রাজবাড়ী জেলার পাংশায় ‘ঢেঁকিপাড়ার কানন’ কাব্যগ্রন্থের ত্রোয়দশ সংখ্যার মোড়ক উন্মেচন, ৫জন কৃতী শিক্ষার্থীর সম্মাননা প্রদান ও সাহিত্য আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলার যশাই ইউনিয়ন ও পাংশা পৌরসভার সীমান্তবর্তী ঢেঁকিপাড়া কবি নজরুল ইসলাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শনিবার বিকেল তিনটায় এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ঢেঁকিপাড়া কবি নজরুল ইসলাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাক্তন শিক্ষার্থী কল্যাণ সমিতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ঢেঁকিপাড়া কবি নজরুল ইসলাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাক্তন শিক্ষার্থী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও ঢেঁকিপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাহার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজবাড়ী-২ আসনের প্রাক্তন জাতীয় সংসদ সদস্য ও পাংশা উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মতিন মিয়া বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পাংশা সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খলিলুর রহমান ‘ঢেঁকিপাড়ার কানন’ কাব্যগ্রন্থ ও সৃজনশীল সাহিত্য চর্চার বিষয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার উপমা তুলে ধরে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। পাংশার সাহিত্যচর্চার অতীত ঐতিহ্য অব্যাহত রাখতে নবীন-প্রবীণ লেখকদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথিদের মধ্যে পাংশা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর সোহরাব মন্ডল, পাংশা সাহিত্য উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মাদ ফিরোজ হায়দার ও সাংবাদিক মোঃ মোক্তার হোসেন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢেঁকিপাড়া কবি নজরুল ইসলাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাক্তন শিক্ষার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মৃগী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান মজনু।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঢেঁকিপাড়ার কানন কাব্যগ্রন্থের সম্পাদক ও ঢেঁকিপাড়া কবি নজরুল ইসলাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ফিরোজ আহমেদ মুসা বলেন, পাংশার সমৃদ্ধ সাহিত্য সরোবরে আমি নিতান্তই বেমানান। সরোবরের এই উচ্ছ¡ল ঢেউয়ে সাঁতার কাটার ন্যূনতম যোগ্যতাটুকুও আমার নেই।
রুই কাতলার পাশে ঠাঁই পাবার বাসনায় জলে নামা। অদক্ষ সাঁতারুর মতো হাত-পা নাড়া। সেক্ষেত্রে সৌভাগ্যক্রমে অনেকেরই সুনজরে পড়েছি। তাই প্রাপ্তিটাও যথেষ্ট। সমৃদ্ধ এই সরোবরের পরিচিত মুখগুলো ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দেননি, বরং ¯েœহের পরশে কাছে টেনেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রাণপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের সাহিত্যমনা করে গড়ে তোলা আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাই তাদের লেখাগুলি কাব্যগ্রন্থে প্রাধান্য দিয়েছি। সাহিত্যের বিচারে লেখাগুলির মান কেমন হবে সেটা বিবেচনায় রাখি নাই। তাদের উৎসাহ দেওয়াটাই জরুরী মনে করেছি।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, পাংশার লেখকদের মধ্যে কখনও কখনও কাদা ছোড়াছুড়ি, খুবই দুঃখজনক। এতে বিভ্রন্তির সৃষ্টি হয়। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান না হলে অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সাহিত্য সংগঠকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ রাখেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে পাংশা মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক এম.এ জিন্নাহ, সাংবাদিক খোন্দকার রবিউল ইসলাম, ঢেঁকিপাড়া কবি নজরুল ইসলাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ আক্কাছ মন্ডল ও ভাতশালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরা পারভীন জুঁই প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন মোঃ জিল্লুর রহমান, মুহাম্মাদ ফিরোজ হায়দার, মোল্লা মাজেদ, সন্ধ্যা রানী কুন্ডু, মোঃ এবাদত আলী শেখ, সুজন আলী, সুমী খন্দকার, মোঃ আবুল হাশেম, ফারজানা ইয়াসমীন, আব্দুল মালেক ও ষড়জিৎ বিষ্ণু শ্যাম প্রমূখ।
অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সুমাইয়া সুলতানা। অনুষ্ঠানে ঢেঁকিপাড়া কবি নজরুল ইসলাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাক্তন শিক্ষার্থী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি শরিফুল বারীর অকাল মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ফাহাদ প্রামাণিক।
অনুষ্ঠানে শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক-লেখিকাবৃন্দসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। কবিতা আবৃত্তি, কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে সম্মাননা প্রদান, সাহিত্য আলোচনা ও আড্ডার মধ্যদিয়ে নবীন প্রবীণ লেখক লেখিকা ও বিশিষ্টজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয় ঢেঁকিপাড়ার কানন কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
প্রিন্ট