মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য খননের সময় রংপুর টাউন হল বধ্যভূমিতে মানুষের হাড়-দাঁতের অংশ পাওয়া গেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ব্যবহৃত টাউন হল টর্চার সেলের পাশের বধ্যভূমি থেকে সোমবার এগুলো পাওয়া যায়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ ছুটে যান টাউন হল বধ্যভূমি চত্বরে। পরে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বধ্যভূমি এলাকা পরিদর্শন করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকালে ওই বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের জন্য শ্রমিকরা মাটি খুঁড়লে এসব হাড়গোড় বের হয়।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ও খনন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, মাটিতে ভরাট হওয়া কুয়ার উপরিভাগ কেবল খোঁড়া হয়েছে। পুরো কুয়া খুঁড়লে মুক্তিযুদ্ধকালীন নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া মানুষের আরও হাড়গোড় পাওয়া যেতে পারে।
বধ্যভূমি পরিদর্শনে এসে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রংপুর সভাপতি ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু বলেন, এক বিশাল খবর। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক এই টাউন হল বধ্যভূমি। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী টাউন হলে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করেছিল। মুক্তিকামী বাঙালি, মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষদের ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন ও হত্যা করেছিল। মা-বোনদের ইজ্জত লুটসহ তাদের হত্যা করে ফেলে দেয়া হয়েছিল টাউন হলের পাশের কুয়ার ভেতর। এ ইতিহাসের কথা এতদিন আমরা সবাই বলছিলাম। হায়েনাদের হাতে নিহত মানুষের আজ হাড়গোড় মিলেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের মহান ইতিহাস সংরক্ষণ করে অমরগাথা ও স্মারক চিহ্ন জীবন্ত রাখতে চাই।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন, সুজনের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেনসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের চেতনার সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠকরা বধ্যভূমি পরিদর্শনে আসেন।
সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ নভেম্বর ওই স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। ঐতিহাসিক টাউন হল ও আশপাশের সৌন্দর্যবর্ধন বৃদ্ধিসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিটি সংরক্ষণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছে রংপুর জেলা প্রশাসন। বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ আগামী বছরের জুনে শেষ হবে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ লাখ টাকা।