ঢাকা , সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ইবির মেগাপ্রকল্পে অর্থ আত্মসাত

সোয়া ৬ কোটি টাকার গরমিল, ইবির ৮ প্রকৌশলীকে দুদকে তলব

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) চলমান মেগা প্রকল্পের ৬কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বিল গরমিলের টাকা আত্মসাৎ ও ভাগবাটোয়ারার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীসহ আট প্রকৌশলীকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয় কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে বিষয়টি জানা গেছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বক্তব্য নেওয়া প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।

 

দুদকের চিঠিতে বলা হয়, মেগাপ্রকল্পে দ্বিতীয় প্রশাসন ভবন নির্মাণে সর্বশেষ চলতি বিলে ২৪৪ ও ৫নং আইটেমে ভুয়া বিল দেখিয়ে ৬ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন ও ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এর অনুসন্ধানে উক্ত ৮ প্রকৌশলীর বক্তব্য গ্রহণ করা হবে।

 

এর আগে গত ১০ ও ১১জুন সাক্ষাতের জন্য চিঠি প্রেরণ করে দুদক। তবে গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আযহার ছুটির আগে রেজিস্ট্রার দফতরে চিঠি না পৌঁছায় যথাসময়ে সাক্ষাৎকার সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) রেজিস্ট্রার দফতরের পুনঃআলোচনা সাপেক্ষে সাক্ষাতের এ নতুন দিন নির্ধারণ করে দুদক।

 

এবিষয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান বলেন, প্রকৌশলীদের বক্তব্য শুনতে দুদক চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় চিঠি পড়ে ছিল। পরে দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সাক্ষাতের নতুন সময় জানিয়েছি।

 

দুদকের দেওয়া চিঠিতে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসন ভবন নির্মাণে সর্বশেষ চলতি বিলে ভুয়া বিল দিয়ে ছয় কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন ও ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।

 

যে আট প্রকৌশলীকে ডাকা হয়েছে তারা হলেন-ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন ও আলিমুজ্জামান টুটুল, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) বাদশা মামুনুর রশিদ ও মোহা. নুর আলম, উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) প্রসেনজিৎ কুমার বিশ্বাস, রাজিব হোসাইন ও সোহাগ ইসলাম সাগর। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশী এ কে এম শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন ও আলিমুজ্জামান টুটুলকে ১ জুলাই ও বাকীদের ৩০ জুন ডাকা হয়েছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, দুদক প্রকৌশলীদের বক্তব্য শুনতে ডেকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু ওই সময় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় চিঠি পড়ে ছিল। পরে দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সাক্ষাতের নতুন সময় জানিয়েছি।

 

গত বছরের নভেম্বরে অভিযোগ সংক্রান্ত একটি বেনামী চিঠি আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও দুদকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগ আমলে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই প্রতিবেদন গত ১৯ মে ২৬৩ তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হয়। তবে সেখানে শাস্তি নির্ধারণের পদ্ধতি ও বিধি উল্লেখ না করে শাস্তি নির্ধারণে পরবর্তীতে আবারো তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয় সিন্ডিকেট থেকেই। সেই কমিটিকে এক মাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও তারা এখনো প্রতিবেদন দেয়নি।

 

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৩৭ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজের সোয়া ৬ কোটি টাকার ভুয়া বিল উত্তোলন ও ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরামসহ বিভিন্ন দপ্তরে একটি উড়ো চিঠি আসে। চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদারসহ একাধিক কর্মকর্তা ও কয়েকজন সাবেক-বর্তমান ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। একই অভিযোগের চিঠি পাঠানো হয় দুদকেও। পরে ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

 

গত ৯ মার্চ কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ওই কমিটি। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। প্রতিবেদনে আর্থিক অনিয়মের সত্যতাও পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে সূত্র। এদিকে একই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।

 

 

তবে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়ি ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডিসিপ্লিন রুলসের আলোকে অভিযুক্তদের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করা ছিল না। ফলে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সিন্ডিকেট। এরপর তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যাধলোচনা ও সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তির ধারা নির্দিষ্ট করার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও উড়ো চিঠির মাধ্যমে একই অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দুদক। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

ইবির মেগাপ্রকল্পে অর্থ আত্মসাত

সোয়া ৬ কোটি টাকার গরমিল, ইবির ৮ প্রকৌশলীকে দুদকে তলব

আপডেট টাইম : ০৭:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) চলমান মেগা প্রকল্পের ৬কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বিল গরমিলের টাকা আত্মসাৎ ও ভাগবাটোয়ারার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীসহ আট প্রকৌশলীকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

 

কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয় কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে বিষয়টি জানা গেছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বক্তব্য নেওয়া প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।

 

দুদকের চিঠিতে বলা হয়, মেগাপ্রকল্পে দ্বিতীয় প্রশাসন ভবন নির্মাণে সর্বশেষ চলতি বিলে ২৪৪ ও ৫নং আইটেমে ভুয়া বিল দেখিয়ে ৬ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন ও ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এর অনুসন্ধানে উক্ত ৮ প্রকৌশলীর বক্তব্য গ্রহণ করা হবে।

 

এর আগে গত ১০ ও ১১জুন সাক্ষাতের জন্য চিঠি প্রেরণ করে দুদক। তবে গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আযহার ছুটির আগে রেজিস্ট্রার দফতরে চিঠি না পৌঁছায় যথাসময়ে সাক্ষাৎকার সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) রেজিস্ট্রার দফতরের পুনঃআলোচনা সাপেক্ষে সাক্ষাতের এ নতুন দিন নির্ধারণ করে দুদক।

 

এবিষয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ এম আলী হাসান বলেন, প্রকৌশলীদের বক্তব্য শুনতে দুদক চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় চিঠি পড়ে ছিল। পরে দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সাক্ষাতের নতুন সময় জানিয়েছি।

 

দুদকের দেওয়া চিঠিতে অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসন ভবন নির্মাণে সর্বশেষ চলতি বিলে ভুয়া বিল দিয়ে ছয় কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন ও ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।

 

যে আট প্রকৌশলীকে ডাকা হয়েছে তারা হলেন-ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন ও আলিমুজ্জামান টুটুল, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) বাদশা মামুনুর রশিদ ও মোহা. নুর আলম, উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) প্রসেনজিৎ কুমার বিশ্বাস, রাজিব হোসাইন ও সোহাগ ইসলাম সাগর। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশী এ কে এম শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন ও আলিমুজ্জামান টুটুলকে ১ জুলাই ও বাকীদের ৩০ জুন ডাকা হয়েছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, দুদক প্রকৌশলীদের বক্তব্য শুনতে ডেকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু ওই সময় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় চিঠি পড়ে ছিল। পরে দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সাক্ষাতের নতুন সময় জানিয়েছি।

 

গত বছরের নভেম্বরে অভিযোগ সংক্রান্ত একটি বেনামী চিঠি আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও দুদকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগ আমলে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি অভিযোগের সত্যতা পায়। সেই প্রতিবেদন গত ১৯ মে ২৬৩ তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হয়। তবে সেখানে শাস্তি নির্ধারণের পদ্ধতি ও বিধি উল্লেখ না করে শাস্তি নির্ধারণে পরবর্তীতে আবারো তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয় সিন্ডিকেট থেকেই। সেই কমিটিকে এক মাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও তারা এখনো প্রতিবেদন দেয়নি।

 

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৩৭ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্পের কাজের সোয়া ৬ কোটি টাকার ভুয়া বিল উত্তোলন ও ভাগবাটোয়ারার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, শাপলা ফোরামসহ বিভিন্ন দপ্তরে একটি উড়ো চিঠি আসে। চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদারসহ একাধিক কর্মকর্তা ও কয়েকজন সাবেক-বর্তমান ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। একই অভিযোগের চিঠি পাঠানো হয় দুদকেও। পরে ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

 

গত ৯ মার্চ কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ওই কমিটি। প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। প্রতিবেদনে আর্থিক অনিয়মের সত্যতাও পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে সূত্র। এদিকে একই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।

 

 

তবে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়ি ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড ডিসিপ্লিন রুলসের আলোকে অভিযুক্তদের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করা ছিল না। ফলে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সিন্ডিকেট। এরপর তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যাধলোচনা ও সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তির ধারা নির্দিষ্ট করার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও উড়ো চিঠির মাধ্যমে একই অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে দুদক। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।