ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এবার এই বিভাগ থেকেই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। টপ টু বটম (সচিব থেকে অফিস সহায়ক পর্যন্ত) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বলে দেওয়া হয়েছে, ‘কোনো অবস্থাতেই যেন সাংবাদিকদের হাতে কার্যপত্র না পৌঁছায়।’ যার ধারাবাহিকতায় কার্যপত্র সাংবাদিকদের হাতে পৌঁছায়নি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এত কড়া হলো কেন? জানতে চাইলে একজন ডিসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কারণ এবার ডিসিরা সাংবাদিকদের নিয়ে একাধিক প্রস্তাব করেছেন। যার সবই কোনো না কোনোভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে!
সাংবাদিকদের নিয়ে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন রাঙ্গামাটি, ফেনী ও লালমনিরহাটের ডিসিরা। তাদের মধ্যে সাংবাদিকদের জন্য আচরণবিধি চেয়েছেন রাঙ্গামাটির ডিসি। তিনি সাংবাদিকদের যোগ্যতা, মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি এমনকি দেশপ্রেম নিয়ে চিন্তিত। এসব বিষয়ে মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে প্রস্তাবের পক্ষে কিছু যুক্তি দিয়েছেন। রাঙ্গামাটির ডিসি বলেন, হলুদ সাংবাদিকতার প্রভাবে জনসাধারণের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পেতে বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন (আইপি) টেলিভিশন এবং অনলাইনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সাংবাদিকের সংখ্যাও অস্বাভাবিক বেড়েছে। মানসম্মত সাংবাদিক গড়ে তুলতে যুগোপযোগী আচরণ বিধিমালা জারির প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
অনলাইন সংবাদপত্র পরিচালনায় নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন ফেনীর ডিসি। প্রস্তাবের পক্ষে তিনি যে যুক্তি তুলে ধরেছেন এর মধ্যে অন্যতম হলো বর্তমানে অনলাইনের জন্য কোনো নীতিমালা নেই। অনিয়ন্ত্রিত এসব অনলাইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। নিয়মবহির্ভূত অনলাইনভিত্তিক সংবাদপত্রের কার্যক্রম বন্ধ করার কথাও বলেছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) জন্য মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট (গণমাধ্যম ব্যাবস্থাপনা) বিষয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করার সুপারিশ করেছেন লালমনিরহাটের ডিসি। তিনি বলেছেন, দৈনন্দিন প্রশাসন পরিচালনায় মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট একটি বিশেষ অনুষঙ্গ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে; বিশেষ করে গুজব, হলুদ সাংবাদিকতা, ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি চ্যানেলের সংখ্যা বেড়েছে। মিডিয়াকর্মীদের দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রশাসন একাডেমিতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের পরিসর ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলেছে, নানা কৌশলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিসরকে সংকুচিত করে রাখা হয়েছে। এর ফলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চর্চা কঠিন হয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমের ওপর চাপ গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। এমন প্রেক্ষাপটের মধ্যে এবার ডিসিরা আচরণবিধি প্রণয়নসহ সাংবাদিকদের বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব করলেন।
ডিসি সম্মেলন সরকারের মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বার্ষিক ও রুটিন সম্মেলন হিসেবেই বিবেচিত হয়। এতে ডিসিরা ছাড়াও অংশ নেন বিভাগীয় কমিশনাররা। সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে মন্ত্রী, সচিব, দপ্তরের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। অন্যান্য বছর তিন দিনব্যাপী হলেও এবার চার দিন এ বৈঠক হয়েছে। সম্মেলনের আগেই নিজ জেলার বিভিন্ন সংকট বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে প্রস্তাব পাঠান মাঠ প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তারা। এবারের সম্মেলনের আগে ডিসিদের দিক থেকে আলোচনার জন্য মোট প্রস্তাব এসেছিল ৩৫৬টি। গত ৩ মার্চ থেকে শুরু হয়ে এ সম্মেলন চলে ৬ মার্চ পর্যন্ত।