রাজশাহীর তানোরে সরকারি বরাদ্দের সাবমারসিবল পাম্প হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। সুত্র জানায়, উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানি নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে সাবমারসিবল পাম্প বরাদ্দ করা হয়। কিন্ত্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসব পাম্প নিয়ে রীতিমতো বাণিজ্যে করেছে। এবিষয়ে সরেজমিন তদন্তপুর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করেছেন সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, এডিবি প্রকল্প থেকে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে (ইউপি) ২৬টি করে সাবমারসিবল পাম্প বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি পাম্পের বিপরীতে বরাদ্দ প্রায় ৯৮ হাজার টাকা। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দ হলেও নীতিমালা লঙ্ঘন করে সাবেক এমপি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের অনুগত দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে এসব পাম্প ভাগবাটোয়ারা করে দিয়েছে। এতে বঞ্চিত হয়েছে প্রত্যন্ত এলাকার হাজার সাধারণ মানুষ।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দেয়া তালিকা অনুযায়ী এসব পাম্প বিতরণ করা হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ যাবত উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ধর্ণা দেয়া হলেও তালিকা বা কোন সুনিদ্রষ্ট তথ্য দেয়া হয়নি। এদিকে ইউপি প্রতি ২৬টি পাম্প বরাদ্দ করা হলে ৭টি ইউপিতে ১৮২টি সাবমার্সিবল পাম্পের বিপরীতে বরাদ্দ প্রায় এক কোটি ৮২ লাখ টাকা। উপজেলার তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সচিব ওয়াকিল জানান, একটি সাবমার্সিবল
পাম্পও তারা বরাদ্দ পায়নি। বরাদ্দের সকল পাম্প সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিতরণ করেছে। তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু জানান, ৫-৬টি সাবমার্সিবল পাম্প বরাদ্দ পেয়েছিলাম। তিনিও তার পছন্দমত নেতাদেরকে দিয়েছেন।
অন্যদিকে উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদারের স্বামী সরকার পতনের আগে জনস্বাস্থ্য দপ্তর থেকে মটর, পাইপ ও ট্র্যাংকি নিয়ে যাচ্ছিলেন। সোনিয়া সরদারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলা হলে তিনি জানান, এমপি তাকে একটি পাম্প মটর দিয়েছেন, তিনিও সেটা অন্যজনকে দিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু আমি না উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার , দপ্তর সম্পাদক মুনসেফ, কৃষকলীগ সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক রাম কমলসহ প্রায় নেতাদের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন।
এদিকে কামারগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কয়েকজন মেম্বার জানান, শুনেছি বরাদ্দ হয়েছে, কিন্তু চোখে দেখিনি। সবকিছুই বিনা ভোটের শপথ না পাওয়া চেয়ারম্যান মিন্টুর মাধ্যমে নেতাদেরকে দেয়া হয়েছে। যে সব নেতাদের বাড়িতে পাম্প মটর আছে তারা টাকার বিনিময়ে তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে দিয়েছেন। সরনজাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) সইবুর রহমান বলেন, একটি মটরও বরাদ্দ পায়নি। কিন্তু ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরনজাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান, সম্পাদক আতাউর রহমান ও কেরামত আলীর নামে পাম্প বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গত ৪ আগষ্ট উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছিলেন নেতাদের পাম্প মটর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের বলা হয়েছে তারা যেনো কোন দলীয় দরিদ্র ব্যক্তিদের দেয়া হয়। তবে সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব সাবমার্সিবল পাম্প বরাদ্দের বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। তবে অনিয়ম করে বরাদ্দ দেয়া হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#
প্রিন্ট