উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের উত্তরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক মাতুব্বর (৭৫)- এর চার পুত্র ও তিন কন্যা। বড় ছেলে ফারুক মাতুব্বর (৪০) কাঠের ব্যবসা করেন, মেঝো ছেলে ফরহাদ মাতুব্বর (৩৭) স্থানীয়ভাবে মাদকসেবী ও কারবারি হিসেবে পরিচিত, সেঝো ছেলে ফয়েজ মাতুব্বর (২৫) ভাঙ্গা কেএম কলেজের ছাত্র, আর ছোট ছেলে মাহমুদুল হক জাপানে (২৩) পড়ালেখা করছেন। তিন মেয়ের মধ্যে একজনকে বিয়ে দিয়েছেন, অন্য দুইজন পড়ালেখা করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, বিকালে মাটিকাটা নিয়ে বড় ভাই ফারুক মাতুব্বরের সাথে মেঝো ভাই ফরহাদ মাতুব্বরের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় সেঝো ভাই ফয়েজ মাতুব্বর ও পরিবারের সদস্যরা তাদের দুজনের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে দিতে এগিয়ে আসে। হঠাৎ করেই ফরহাদ তার কাছে থাকা অবৈধ পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়ে বড় ভাই ফারুক মাতুব্বরের উদ্দেশ্যে। কিন্তু বড় ভাই ফারুক মাতুব্বরের উদ্দেশ্যে ছোড়া গুলি গিয়ে লাগে ছোট ভাই ফয়েজ মাতুব্বরের হাতের কনুইতে। গুরুতর আহত অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা ফয়েজ মাতুব্বরকে পাশের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পিতা নুরুল হক মাতুব্বর জানান, মেঝো ছেলে ফরহাদের অত্যাচারে আমি ও আমার স্ত্রী বাড়িতে থাকি না। ভাঙ্গায় বাসা ভাড়া করে থাকি। আমাদের সাথে সেঝো ছেলে ফয়েজও থাকে।
তিনি আরো জানান, মেঝো ছেলে মাদকের সাথে জড়িত। অনেক চেষ্টা করেছি তাকে ফেরাতে, কিন্তু পারিনি। তাই বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে ভাঙ্গায় ভাড়া বাসায় থাকি।
বড় ভাই ফারুক মাতুব্বর জানান, জুমার নামাজের পর বাড়িতে যাই। সেঝো ভাই ফয়েজও ভাঙ্গা থেকে বাড়িতে আসে। বাড়িতে যাওয়ার পর ফরহাদ জমির মাটি কাটা নিয়ে আমার সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে। আমি প্রতিবাদ করলেই আমার ওপর তেড়ে আসে। ফরহাদের কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে গুলি করলে গুলিটি আমার গায়ে না লেগে ফয়েজের হাতের কনুইতে লাগে। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। সে এখন সুস্থ আছে।
তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ ফরহাদ মাদকের সাথে জড়িত। নিজে খায় এবং বিক্রিও করে থাকে। এ কারণে আব্বা-আম্মা বাড়িতে থাকে না। আমি বাড়িতেই থাকি, কিন্তু ওর সাথে তেমন কথা হয় না। এর আগেও অনেকবার আমাকে অপমান করায় ওর সাথে কথা বলি না।
ফারুক মাতুব্বর জানান, ফরহাদ মাদক সেবন করতে করতে অমানুষ হয়ে গেছে। না হলে ভাই হয়ে ভাইকে গুলি করতে পারে। আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ফরহাদ, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমি ভয়ে বাড়িতে যেতে পারছি না। বর্তমানে ভাঙ্গায় আব্বা-আম্মার কাছে রয়েছি।
ফারুক মাতুব্বরের স্ত্রী লাবনী আক্তার বলেন, বাড়িতে সব সময় মুখ বুঝে থাকি। ফরহাদের অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়। তারপরও দেবর তাই কিছু বলতে পারি না। কিন্তু আজকে ফরহাদ ওর ভাইয়ের উপর গুলি চালিয়েছে- এটা মেনে নেব কিভাবে। গুলিটা যদি বুকে লাগত, তাহলে তো আমি আমার স্বামীকে হারাতাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ফরহাদ একজন মাদক কারবারি। সে নিজেও সব সময় নেশাগ্রস্ত থাকে। এলাকায় ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। এলাকার যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে ফরহাদ। শুধু মাদক ব্যবসা নয়, সে সবসময় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করে। এ কারণে এলাকার সবাই সব সময় ভয়ে থাকে।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম রেজা বিপ্লব বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ফরহাদের বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সরকি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই ফরহাদ পলাতক রয়েছে। তাকে আটকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে অভিযুক্ত ফরহাদ মাতুব্বর ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। মোবাইলে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রিন্ট