ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

তানোরের হরিপুর স্কুলে জেঁকে বসেছে নানা অনিয়ম

রাজশাহীর তানোরের  কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি)  হরিপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম জেঁকে বসেছে। স্মার্ট বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশা দেখে যে কেউ হতবাক হবে। একটা   মানসম্মত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের  সমান কোনো সুযোগ-সুবিধাও এখানে নাই।
সরেজমিন দেখা গেছে স্কুলে মাত্র ১৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, তবে সকল শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলো না। এছাড়াও শিক্ষক আছে কম্পিউটার নাই, লাইব্রেরিয়ান আছে লাইব্রেরী নাই, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও বিজ্ঞানাগার নাই, স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট নাই  ঝুঁকিপূর্ণ  মাটির ঘরে পড়ানো হচ্ছে। বিগত ২০০২ সালে নার্গিস বেগম (কম্পিউটার) সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
কিন্ত্ত দুঃখজনক  হলেও সত্যি এই ২২ বছরেও কম্পিউটার  শিক্ষক কম্পিউটার চালানোয় পারদর্শী হতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, স্কুলের প্রায় ৪০ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে, এর  মধ্যে ১টি পুকুর ও ২০ বিঘা ফসলী জমি। এসব সম্পত্তি থেকে বছরে প্রায়  ৮ লাখ টাকা আয় হয়। অথচ স্কুলের কোনো উন্নয়ন না হলেও স্কুল ফান্ডে কোনো টাকা নাই। অভিভাবক মহল এবিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা গেছে, বিগত  ১৯৪৭ সালে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিগত ১৯৬৫ সালে একাডেমিক  স্বীকৃতি ও ১৯৮৫ সালে এমপিওভুক্তকরণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, কম্পিউটার শিক্ষক নিজেই তেমন কম্পিউটার চালাতে পারেন না বা দক্ষ নয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তারা দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটার শিক্ষা (হাতে-কলমে) অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা বলেন, সরেজমিন তদন্ত করলেই এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। এছাড়াও স্কুুুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়া হয় না। এঘটনায় এলাকার অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে স্কুলের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে গত বৃহস্প্রতিবার এলাকাবাসি ডাকযোগে স্থানীয় সাংসদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদুক) লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়রা বলছে, কম্পিউটার পরিচালনা করতে না পারলেও সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের  যোগসাজশে ঘরে বসে সরকারি বেতন-ভাতাসহ  সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন শিক্ষক যেটা নীতিমালা পরিপন্থী।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, নীতিমালায় বলা আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার শিক্ষককে ওয়েবসাইট তৈরীসহ (অনলাইন)-এর যাবতীয় কাজ করতে হবে। এছাড়াও কম্পিউটার শিক্ষক
নিয়োগের নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে সরকার অনুমোদিত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি {নেকটার}, জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি {নেকটার বগুড়া}, ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি মেহেরপুর, যুবউন্নয়ন অধিদপ্তর {মশরপুর নওগাঁ} এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট অর্জনকারীদের এমপিওভুক্ত করা যাবে বলে জানান ডিআইএ কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, শিক্ষক নার্গিস বেগম তেমন কম্পিউটার পরিচালনা করতে না পারায় স্কুলের সিংহভাগ  কাজ বাইরে থেকে করতে হয়। এতে একদিকে প্রতিষ্ঠানের যেমন অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরের মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। তিনি  বলেন, কয়েকটি পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে স্কুলের উন্নয়নে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন্ত্ত একটি টাকারও উন্নয়ন কাজ না করে এসব টাকা নয়ছয় করা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক লহির উদ্দিন বলেন, স্কুলের আয়-ব্যয় সভাপতি দেখভাল করেন, তাছাড়া স্কুলের তেমন আয় হয় না। তিনি বলেন, কম্পিউটার শিক্ষক সব কাজ  করতে পারে না, তাই বাইরে থেকে কাজ করতে হয়, যেটা অনেক স্কুল করে থাকে। আর নিয়োগ কিভাবে হয়, কারা দেয়, সেটা সবাই জানে। নিয়োগে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।
এবিষয়ে কম্পিউটার  শিক্ষক নার্গিস বেগম বলেন, কম্পিউটারের  দু’একটা জটিল কাজ বাইরে থেকে করা হয সত্য, তবে ক্লাস না নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।
এবিষয়ে স্কুলের সভাপতি তোফাজ্জুল হক খাঁন  বলেন, তার মেয়াদ প্রায় শেষ। তিনি নামেই সভাপতি, স্কুলের কোনো বিষয়ে তাকে সেইভাবে কিছু জানানো হয় না।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

তানোরের হরিপুর স্কুলে জেঁকে বসেছে নানা অনিয়ম

আপডেট টাইম : ০৩:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
আলিফ হোসেন, তানোর (রাজশাহী) উপজেলা প্রতিনিধি :
রাজশাহীর তানোরের  কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি)  হরিপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম জেঁকে বসেছে। স্মার্ট বাংলাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশা দেখে যে কেউ হতবাক হবে। একটা   মানসম্মত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের  সমান কোনো সুযোগ-সুবিধাও এখানে নাই।
সরেজমিন দেখা গেছে স্কুলে মাত্র ১৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, তবে সকল শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত ছিলো না। এছাড়াও শিক্ষক আছে কম্পিউটার নাই, লাইব্রেরিয়ান আছে লাইব্রেরী নাই, বঙ্গবন্ধু কর্নার ও বিজ্ঞানাগার নাই, স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট নাই  ঝুঁকিপূর্ণ  মাটির ঘরে পড়ানো হচ্ছে। বিগত ২০০২ সালে নার্গিস বেগম (কম্পিউটার) সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
কিন্ত্ত দুঃখজনক  হলেও সত্যি এই ২২ বছরেও কম্পিউটার  শিক্ষক কম্পিউটার চালানোয় পারদর্শী হতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, স্কুলের প্রায় ৪০ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে, এর  মধ্যে ১টি পুকুর ও ২০ বিঘা ফসলী জমি। এসব সম্পত্তি থেকে বছরে প্রায়  ৮ লাখ টাকা আয় হয়। অথচ স্কুলের কোনো উন্নয়ন না হলেও স্কুল ফান্ডে কোনো টাকা নাই। অভিভাবক মহল এবিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা গেছে, বিগত  ১৯৪৭ সালে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিগত ১৯৬৫ সালে একাডেমিক  স্বীকৃতি ও ১৯৮৫ সালে এমপিওভুক্তকরণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, কম্পিউটার শিক্ষক নিজেই তেমন কম্পিউটার চালাতে পারেন না বা দক্ষ নয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তারা দীর্ঘদিন ধরে কম্পিউটার শিক্ষা (হাতে-কলমে) অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা বলেন, সরেজমিন তদন্ত করলেই এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। এছাড়াও স্কুুুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেয়া হয় না। এঘটনায় এলাকার অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে স্কুলের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে গত বৃহস্প্রতিবার এলাকাবাসি ডাকযোগে স্থানীয় সাংসদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদুক) লিখিত অভিযোগ করেছেন। স্থানীয়রা বলছে, কম্পিউটার পরিচালনা করতে না পারলেও সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের  যোগসাজশে ঘরে বসে সরকারি বেতন-ভাতাসহ  সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন শিক্ষক যেটা নীতিমালা পরিপন্থী।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, নীতিমালায় বলা আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার শিক্ষককে ওয়েবসাইট তৈরীসহ (অনলাইন)-এর যাবতীয় কাজ করতে হবে। এছাড়াও কম্পিউটার শিক্ষক
নিয়োগের নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে সরকার অনুমোদিত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি {নেকটার}, জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমি {নেকটার বগুড়া}, ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি মেহেরপুর, যুবউন্নয়ন অধিদপ্তর {মশরপুর নওগাঁ} এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট অর্জনকারীদের এমপিওভুক্ত করা যাবে বলে জানান ডিআইএ কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী শিক্ষক বলেন, শিক্ষক নার্গিস বেগম তেমন কম্পিউটার পরিচালনা করতে না পারায় স্কুলের সিংহভাগ  কাজ বাইরে থেকে করতে হয়। এতে একদিকে প্রতিষ্ঠানের যেমন অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাইরের মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। তিনি  বলেন, কয়েকটি পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে স্কুলের উন্নয়নে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন্ত্ত একটি টাকারও উন্নয়ন কাজ না করে এসব টাকা নয়ছয় করা হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক লহির উদ্দিন বলেন, স্কুলের আয়-ব্যয় সভাপতি দেখভাল করেন, তাছাড়া স্কুলের তেমন আয় হয় না। তিনি বলেন, কম্পিউটার শিক্ষক সব কাজ  করতে পারে না, তাই বাইরে থেকে কাজ করতে হয়, যেটা অনেক স্কুল করে থাকে। আর নিয়োগ কিভাবে হয়, কারা দেয়, সেটা সবাই জানে। নিয়োগে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।
এবিষয়ে কম্পিউটার  শিক্ষক নার্গিস বেগম বলেন, কম্পিউটারের  দু’একটা জটিল কাজ বাইরে থেকে করা হয সত্য, তবে ক্লাস না নেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।
এবিষয়ে স্কুলের সভাপতি তোফাজ্জুল হক খাঁন  বলেন, তার মেয়াদ প্রায় শেষ। তিনি নামেই সভাপতি, স্কুলের কোনো বিষয়ে তাকে সেইভাবে কিছু জানানো হয় না।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রিন্ট