ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কেষ্ট বসাকের ছেলে জয় বসাক (২০) বরিশাল মেডিকেল কলেজে এবার এম.বি.বি.এসে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু আর্থিক দৈন্যদশার কারণে বাবা কেষ্ট বসাক ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে বিষয়টি একটু বিলম্বে হলেও বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সহ-সভাপতি ও কয়রা কালীবাড়ী মন্দির কমিটির সভাপতি সুবাস সাহার নজরে আসে। তিনি মেডিকেলে চান্স পাওয়া জয় বসাকের বাবা কেষ্ট বসাককে ডেকে নগদ আর্থিক সহায়তা দেন।
সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে স্টেশন রোডস্থ মেসার্স শোভা ট্রেডার্সে এ আর্থিক সহায়তা প্রদানকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সময়ের প্রত্যাশার সম্পাদক লিটু সিকদার, যায়যায়দিন প্রতিনিধি দীপঙ্কর অপু, ভোরের দর্পণ প্রতিনিধি এস এম রুবেল, মেসার্স শোভা ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী মিন্টু দাস প্রমুখ।
এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সহ-সভাপতি ও কয়রা কালীবাড়ী মন্দির কমিটির সভাপতি সুবাস সাহা বলেন, ‘মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর কেষ্ট বসাক নামের এক ব্যবসায়ীর তার ছেলেকে ভর্তি করার সামর্থ্য নেই- এমন খবর স্থানীয় একটি পত্রিকায় দেখে ছেলেটির বাবাকে ডেকে ভর্তি বাবদ আর্থিক সহায়তা দিলাম। মাঝে মাঝে আমি ওই ছেলেকে আর্থিক সহায়তা দেবো বলে কথা দিয়েছি। বিত্তবানরা এদের পাশে এসে দাঁড়াক। কারণ এরাই আগামী দিনের মানুষ গড়ার কারিগর।’
এ সময় কেষ্ট বসাক কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘দারিদ্র্যতা আমার ছেলেকে স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা নিজেরা খেয়ে-না খেয়ে থাকলেও ছেলেকে বুঝতে দেইনি। আমি অনেক কষ্টে ছেলেকে এ পর্যায়ে এনেছি। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত অনেকেই আমাকে অনেক আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার ভাই, বাবা, মা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। তাই আমি আমার ছেলেকে গরিব মানুষের ডাক্তার বানাবো।’
এর আগে মৌসুমী সেন স্বপ্না নামের এক আমেরিকা প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখে আর্থিক সহায়তা দেন। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের চতর সেনপাড়া গ্রামের নিত্যানন্দ সেনের মেয়ে। বর্তমানে আমেরিকার নিউইয়র্কের কুইন্স শহরে থাকেন। মৌসুমী সেন জয় বসাকের মেডিকেলে ভর্তি বাবদ ১২ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করেন। গত ১৮ মার্চ মৌসুমী সেন স্বপ্নার পিসতুতো (ফুপাতো) বোন বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্সিং সুপারভাইজার আলো রানী মিত্র তার অফিস কক্ষে আর্থিক সহায়তার ওই টাকা কেষ্ট বসাকের হাতে তুলে দেন।
প্রসঙ্গত: বোয়ালমারী পৌর বাজারের মাংসপট্টির পাশে রাস্তায় বসে সেলাই মেশিন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন কেষ্ট বসাক। বসতবাড়ি ছাড়া কোনো জায়গা জমি নেই। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ২ শতাংশের বসতবাড়িতে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাস তাঁর। মেয়ে জয়া বসাক বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। জয় বসাক ২০২১ সালে বোয়ালমারী জর্জ একাডেমি থেকে এসএসসি এবং ২০২৩ সালে ঢাকা নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
জয় বসাকের বাবা কেষ্ট বসাক বলেন, ‘রাস্তার ধারে বসে সেলাই মেশিন চালিয়ে সংসার চালাই। কোনো দিন বাজার করার টাকা হয়, কোনো দিন হয় না। খেয়ে না খেয়ে, ধার-দেনা করে, স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’