ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সবুজ গুমের মামলায় হানিফসহ ১২ জন আসামি

কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ গুম হওয়ার প্রায় র্দীঘ ৯ বছর পরে মামলা করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ ও তার চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতাসহ কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরো বেশ কয়েকজনকে।

 

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সবুজের ভাই আরিফুল হোসেন সজিব কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন।  কুষ্টিয়া মডেল থানাকে মামলাটি গ্রহণ করে আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

 

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান জানান, মামলার বিবাদিরা হলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহামন মোমিজ, বাংলাদেশ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সহভাপতি রবিউল ইসলাম, বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাহবুবউল আলম হানিফ হানিফের ভাই আতাউর রহমান আতা এবং আরেক ভাই আতিকুর রহমান আতিক, মোমিজের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান হাফিজ, জগতি মিনাপাড়ার বাসিন্দা হালিমুজ্জামান হালিম, শহরের কুঠিপাড়ার বাসিন্দা নিখোঁজ সবুজের প্রতিবেশী আবু বক্কর সিদ্দিক, শহরের পিয়ারাতলার বাসিন্দা রমজান হোসেন, খোকসা উপজেলার চক হরিপুরের বাসিন্দা রবিউল হোসেনসহ অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজন।

 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ১৫আগস্ট সবুজ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মজমপুর গেটস্থ বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালে শ্রদ্ধা জানাতে যান। ওই সময় কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র এবং উস্কানিমূলক মহড়ার কারণে উপস্থিত অন্যান্য ত্যাগী নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং মোমিজের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়লে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার ১৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সবুজ নামে অপর এক যুবক নিহত হন।

 

ওই সময় সবুজ নামে ওই আওয়ামী লীগের কর্মী খুনের ঘটনার পর উপস্থিত সকল নেতাকর্মী যে যারমত স্থান ত্যাগ করলে কুষ্টিয়া স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজও বাড়িতে চলে যান বিশ্রামের জন্য। ঘটনার দিন দুপুর ২টার দিকে মামলার ১নং আসামি জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার ছোট ভাই আতিকুর রহমান আতিক, শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান হাফিজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হালিমুজ্জামান হালিম, কুঠিপাড়া এলাকার আবু তাহের, পেয়ারাতলা এলাকার রমজান হোসেন এবং খোকসা উপজেলার রবিউল হোসেন সবুজের বাড়িতে যান এবং রাগান্বিত হয়ে সবুজকে বলে তোমাকে এখনই নেতার (হানিফের) বাড়িতে যেতে হবে।

 

এসময় সবুজ তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়াকে সাথে নিয়ে হানিফের বাড়িতে যান। এসময় হানিফ সবুজকে বলেন যদি বাঁচতে চাও তাহলে আমার কথামত চলতে হবে। আর র‌্যালিতে নিহত সবুজের পরিবার তোমার বিরুদ্ধে মামলা মামলা করবে। তুমি লাবু (১নং আসামি)’র সাথে গাজীপুরের ড্রীম স্কয়ার রিসোর্টে চলে যাও। আমি রিসোর্টের মালিককে বলে দিচ্ছি সেখানে তুমি নিরাপদে থাকতে পারবে। হানিফের কথামত অন্যান্য আসামিদের মদদে রিসোর্টে ওঠেন। সেখানে অবস্থানকালে অন্যান্য আসামীদের মদদ ও যোগসাজসে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সবুজকে ১০/১২জন সাদা পোষাকধারী রিসোর্ট হতে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

 

সন্ধায় শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া সাংবাদিকদের জানান আমার স্বামী অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিল। কুষ্টিয়া পৌরমেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে পৌরবাসির সাথে ভালো সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামসহ হানিফ আতা সদর খান কেউই বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। আর সেই কারনে আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে গুম করে রাখা হয়েছে। জিনিয়া দাবি করেন স্বামী ছাড়া সন্তানদের নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। হানিফসহ অন্যান্য সব আসামিদের গ্রেফতার করা হলে অবশ্যই আমার স্বামীর হদিস পাওয়া যাবে।

 

কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুল হক চৌধুরী জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আদালতের আদেশের নথি এখনও থানায় আসেনি। নথি পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

এ বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়া আদালত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ও কুষ্টিয়া সদর থানার আদালত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইস্কান্দার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সবুজ গুমের মামলায় হানিফসহ ১২ জন আসামি

আপডেট টাইম : ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ইসমাইল হোসেন বাবু, স্টাফ রিপোর্টার :

কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ গুম হওয়ার প্রায় র্দীঘ ৯ বছর পরে মামলা করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফ ও তার চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতাসহ কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরো বেশ কয়েকজনকে।

 

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সবুজের ভাই আরিফুল হোসেন সজিব কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন।  কুষ্টিয়া মডেল থানাকে মামলাটি গ্রহণ করে আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

 

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান জানান, মামলার বিবাদিরা হলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহামন মোমিজ, বাংলাদেশ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সহভাপতি রবিউল ইসলাম, বর্তমান শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাহবুবউল আলম হানিফ হানিফের ভাই আতাউর রহমান আতা এবং আরেক ভাই আতিকুর রহমান আতিক, মোমিজের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান হাফিজ, জগতি মিনাপাড়ার বাসিন্দা হালিমুজ্জামান হালিম, শহরের কুঠিপাড়ার বাসিন্দা নিখোঁজ সবুজের প্রতিবেশী আবু বক্কর সিদ্দিক, শহরের পিয়ারাতলার বাসিন্দা রমজান হোসেন, খোকসা উপজেলার চক হরিপুরের বাসিন্দা রবিউল হোসেনসহ অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজন।

 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ১৫আগস্ট সবুজ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মজমপুর গেটস্থ বঙ্গবন্ধুর ম্যূরালে শ্রদ্ধা জানাতে যান। ওই সময় কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র এবং উস্কানিমূলক মহড়ার কারণে উপস্থিত অন্যান্য ত্যাগী নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং মোমিজের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়লে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার ১৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সবুজ নামে অপর এক যুবক নিহত হন।

 

ওই সময় সবুজ নামে ওই আওয়ামী লীগের কর্মী খুনের ঘটনার পর উপস্থিত সকল নেতাকর্মী যে যারমত স্থান ত্যাগ করলে কুষ্টিয়া স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজও বাড়িতে চলে যান বিশ্রামের জন্য। ঘটনার দিন দুপুর ২টার দিকে মামলার ১নং আসামি জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার ছোট ভাই আতিকুর রহমান আতিক, শহর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের ছোট ভাই হাফিজুর রহমান হাফিজ, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হালিমুজ্জামান হালিম, কুঠিপাড়া এলাকার আবু তাহের, পেয়ারাতলা এলাকার রমজান হোসেন এবং খোকসা উপজেলার রবিউল হোসেন সবুজের বাড়িতে যান এবং রাগান্বিত হয়ে সবুজকে বলে তোমাকে এখনই নেতার (হানিফের) বাড়িতে যেতে হবে।

 

এসময় সবুজ তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়াকে সাথে নিয়ে হানিফের বাড়িতে যান। এসময় হানিফ সবুজকে বলেন যদি বাঁচতে চাও তাহলে আমার কথামত চলতে হবে। আর র‌্যালিতে নিহত সবুজের পরিবার তোমার বিরুদ্ধে মামলা মামলা করবে। তুমি লাবু (১নং আসামি)’র সাথে গাজীপুরের ড্রীম স্কয়ার রিসোর্টে চলে যাও। আমি রিসোর্টের মালিককে বলে দিচ্ছি সেখানে তুমি নিরাপদে থাকতে পারবে। হানিফের কথামত অন্যান্য আসামিদের মদদে রিসোর্টে ওঠেন। সেখানে অবস্থানকালে অন্যান্য আসামীদের মদদ ও যোগসাজসে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সবুজকে ১০/১২জন সাদা পোষাকধারী রিসোর্ট হতে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।

 

সন্ধায় শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া সাংবাদিকদের জানান আমার স্বামী অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিল। কুষ্টিয়া পৌরমেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে পৌরবাসির সাথে ভালো সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামসহ হানিফ আতা সদর খান কেউই বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। আর সেই কারনে আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে গুম করে রাখা হয়েছে। জিনিয়া দাবি করেন স্বামী ছাড়া সন্তানদের নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছি। হানিফসহ অন্যান্য সব আসামিদের গ্রেফতার করা হলে অবশ্যই আমার স্বামীর হদিস পাওয়া যাবে।

 

কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুল হক চৌধুরী জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আদালতের আদেশের নথি এখনও থানায় আসেনি। নথি পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

এ বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়া আদালত পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ও কুষ্টিয়া সদর থানার আদালত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইস্কান্দার হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।


প্রিন্ট