আওয়ামী লীগের রাজনীতির অন্যতম সবার প্রিয় মানুষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের জানাজার নামাজ শেষে বাঘা পৌরসভার গাওপাড়া নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায়, বাবুলের রাজনৈতিক
অনুসারী, সহযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তার মরদেহে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানায়। পরে তাকে চিরশয্যায় সমাহিত করা হয়।
জানা যায়, বক্তব্যকালে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাবুলের অপরাধ ছিল কেন তিনি শাহরিয়ার আলমের সাখে রাজনীতি করেন। বাবুল হত্যার বিষয়ে গোপনে যারা মদদ দিয়েছেন তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে বিচার করা হবে। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, এমপি আসাদুজ্জান আসাদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলুর নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা কেন জানাজায় আসেনি। তাদের সৎ সাহস নেই। প্রয়োজনে তাদের নামে মামলা করে আইনের কাঠ গড়ায় দাঁড় করানো হবে। খুনি আক্কাছকে ২ বছর আগে বহিস্কারের ৭ দিনের মাথায়, খুনি আক্কাছ ও খুনি মেরাজকে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের গাড়ীতে ঘুরতে দেখেছি। তাদের পেছনে কারা শক্তি সঞ্চয় করে, তা খুঁজে বের করতে হবে। এর আগে অনেক সহ্য করা হয়েছে, এখন আর নয়। দল ব্যবস্থা নেবে, প্রশাসন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিবে।
তিনি বলেন, আমাদের কৃতকর্মে কারো ক্ষতি না হয় সে দায়িত্বও থাকবে। তবে, প্রকাশ্যে কিংবা পশ্চাতে কোন মদদদাতা থাকলে তারা এখান থেকে চলে যান। নিজ দায়িত্ব থেকে দায়িত্ব করবেন।
পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অনিল কুমার সরকারকে চলে যেতে বলেন দলের এক নেতা। এ বিষয়ে অনিল কুমারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে মরহুম বাবুলকে শেষ শ্রদ্ধা ও পরিবারকে সমবেদনা জানাতে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে কিছু বুঝে উঠার আগেই পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুস
সামাদ আমাকে জানাজার মাঠ থেকে চলে যেতে বলে। কাউকে কিছু না জানিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছি।
এ বিষয়ে জানাজায় উপস্থিত রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, চারদিন থেকে বাবুল হাসাপাতালে চিৎিসাধীন ছিলেন। তিনি সংগঠনের মূল দায়িত্বে থাকার পরও হাসপাতালে দেখতে যাননি। এ ক্ষোভ থেকে কিছু নেতাকর্মীরা তাকে জানাজার মাঠ থেকে চলে যেতে বলেন। তাৎক্ষনিক তিনি সেখান থেকে চলে যান।
জানাজায় বক্তব্য দেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, মরহুমের সহোদর বড় ভাই আনজারুল ইসলাম, বড় ছেলে আশিক জাভেদ।
উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. চিন্ময় কুমার, মরহুমের ছোট ছেলে অসীন জাভেদ অর্থ সহ অসংখ্য রাজনৈতিক অনুসারী, শুভাকাঙ্খী ও গুণগ্রাহীরা।
জানা যায়, আশরাফুল ইসলাম বাবুল ছাত্রজীবন থেকে আ’লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০২২ সালের ২১ মার্চ ও ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বাঘা উপজেলা শাখার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে, উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে দীর্ঘ ১২ বছর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি
শিক্ষকতা করতেন। ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছিলেন। সামাজিক কর্মকান্ডে তার পদারচনা ছিল উন্নয়নমূখী। বাবুল ইসলাম রাজনীতিতে বর্তমান এমপির অনুসারি ছিলেন।
বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী জানান, ২০১১ সালে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আশরাফুল ইসলাম বাবুল।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (২৬জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাবুল ইসলাম । তার বয়স হয়েছিলো ৫০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই পুত্রসহ অসংখ্য রাজনৈতিক অনুসারী, শুভাকাঙ্খী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে বড় ছেলে দাবি করে বলেন, পৌর মেয়র আক্কাছ, ইউপি চেয়ার¤্রান মেরাজ তার বাবাকে হত্যা করেছে।
গত শনিবার (২২ জুন) একই দিনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ-সমাবেশের আয়োজন করে সংঘর্ষে জড়ান আ’লীগের দু’পক্ষ। এক পক্ষে ছিলেন এমপির অনুসারি, আরেক পক্ষে ছিলেন-চেয়ারম্যান-মেয়রের অনুসারি। তারা দেশীয় অস্ত্রসহ চাপাতি ও পাইপ, ইটপাটকেল নিয়ে বাঘা উপজেলা চত্বর এলাকায় সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। আহত হন অন্তত
অর্ধশতাধিক। তাদের মধ্যে বাবুলের অবস্থা ছিল আশংকাজনক। মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার মারা যান। তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে, মাথায় সাদা কাপড় বেঁধে দোষীদের ফাঁসির দাবিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে নিহত বাবুলের সমর্থিত নেতাকর্মীরা।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের দিন আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওসি জানান, মারামারির ঘটনায় যে মামলাটি হয়েছিল, সেই মামলাটিই এখন হত্যা মামলায় রূপ নেবে বলেও জানান।
প্রিন্ট