পদ্মা নদীর ভাঙন প্রতিরোধের দাবি জানিয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন মিরপুর উপজেলার বাসিন্দারা। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বৃষ্টির মধ্যেই তারা এই কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলায় কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া, বহলবাড়িয়া ও সাহেবনগরসহ আশপাশের এলাকায় ইতোমধ্যেই কয়েক’ শ বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ভাঙন কবলিত বিভিন্ন এলাকায় জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হবে।
নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক। দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি যেকোনো মুহুর্তে বিলীন হতে পারে নদীগর্ভে।
পদ্মার ভয়াল ভাঙনের মুখে পড়েছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া, বহলবাড়িয়া ও সাহেবনগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙন থেকে বাড়িঘর ও ফসলি জমি রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বৃষ্টি মাথায় জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয় ঘেরাও করেন এসব এলাকার কয়েকশ বাসিন্দা।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের পক্ষে নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির নেতারা কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন।
বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, সাহেবনগর বেড়িবাঁধসহ ভাঙনকবলিত এলাকায় আজ থেকেই জিও ব্যাগ ও টিউব ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে শুরু হবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ। রাশিদুর রহমানের এ ঘোষণার পর ঘেরাও কর্মসূচি স্থগিত করে ফিরে যান ওই এলাকার বাসিন্দারা ।
এ ব্যাপারে সাহেবনগর নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অপু বলেন, পদ্মার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে বহলবাড়িয়া, বারুইপাড়া, তালবাড়িয়া, খাদিমপুর, সাহেবনগর, মির্জানগর ও ঘোড়ামারাসহ বেশকিছু এলাকা। বিগত তিন বছর যাবত নদীগর্ভে শত শত একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডের ছয়টি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের টাওয়ারসহ বসতবাড়ি, শতবর্ষী স্কুল-কলেজ ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। কুষ্টিয়া ঈশ্বরদী-মহাসড়ক থেকে নদী মাত্র ৫০ মিটার দূরে আছে। সড়কটি যেকোনো সময় ভাঙনের কবলে পড়বে।
বিক্ষোভকারীরা জানান, পদ্মার তীর ঘেঁষে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ নির্মাণের কারণে ভাঙন তীব্র হয়েছে। এটি নির্মাণের পর থেকেই তাদের বসতবাড়ি ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি ২-৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ওই এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। আমরা ব্যাপারটি অবজারভেশনের মধ্যে রেখেছি। শুক্রবারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার ও বেড়িবাঁধসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় সেখানে দ্রুত জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলার কাজ শুরু হচ্ছে। আপদকালীন পরিস্থিতি পার করে দ্রুত ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য নেওয়া প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০০ মিটার গ্রোয়েন (বাঁধ) নদীর মধ্যে আছে। সেখানে পানি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপর পাড়ে ভাঙছে। সেটা এলাকাবাসীও ধারণা করছে। যেহেতু নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে, সেহেতু ভাঙনটা তীব্র হচ্ছে।
মেহেদী হাসানের অভিযোগ, এসব এলাকার ভাঙন রোধে সরকারিভাবে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হলেও চলতি মৌসুমে কোনো জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করেনি পাউবো। দ্রুত এই প্রকল্পের টাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
পাউবো প্রকৌশলীর সঙ্গে যখন ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির নেতারা আলোচনা করছিলেন, তখন কাঁদতে কাঁদতে সেখানে হাজির হন শরিফা খাতুন। নিজের বসতবাড়ি রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে সবার কাছে হাতজোড়ে করে অনুরোধ করেন তিনি। তিনি জানান, কোনো ব্যবস্থা না নিলে আজকেই তার বাড়িটি নদীতে তলিয়ে যাবে।
এ কথা শুনে প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, আজ শরিফা খাতুনের বাড়ির সামনের নদীতে জিও ব্যাগ ফেলেই ভাঙন প্রতিরোধের কার্যক্রম শুরু হবে।