কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকার নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুই প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের অভিযোগ, ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে সিজার করার সময় একাধিক নাড়ি কাটা পড়ে রোগীদের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকেই ক্লিনিকের মালিক বদর উদ্দিনসহ কর্মরত সবাই লাপাত্তা রয়েছেন।
নোভা ক্লিনিকের ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া দুই প্রসূতির একজন হলেন, উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের যদুবয়রা গ্রামের রিপন শেখের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২৫)। তিনি শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অপরজন নন্দলালপুর ইউনিয়নের বেলঘোড়িয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে মর্জিনা খাতুন (২৭)। তিনি গত ১৮ আগস্ট রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগে প্রসূতির লাশ নিয়ে নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবরুদ্ধ করে রাখেন রোগীর স্বজন ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-জনতা।
ক্লিনিক চত্বরে উপচে-পড়া ভিড়। লাশ নিয়ে আহাজারি করেত স্বজনদের দেখা যায় । ২৩ আগষ্ট সকাল থেকে ক্লিনিকটি অবরুদ্ধ করে রাখেন স্বজনরা। পরে খবর পেয়ে ক্লিনিকে অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসন।
এ সময় অভিযোগের সত্যতা ও ক্লিনিকে নানান অসঙ্গতি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত। এ সময় কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. আকুল উদ্দিন ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বৃষ্টির মা চায়না খাতুন বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে মেয়েকে সনো করাতে নোভা ক্লিনিকে এনেছিলাম। তখন সেখানকার ডাক্তার বলল সিজার করতে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মেয়ের সিজার করা হয়। সিজার করে একটি কন্যা সন্তান পেয়ে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু রক্ত দেওয়ার কথা বলে বৃষ্টির সাথে আমাকে দেখা করতে দেয়নি। রাত ৯টা পর্যন্ত তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়। এরপর হঠাৎ রাত ৩টার দিকে তড়িঘড়ি করে ক্লিনিকের মালিক বদর উদ্দিন আমাদের একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহী নিয়ে যান। সেখানে সকাল ৮টার দিকে বৃষ্টি মারা যান। তাদের সঙ্গে ক্লিনিকের দু’জন নার্সও ছিল।
তিনি বলেন, আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে ডাক্তাররা। আমি সঠিক বিচার চাই। আর কারো মায়ের বুক যেন খালি করতে পারে ওরা।’
বৃষ্টির বাবা সাইফুল শেখ বলেন, ভুয়া ডাক্তার দিয়ে ক্লিনিকের মালিক আমার মেয়েকে সিজার করিয়েছে। সিজারের সময় একাধিক নাড়ি কেটে মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।
নোভা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বদর উদ্দিনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডা. আকুল উদ্দিন জানান, মাত্র চারদিনের ব্যবধানে দুইজন প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ক্লিনিকটি পরিদর্শন করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানানো যাবে। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত জানান, অল্প সময়ে দু’জনের মৃত্যুর অভিযোগ এবং নানান অসঙ্গতি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের থানায় মামলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রিন্ট