নিয়ম বহির্ভূত ছাড়া প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির রোষানলে পড়ে সম্মেলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকে সাময়িক বরখাস্তের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শনিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলা সদর ও বোয়ালমারী উপজেলার সীমান্তবর্তী ভাটদী—বঙ্গেশ্বরদী বাজারের চিতার বাজার-ভাটদী সড়কে মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভে ওই শিক্ষকের পদ ফিরে পাওয়া এবং সভাপতির পদত্যাগ চেয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ফরিদপুর সদরের বঙ্গেশ্বরদী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ গত ১৬ জুন বরখাস্তকৃত সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে ফোনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের রুমে ডেকে নিয়ে বলেন, প্রধান শিক্ষক আগামী ৯ জুলাই অবসরে যাবেন; বিধি মোতাবেক আপনি (সহকারী প্রধান শিক্ষক) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হবেন। আপনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন সেটা আমি বা কমিটি চায় না। আপনি শারিরীক ও মানষিক ভাবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম সেইভাবে লিখিত দিলে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শান্ত কুমার শীলকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বানাবো। সিরাজুল ইসলাম শারিরীক ও মানষিকভাবে সুস্থ্য থাকায় মিথ্যা লিখিত দিতে পারবেন না জানিয়ে দেন।
এ সময় সভাপতি লিখিত না দিলে তাকে (সিরাজুল ইসলাম) বরখাস্ত করার হুমকি দেন। এ ঘটনার তিনদিন পর কোন কারণ দর্শানীর নোটিশ ছাড়াই অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ওই সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে সভাপতি গত ১৯ জুন বরখাস্তের কাগজ ধরিয়ে দেন।
দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলেপ কাজী, বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সিদ্দীক মীর, চাঁদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা হোসেন, দাদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বরখাস্তকৃত সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম করতে পারবে না বিধায় আমাকে তারা চায় না। গত উপজেলা নির্বাচনে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক একজনের নির্বাচন করেছেন আর আমি অন্য একজনের নির্বাচন করেছি। তারাও আওয়ামী লীগ করে আমিও বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আমার প্রার্থী হেরেছে। তাদের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। মূলত সেই রেশ ধরেই আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সভাপতির ছোট ভাই আবুল খায়ের সভাপতি থাকাকালে আমাকে আগেও একবার নিয়ম বহিভূতভাবে বরখাস্ত করেছিলেন। সেই সময় আপিল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটির শুনানী শেষে আমাকে স্বপদে শিক্ষা বোর্ড পূনর্বহাল করেন।
তিনি আরো বলেন, এমনকি সভাপতি—প্রধান শিক্ষক ২০২১ সালের করোনার সময়ের এসএসসি বোর্ড পরীক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললেও তারা সেটা এখনো দেয়নি।
সভাপতির পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ওই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র আবির হোসেন বলেন, দুর্নীতি করে অমানবিকভাবে আমাদের শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। স্যারের পদ ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা আজকে রাস্তায় দাড়িয়েছি। স্কুলে রাজনীতি চলছে। আমরা এই সভাপতির পদত্যাগ চাই। অপর শিক্ষার্থী দশম শ্রেণীর ছাত্র মো. জিহাদ শেখ বলেন, এই সভাপতি আসার পর থেকেই স্কুলের রাজনীতি চলছে। স্কুলের বাথরুমসহ কোন কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে না। বাথরুম করতে দশ টাকা ভ্যান ভাড়া দিয়ে বাড়ি যেতে হয়। স্কুল বাঁচাতে বর্তমান কমিটির হাত থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য লক্ষণ বিশ্বাস বলেন, আমরা ছেলে—মেয়েদের স্কুলে পাঠাই মানুষ হওয়ার জন্য। বর্তমানে স্কুলে নোংরা রাজনীতির খেলা শুরু হয়েছে। ভাবছিলাম একজন শিল্পপতি সভাপতি হয়েছেন শিক্ষার মান আরো উন্নত হবে। তা না হয়ে এই কমিটি আসার পরেই শিক্ষার মান তলানিতে যাচ্ছে। এই কমিটিকে আমরা আর চাই না। সভাপতির পদত্যাগ দাবি জানান তিনি।
সম্মিলনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান মল্লিক বলেন, আজকে সহকারী প্রধান শিক্ষক সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছেন সেটা সঠিক নয়। ভাটদী বাজার থাকার কারণে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনে বেশি লোক হয়তো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সভাপতি বরাবর অভিযোগ দেওয়ার কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই একজন শিক্ষককে আপনারা বরখাস্ত করতে পারেন? বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সভাপতি সেটা করতে পারেন। তবে অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. ফিরোজ আহম্মেদ দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।