ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের অপসারণের পাশাপাশি রচিত হয়েছে এক বিপ্লবী জনইতিহাস। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢাকাসহ দেশব্যাপি নানা স্থাপনা, ভাস্কর্য, সংগ্রহশালা, জাদুঘর, স্মৃতিস্মারকসহ অনেক বাড়িতেও হামলা ও লুটপাট হয়েছে। আবারো করুণ প্রাণহানি ও রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে।
এসব হামলা, ধ্বংস ও লুটপাটের সাথে কোনোভাবেই বিপ্লবী ছাত্র-জনতা জড়িত নয়, বরং ছাত্র-জনতা জানবাজি রেখে দেশের সম্পদ ও জনগণের নিরাপত্তা আগলে নিয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এখনো জনমনে দুশ্চিন্তা কাটেনি, নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। আমরা আশা করি সামগ্রিক পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক, নিরাপদ ও স্বস্তিকর হবে। ছাত্র-জনতার এ অভূতপূর্ব রক্তক্ষয়ী ইতিহাসকে কেউ কোনোভাবে যেন সংঘর্ষ, লুটপাট, হামলা ও রক্তপাতের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ না করতে পারে এ বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। দীর্ঘদিনের জনরোষ, ক্ষোভ ও দ্রোহের বহিঃপ্রকাশ ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে। এখন আমাদের নিজ নিজ দায়দায়িত্ব বুঝে নিয়ে দেশ রূপান্তরের পালা। এই সময়ে আমরা কোনোভাবেই দেশের আর কোনো সম্পদ, ইতিহাস, শিল্পকর্ম, স্মারক ও প্রাণ হারাতে চাই না। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সময়ে সকলের কাছে দেশের সম্পদ ও বৈচিত্র্য সুরক্ষায় ‘দুনিয়াদারি আর্কাইভ’ এবং ‘বাংলাদেশ অন রেকর্ডের’ পক্ষে আমরা নিম্নোক্ত বিবৃতিদাতাগণ বিনীত প্রস্তাব রাখছি—
১. দেশের সকল এলাকার পাবলিক এবং ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা, জাদুঘর, আর্কাইভ, প্রত্নস্থল, বধ্যভূমি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান এবং সংস্কৃতিকেন্দ্র সমূহের সামগ্রিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা জোরদার করতে হবে।
২. সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানাস্থানে সহিংস হামলায় লুট হয়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্থ ও বিনষ্ট হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক নথি ও দলিলপত্র, শিল্পকর্ম, প্রত্নসামগ্রী, স্মারক এবং উপকরণ যা আমাদের জনইতিহাসের অংশ তা পুনরুদ্ধার করে পুনরায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. দেশের সকল পাবলিক স্থাপনা, সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাসনালয় সমূহের সামগ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। এক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে জন নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি তৎপরতা বাড়ানো দরকার।
৪. দেশের নানাস্থানে রক্ষিত ভাস্কর্য, প্রাচীন স্থাপত্য এবং শিল্পকলাসমূহের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের জানমাল ও বসতি সুরক্ষাসহ তাদের নিরাপত্তাবোধ বলিষ্ঠ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিপ্লবী ছাত্র-জনতার জানবাজি রাখা লড়াই যেমন আমাদের এক নয়াইতিহাসের ময়দানে হাজির করেছে, আমরা বিশ্বাস করি ঠিক একইভাবে এই দ্রোহী দায়িত্বশীল বিপ্লবী নেতৃত্বই দেশের সম্পদ, ইতিহাস ও বৈচিত্র্য সুরক্ষা ও নিরপত্তায় সর্বদা আমাদের অগ্রণী হয়ে পথ দেখাবে। পাড়ায় পাড়ায়, নিজ নিজ এলাকায়, গ্রাম থেকে শহরে, পাহাড় থেকে সমতলে সর্বত্র দেশজুড়ে সকল ঐতিহাসিক সম্পদ ও বৈচিত্র্য সুরক্ষায় আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ সর্বজনের আকাংখিত বাংলাদেশের রূপান্তরে ভূমিকা রাখবে।
বিবৃতিদাতারা
১. আমিরুল রাজিব, কিউরেটর, শিল্পী ও সংগঠক
২. নাসির আলী মামুন, আলোকচিত্রী
৩. নুরুল আলম আতিক, চলচ্চিত্রকার
৪. পাভেল পার্থ, লেখক ও গবেষক
৫. নাঈম উল হাসান, কিউরেটর, অর্থনীতিবিদ ও শিল্পী
৬. ড. স্বাধীন সেন, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও শিক্ষক
৭. ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, শিক্ষক ও নৃবিজ্ঞানী
৮. ড. মাসউদ ইমরান মান্নু, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও শিক্ষক
৯. ড. সৈয়দ নিজার আলম, শিক্ষক ও দার্শনিক
১০. শামসুজ্জোহা সাজেন, আর্কাইভিস্ট ও গবেষক
১১. হাসানুর রহমান রিয়াজ, রেস্টোরেশন আর্টিস্ট
১২. সাঈদ জুবেরী, কবি ও সাংবাদিক
১৩. মোহাইমিনুল বাশার, শিল্পকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট
১৪. জবা তালুকদার, সমাজকর্মী