রাদলের মালিক এখন বিনা চিকিৎসায় ধুকছেন। ছেলে মিটুল কর্মকারের ছোট একটি চায়ের দোকন থেকে যে আয় হয় সেই অর্থ দিয়েই চলছে ৬ সদস্যের যাত্রাশিল্পী পরিবারের সংসার। অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়েই চলছে খ্যাতিমান এই যাত্রাশিল্পীর জীবন।

 

তারাপদ কর্মকার রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির রামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) কথা হয় তারাপদ ও তাঁর বড় ছেলে মিটুলের সাথে। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে সব সময় বিছানায় থাকতে হয় তাকে। তিন শতক জমির ওপর নির্মিত টিনের ছোট ঘরের একটি কক্ষের মধ্যেই কাটছে তার জীবন। স্পষ্ট করে বলতে পারেন না কথা। তারপরও চেষ্টা করেন অতীতের স্মৃতি স্মরণ করতে। অস্পষ্ট ভাষায় গল্প শোনাতে চান তার যৌবনের সোনালী দিনের কথা।

 

তারাপদ কর্মকারের বড় ছেলে মিটুল কর্মকার জানান, তারা সবাই যাত্রাপালার সাথে সম্পৃক্ত। অগ্রগামী নাট্য সংস্থা নামে তাদের সরকারি অনুমোদিত একটি যাত্রা দল ছিল। সেখানে ৭৫ জনের মতো শিল্পী ও কলা-কৌশলী ছিলেন। তার মা রেনুকা কর্মকার এবং বাবা দুজনই যাত্রাশিল্পী। তিনি নিজেও বাদ্যযন্ত্র শিল্পী। তার স্ত্রী লক্ষী কর্মকার প্রিন্সেস (নায়িকা) ছিলেন। এক সময় তাদের সুখের সংসার ছিল। কোন অভাব তাদের ছিলনা। কিন্তু সময়ের আবর্তনে যাত্রাশিল্পে ধস নামলে তাদের জীবনেও নেমে আসে অন্ধকার।

 

তিনি আরও জানান, ছোট বসত বাড়ীটি ছাড়া তাদের কোন সম্পত্তি নেই। চায়ের দোকান থেকে যে আয় হয় তাই দিয়েই চলতে হয়। তার বাবা ২০০৬ সালে স্টক করেন। সেই থেকে ঘরের মধ্যেই থাকতে হয় তাকে। তার যে ওষুধের প্রয়োজন সেটা তিনি মেটাতে পারছেন না। বিনা চিকিৎসায় তার বাবার এখন দিন কাটাতে হচ্ছে। বয়স্ক ভাতা ছাড়া আর কোন সরকারি সহযোগিতা পাননা তিনি। তবে বেশ কয়েক মাস আগে তিনি সমাজসেবায় আর্থিক সহযোগিতার জন্য আবেদন করেছেন। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়ে তিনি সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন। যাত্রাশিল্পী হিসেবেও মেলেনি কোন সম্মাননা।

 

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কবি সুজয় কুমার পাল বলেন, বাঙালি জীবনের একটি গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যাত্রাপালা। অসম্প্রদায়িক চেতনা ও সাম্য মৈত্রীর আহবান উচ্চারিত হয় যাত্রাপালার শিল্পীদের কণ্ঠে। প্রশাসনিক জটিলতা, ভীনদেশীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন আর আকাশ সংস্কৃতির অবাধ বিচরণের ফলে আজ ধ্বংসের মুখে দেশীয় যাত্রা শিল্প। যাত্রাশিল্প ধ্বংসের সাথে সাথে যাত্রার সাথে সম্পৃক্ত সাংস্কৃতিকমনা মানুষগুলোও এখন নিদারুণ কষ্টে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারি দপ্তরগুলোর উচিত এদের দিকে বিশেষ নজর দেয়া।

 

জেলা কালচারাল কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম দাস জানান, সরকারি ভাবে যাত্রা বন্ধের কোন নির্দেশনা নেই। বরং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের যাত্রাশিল্প রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরই মধ্যে নভেম্বরে ঢাকাতে সপ্তাহব্যাপী যাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে একটি চিঠি প্রদান করেছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোন নিবন্ধিত দল যাত্রা করার করার জন্য অনুমতি চান তাহলে সেটা ১ সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।


প্রিন্ট