দিনের পর দিন অফিস ফাঁকি দিয়ে রাজশাহীতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখছেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান। সপ্তাহে একদিন এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করে আবার চলে যান তিনি।
এদিকে অধ্যক্ষের মেডিকেল কলেজে না আসার সুযোগে রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন অফিস সহকারী জামান আহমেদ, হোস্টেল অ্যাটেনডেন্ট মারফিজা খাতুন রিতাসহ কয়েকজন। এছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির সময় সরকারি ও বেসরকারি খাতে আদায় করা অর্থ খরচ করা হচ্ছে দু’হাতে। ভুয়া বিল ভাউচারে উড়ে যাচ্ছে মেডিকেল কলেজের লাখ লাখ টাকা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে মাস দুয়েক আগে যোগদান করেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। কুষ্টিয়া জেলায় বদলি হলেও তিনি রাজশাহীর মায়া কোনোভাবেই ত্যাগ করতে পারছেন না। সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগী দেখেন। এ কারণে তিনি কুষ্টিয়ায় নিয়মিত অফিসও করেন না।
মেডিকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, নতুন অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকে সপ্তাহে একদিন রাজশাহী থেকে কুষ্টিয়ায় এসে অফিস করেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠান থাকলে তখন আসেন। সেসময় জরুরি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্বাক্ষর করে যান।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেলে চিকিৎসক ও শিক্ষকদের জন্য ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা থাকলেও অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। অন্যরা যেখানে সময়মতো অফিস করেন সেখানে অধ্যক্ষের ডিজিটাল হাজিরা লাগে না।
এদিকে দিনের পর দিন অফিস না করায় প্রশাসনিক কাজে নানা জটিলতা দেখা দেওয়ার পাশাপাশি নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে অধ্যক্ষ না আসলেও ক্যাম্পাসে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন অফিস সহকারী জামান আহমেদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রেষণে আসা জামান যোগদানের পর থেকে মেডিকেল কলেজ হাতের মুঠোই রেখে পরিচালনা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে প্রতি বছর ১০০ জনের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। ভর্তির সময় প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রায় ২২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে সরকারি অর্থের টাকাও ঠিকমতো ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাতের নজির রয়েছে। একইসঙ্গে বেসরকারি খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
অধ্যক্ষ রাজশাহীতে অবস্থান করায় তার হয়ে সবকিছু সামলান কয়েকজন শিক্ষক, অফিসের কম্পিউটার অপারেটর মামুন ও অফিস সহকারী জামান। কয়েকদিন আগে সাংবাদিকরা গেলে মামুন বলেন,স্যার ছুটিতে আছেন। আর অফিস সহকারী জামান বলেন, তিনি বাইরে একটি অনুষ্ঠানে গেছেন।
সপ্তাহে ৫ দিন অনুপস্থিত থাকার ব্যাপারে অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের থিসিস পরীক্ষা নিতে যেতে হয়। এছাড়াও মন্ত্রণালয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কাজ থাকে। আমি ম্যাক্সিমাম দিনই থাকি। আমি না থাকলেও শিক্ষকরা তাদের মতো কাজ করে নিতে পারেন।
একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি অনুপস্থিত থাকে সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমার থাকা বা না থাকা কোনো বিষয় না। ক্লাস হচ্ছে কিনা, শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছে কিনা, ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা এটাই আসল বিষয়। আর আমি উপস্থিত না অনুপস্থিত সে বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন যারা রয়েছেন তাদের কাছে জবাবদিহি করবো।
রাজশাহীতে দুপুর আড়াইটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত রোগী দেখার বিষয়ে বলেন, আমি রাজশাহীতে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে রোগী দেখা শুরু করি।
কুষ্টিয়াতে আপনার ডিউটি টাইম আড়াইটা পর্যন্ত, তাহলে সাড়ে চারটায় আপনি কীভাবে ওখানে রোগী দেখেন জানতে চাইলে উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।