কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মাটি খেকো ইটভাটা মালিকদের লালসায় সরকারী নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে মাটি কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে এক শ্রেণীর মাটি চোরেরা। ইটভাটর মৌসুম শুরুর মাস খানেক মাটি কাটা ও বহন বন্ধ থাকলেও হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে যেন মাটি কাটা ও বহন করার ধুম পড়ে গেছে। প্রতিদিন দিনে ও রাতে সমানতালে মাটিকেটে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত অবৈধ যান এবং ড্রাম ট্রাকে করে মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এমনকি ইদের মৌসুমে যেখানে সকল শ্রেণীর মানুষ ইদের বাজার করতে এ দোকান ও দোকান ছুটাছুটি করছেন। সেই সময় খোদ থানা বাজারে থানার সামনের রাস্তা দখল করে চলছে মাটি বহন করা শতশত ভারী যানবাহন ড্রাম ট্রাক ও ট্রলি। এর ফলে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।
তাছাড়া মাটিবাহী এসব শ্যালো ইঞ্জিন চালিত অবৈধ যান এবং ড্রাম ট্রাক বেপরোয়াভাবে চলাচল করায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার পাশাপশি অতিরিক্ত ওজন বহন করায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল এবং গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সড়কে চলাচলকারী সাধারন মানুষকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
জানা যায়, উপজেলার আড়িয়া ইউনয়নের ঘোড়ামারা গ্রামে, বোয়ালিয়া ইউনিয়নের কিশোরীনগর, দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতখালী, চক দৌলতপুর, রিফাইতপুর ইউনিয়নের, জদ্দারপাড়া , দিঘলকান্দি, কমলাপুর, মসলেমপুর, ফিলিপনগর ইউপির আলীনগর সহ বিভিন্ন এলাকায় ২/৩ ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর কেটে এবং জমির টপসয়েল কেটে বিক্রয় করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ট্রলি চালক জানান, প্রতি ট্রলি মাটি ইটভাটা মালিকগণ কিনছেন ১২‘শ টাকায়। এর মধ্যে থানার লোক ৬০০ টাকা জমির মালিক ৩০০ টাকা ও ট্রলি ভাড়া ৩০০ টাকা। আবার স্থানীয় নেতারা ট্রলি প্রতি ক্ষেত্র বিশেষ ৫০ থেকে ২০০ টাকা পাচ্ছেন। ঐ চালকরা আরো জানায় যেহেতু ড্রাম ট্রাকে অনেক বেশী মাটি বহন করে তাই তাই ড্রাম ট্রাকের খরচ আরো ৪/৫গুণ বেশী।
চালকরা বলেন, থানা কন্ট্রাল না হলে আমরা ট্রলিতে মাটি তুলি না। কারণ, কন্ট্রাল না থাকলে পুলিশ ধরে এবং ট্রলি আটকে রাখেন। তখন ছাড়াতে অনেক টাকা লাগে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিন শতশত ট্রলি ও ড্রাম ট্রাকে করে থানার সামনে দিয়ে মাটি বহন করা হলেও থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেন না।
এ সকল মাটি বহনকারী ট্রলি বা ট্রাক থেকে কোন টাকা পয়সা নেওয়া হয় না বলে দাবী করেছেন দৌলতপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, এ সকল মাটি বহন করা অবৈধ যানবাহন ধরা পুলিশের কাজ না। যদি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থানা পুলিশের সহযোগীতা চান তবে, যত পুলিশ লাগে আমি দেব।
তাছাড়া এ সকল ইট ভাটায় জ্বালানী হিসাবে প্রতিদিন কয়েক‘শ টন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। যে কারণে, গাছপালা উজাড় হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে বিপর্যয় ঘটাচ্ছে।
উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্র সংলগ্ন, দৌলতপুর খান, পাড়া, জদ্দারপাড়া, সাদিপুর, স্বরুপপুর, চক দৌলতপুর, আল্লারদগার্, ডাংমড়কা এলাকায় বেশীরভাগ ইটভাটা রয়েছে। জনবসতিপূর্ণ ও দুই/তিন ফসলি জমিতে এ সকল ইঁভাটার দুষণ ও সারারাত ট্রলি ও ট্রাকের টুং টাং, দুমদাম, ভু ভা শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
ইট ভাটায় মাটি বহন ও কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানিয়েছেন, আমরা নিয়মিতভাবে ফসলি জমির মাটি কাটা ও বহন করায় জেল-জরিমানা সহ নানা দন্ড প্রদান করে আসছি এবং আমাদের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রিন্ট