ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে বিএনপি জামায়াতের রাজনীতি!

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম : ১০:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
  • ২১৯ বার পঠিত

অবশেষে সহজ অনুমেয় বিষয়টি সত্য বলে প্রামাণ হলো। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হলো বিএনপি ও তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্র সমাজকে ক্ষেপিয়ে তুলতে গুজব ও নানা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে তারা। ফেসবুকে তাদের সরব উপস্থিতি। বেশ কিছু সূত্রে খবর পাওয়া গেছে  অস্থিরতার সৃষ্টির পেছনে কাজ করছে বিএনপি-জামায়াত জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিদেশ থেকেও এই আন্দোলনকে মদদ জোগানো হচ্ছে। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা এখন ছাত্রদের উসকে দিয়ে চাইছে দেশকে ফের অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে। তাই মেধা ভিত্তিক নিয়োগের দাবি তুললেও তাদের আসল উদ্দেশ্য হলো ছাত্রদের ওপর ভর করে আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে রাজপথের আন্দোলনে বিএনপি তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি।

 

জামায়াতও অপেক্ষায় ছিল একটি চরম সুযোগের। এই দুই দৈরথের সেই সুযোগ এনে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের কোটা বিরোধী আন্দোলন। ২০১৮ সালে যখন এদেশে প্রথমবারের মত কোটা বিরোধী আন্দোলনের শুরু হয় তার নেতৃত্ব দিয়েছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কোটা তুলে দিলে এবং শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে কোটা থেকে সরে যায় সাধারণ ছাত্ররা। এর পরে হাইকোর্টের রায়ে কোটা ব্যবস্থা বহাল হলে পরে আবারও আন্দোলনে নামে সাধারণ ছাত্ররা। এবারও তাদের কাধে সওয়ার হলো।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্দোলনকারীদের একটা অংশ রাজাকারের পক্ষে কথা বলছে। এটা স্পষ্ট, এর পেছনে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত। বিএনপি জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির। তারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তারা। আর এ কারণেই সাধারণ ছাত্রদের দাবী দাওয়ার  অহিংস আন্দোলন আস্তে আস্তে সহিংসতায় রুপ নিতে শুরু করেছে। জনদূর্ভোগের পাশাপাশি হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। আজ মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার দেশব্যপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ছাত্রদল।

 

তবে বিএনপি নেতারা জানেন, তারা সামনে থাকলে কোটা বিরোধী আন্দোলনও ব্যর্থ হবে। তবু এই আন্দোলন থেকে ফায়দা তুলতে মরিয়া বিএনপির নেতারা। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে পিছন থেকে তাই মদদ জোগাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল তাদের। তাই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশের যে মূল সমস্যা, সেটা ডাইভার্ট করার জন্য এ ধরনের আন্দোলনকে তৈরি করা হচ্ছে।’ প্রথমে দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে তাকেই বলতে শোনা গেছে, ‘ছেলেদের যে দাবি, সেটা আমরা সমর্থন করি। এটাকে অযৌক্তিক বলার কোনো কারণ নেই।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও একধাপ এগিয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকেই দায়ী করেছেন। বিএনপি নেতারা মুখে সাধু সাজলেও আন্দোলনকে সহিংস করতেও সচেষ্ট বলে অভিযোগ।

 

কোটা বিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় সরকার যথেষ্ট যত্নশীল। মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যথেষ্ট মানবিক। তাই এখনই কড়া হাতে আন্দোলন দমন করতে চাইছে না সরকার। যথেষ্ট ধৈর্য সহকারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন।  দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সব কর্মসূচি বন্ধ করে আদালতের নির্দেশনা মেনে অবিলম্বে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কোটা বিরোধী আন্দোলনকে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চায়। তাদের সে খায়েশ পূরণ হতে দিবে না আওয়ামী লীগ’। একই সঙ্গে তিনি আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে কোনো মহল যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় তাহলে সরকারকে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে’।

 

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থায় স্থায়ী সমাধানের কথা বলে শিক্ষার্থীদের প্ররোচনায় কোনও খামতি নেই। আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।’ আপাত দৃষ্টিতে এই দাবির মধ্যে অযৌক্তিক কিছু নেই। সরকারও অনেক বিষয়েই সহমত। কিন্তু ছাত্রদের আবেগকে কাজে লাগাতে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির যে ষরযন্ত্র চলছে তা বরদাস্ত করা কোনও সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়।

 

মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা সরকারই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করে। ফলে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত বাতিল হয় সব ধরনের কোটা। কিন্তু কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ২০২১ সালে আদালতে রিট করেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ জুন কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ফলে ১০ জুলাই হাইকোর্টের রায়ের উপর ৪ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেয় আপিল বিভাগ। স্থগিত হয় কোটা পুনর্বহালের রায়। অর্থাৎ কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসা এখন কোর্টের রায়ের উপর নির্ভর করছে। সরকারের দায় নেই। এটা বুঝেও আন্দোলনকে উসকে যাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।

 

মাথায় রাখতে হবে, শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই চাকরি ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ সংরক্ষণ বা কোটার কথা বলা আছে। জাতপাতের ভিত্তিতে ভারত শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রক্রিয়াতেও সংরক্ষণ প্রথা চালু রেখেছে। পাকিস্তানের কোটা ব্যবস্থায় নারী, জাতিগত সংখ্যালঘু ও স্বল্পোন্নত অঞ্চলের ব্যক্তিদের জন্য সরকারি চাকরিতে পদ সংরক্ষণ করা হয়েছে। কানাডায় বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়, সংখ্যালঘু, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি চাকরিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ কোটা। যুক্তরাষ্ট্রেও সংখ্যালঘু ও নারীদের কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সুযোগ দিতে রয়েছে বিশেষ বন্দোবস্ত। কমিউনিস্ট শাসিত চীনের মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ হচ্ছে বিভিন্ন জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কোটা অত্যন্ত জরুরি।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে বিএনপি জামায়াতের রাজনীতি!

আপডেট টাইম : ১০:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
ডেস্ক রিপোর্ট :

অবশেষে সহজ অনুমেয় বিষয়টি সত্য বলে প্রামাণ হলো। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হলো বিএনপি ও তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্র সমাজকে ক্ষেপিয়ে তুলতে গুজব ও নানা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে তারা। ফেসবুকে তাদের সরব উপস্থিতি। বেশ কিছু সূত্রে খবর পাওয়া গেছে  অস্থিরতার সৃষ্টির পেছনে কাজ করছে বিএনপি-জামায়াত জোটের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিদেশ থেকেও এই আন্দোলনকে মদদ জোগানো হচ্ছে। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে ব্যর্থ বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা এখন ছাত্রদের উসকে দিয়ে চাইছে দেশকে ফের অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে। তাই মেধা ভিত্তিক নিয়োগের দাবি তুললেও তাদের আসল উদ্দেশ্য হলো ছাত্রদের ওপর ভর করে আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে রাজপথের আন্দোলনে বিএনপি তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি।

 

জামায়াতও অপেক্ষায় ছিল একটি চরম সুযোগের। এই দুই দৈরথের সেই সুযোগ এনে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের কোটা বিরোধী আন্দোলন। ২০১৮ সালে যখন এদেশে প্রথমবারের মত কোটা বিরোধী আন্দোলনের শুরু হয় তার নেতৃত্ব দিয়েছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কোটা তুলে দিলে এবং শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে কোটা থেকে সরে যায় সাধারণ ছাত্ররা। এর পরে হাইকোর্টের রায়ে কোটা ব্যবস্থা বহাল হলে পরে আবারও আন্দোলনে নামে সাধারণ ছাত্ররা। এবারও তাদের কাধে সওয়ার হলো।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্দোলনকারীদের একটা অংশ রাজাকারের পক্ষে কথা বলছে। এটা স্পষ্ট, এর পেছনে রয়েছে বিএনপি-জামায়াত। বিএনপি জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির। তারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তারা। আর এ কারণেই সাধারণ ছাত্রদের দাবী দাওয়ার  অহিংস আন্দোলন আস্তে আস্তে সহিংসতায় রুপ নিতে শুরু করেছে। জনদূর্ভোগের পাশাপাশি হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। আজ মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বুধবার দেশব্যপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ছাত্রদল।

 

তবে বিএনপি নেতারা জানেন, তারা সামনে থাকলে কোটা বিরোধী আন্দোলনও ব্যর্থ হবে। তবু এই আন্দোলন থেকে ফায়দা তুলতে মরিয়া বিএনপির নেতারা। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে পিছন থেকে তাই মদদ জোগাচ্ছেন বিএনপি নেতারা। কিন্তু প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল তাদের। তাই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশের যে মূল সমস্যা, সেটা ডাইভার্ট করার জন্য এ ধরনের আন্দোলনকে তৈরি করা হচ্ছে।’ প্রথমে দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে তাকেই বলতে শোনা গেছে, ‘ছেলেদের যে দাবি, সেটা আমরা সমর্থন করি। এটাকে অযৌক্তিক বলার কোনো কারণ নেই।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও একধাপ এগিয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকেই দায়ী করেছেন। বিএনপি নেতারা মুখে সাধু সাজলেও আন্দোলনকে সহিংস করতেও সচেষ্ট বলে অভিযোগ।

 

কোটা বিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় সরকার যথেষ্ট যত্নশীল। মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যথেষ্ট মানবিক। তাই এখনই কড়া হাতে আন্দোলন দমন করতে চাইছে না সরকার। যথেষ্ট ধৈর্য সহকারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন।  দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সব কর্মসূচি বন্ধ করে আদালতের নির্দেশনা মেনে অবিলম্বে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কোটা বিরোধী আন্দোলনকে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চায়। তাদের সে খায়েশ পূরণ হতে দিবে না আওয়ামী লীগ’। একই সঙ্গে তিনি আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে কোনো মহল যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় তাহলে সরকারকে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে’।

 

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থায় স্থায়ী সমাধানের কথা বলে শিক্ষার্থীদের প্ররোচনায় কোনও খামতি নেই। আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘সরকারি চাকরির সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।’ আপাত দৃষ্টিতে এই দাবির মধ্যে অযৌক্তিক কিছু নেই। সরকারও অনেক বিষয়েই সহমত। কিন্তু ছাত্রদের আবেগকে কাজে লাগাতে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির যে ষরযন্ত্র চলছে তা বরদাস্ত করা কোনও সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়।

 

মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা সরকারই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করে। ফলে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত বাতিল হয় সব ধরনের কোটা। কিন্তু কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ২০২১ সালে আদালতে রিট করেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ জুন কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ফলে ১০ জুলাই হাইকোর্টের রায়ের উপর ৪ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেয় আপিল বিভাগ। স্থগিত হয় কোটা পুনর্বহালের রায়। অর্থাৎ কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসা এখন কোর্টের রায়ের উপর নির্ভর করছে। সরকারের দায় নেই। এটা বুঝেও আন্দোলনকে উসকে যাচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা।

 

মাথায় রাখতে হবে, শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই চাকরি ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ সংরক্ষণ বা কোটার কথা বলা আছে। জাতপাতের ভিত্তিতে ভারত শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রক্রিয়াতেও সংরক্ষণ প্রথা চালু রেখেছে। পাকিস্তানের কোটা ব্যবস্থায় নারী, জাতিগত সংখ্যালঘু ও স্বল্পোন্নত অঞ্চলের ব্যক্তিদের জন্য সরকারি চাকরিতে পদ সংরক্ষণ করা হয়েছে। কানাডায় বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়, সংখ্যালঘু, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি চাকরিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ কোটা। যুক্তরাষ্ট্রেও সংখ্যালঘু ও নারীদের কর্মসংস্থান ও শিক্ষার সুযোগ দিতে রয়েছে বিশেষ বন্দোবস্ত। কমিউনিস্ট শাসিত চীনের মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ হচ্ছে বিভিন্ন জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কোটা অত্যন্ত জরুরি।


প্রিন্ট