ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ঈদে বাড়ি ফিরতেই হবে!

সামনে ঈদ। ফিরতে হবে বাড়ি। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান অপেক্ষায় পথচেয়ে বসে আছে বাড়িতে। নতুন জামা-কাপড় নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। এদিকে প্রিয়জনের টানে কংক্রিটের নগরীতে শ্বাস আটকে আসা জীবন থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়ে ঈদকে সামনে রেখে বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী। নাড়ির টান কোনো বাধা মানে না।

হঠাৎ করেই ফেরি বন্ধের ঘোষণার খবর না পেয়ে হাজার হাজার যাত্রী শনিবার ভোরে এসে ভিড় জমায় শিমুলিয়া ঘাটের পদ্মার পাড়ে। অথচ ফেরি ছাড়ছে না। রোদের তাপ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে অস্থিরতা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সাধারণ যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্স ও ছোট গাড়ির সংখ্যাও।

ঠিক একই চিত্র শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটেও। প্রয়োজনীয় কাজে ঢাকাগামী যাত্রীর সংখ্যাও এ ঘাটে হাজার হাজার। একই সাথে ভোর থেকেই ঘাট এলাকায় দেখা যায় বেশ কিছু রোগীসহ অ্যাম্বুলেন্স, কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি, রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকও। ভোর থেকে ফেরি ছাড়ার অপেক্ষায় ঘাটের পল্টুনে অপেক্ষা করে হাজার হাজার যাত্রী। ফেরিঘাটের রাস্তায় বাড়তে থাকে গাড়ির সিরিয়াল। ফেরি ছাড়বে কিনা তখনো জানা নেই কারও।

যাত্রীচাপে সকাল ৯টার দিকে একটি রো-রো ফেরি সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। দুপুর ১টার দিকে ফেরিটি শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে নোঙর করে।

এছাড়াও বাংলাবাজার ঘাট থেকে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি কিছু গাড়ি পার করার জন্য একটি ফেরি পন্টুনে প্রস্তুত করলে প্রায় এক হাজার যাত্রী ফেরিটিতে উঠে যায়। পরে ঘাট কর্তৃপক্ষ কিছু যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স পার হবার ব্যবস্থা করে দেয়। কুমিল্লা নামের মিডিয়াম ফেরিটি দুপুরের দিকে শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে যায় বলে ঘাট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় পদ্মা পার হয়ে আসা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে। বাস বন্ধ, কয়েকটি মাইক্রোবাস রয়েছে। এছাড়া থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্রা ও ইজিবাইক) ও মোটরসাইকেল রয়েছে ঘাটে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা যাত্রীরা ঘাট এলাকায় এসে গাড়ি না পেয়ে বিপাকে পড়েছে।

মাইক্রোবাসে বরিশালের জন্য নিচ্ছে ১ হাজার করে টাকা আর মোটরসাইকেলে নিচ্ছে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। এছাড়াও দূরপাল্লায় থ্রি-হুইলার সাধারণত যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ঘাটে গাড়ির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।

ফুলঝুড়ি বেগম নামের খুলনার এক যাত্রী বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে ভোরে এসেছি। আর দুপুরে এসে পৌঁছালাম বাংলাবাজার ঘাটে। ফেরি ছাড়বে না ছাড়বে না করে একটা ফেরি ছাড়ল হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে। এখন এই পাড়ে এসে তো বাড়ি যাওয়ার গাড়ি পাচ্ছি না। বাস তো বন্ধই। মাইক্রোবাসও নাই। অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কীভাবে বাড়ি যাব জানি না। রোজা রেখে এত কষ্ট সহ্য করা যায় না।

ইদ্রিস ফকির নামের গোপালগঞ্জের এক যাত্রী বলেন, ঘাটে কোনো গাড়ি নাই। তিন চাক্কার গাড়িতে এতদূরে যাওয়াও ঝুঁকি। তারপরও মাহিন্দ্রা (থ্রি-হুইলার) ঠিক করেছি তিনগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে।

মো. ইব্রাহিম আকন নামের ভাঙ্গাগামী যাত্রী বলেন, ঈদের আগে বাড়ি যেতে হয়। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। আজকে পদ্মা পার হতে যে দুর্ভোগ হয়েছে তার এই জীবনে হয় নাই। সরকারি সিদ্ধান্তের কোনো কিছুই বুঝি না। ফেরি চলবে না তা একদিন আগেই জানিয়ে দিতো। আবার বন্ধ ঘোষণার পরও তো ফেরি চলেছে। এদিকে মার্কেট খোলা। ঢাকায় গাড়ি চলছে। অথচ দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ। ঘাটে নেমে একশ’ টাকার ভাড়া পাঁচশ’ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া আরো দূরের যাত্রীরা তো গাড়িই পাচ্ছে না।

বাংলাবাজার ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাবাজার ঘাট থেকে কুমিল্লা নামের একটি ফেরি গাড়ি ও যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে শিমুলিয়ার উদ্দেশে। এর পরেই শাহ পরান নামের একটি রো-রো ফেরি যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে যায়।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি গাড়ি পার করার জন্য ফেরি খুলে দিলে যাত্রীরা গিয়ে উঠে পড়ে। ঘাট এলাকায় অসংখ্য যাত্রী রয়েছে। তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ক্রিটিক্যাল রোগীদের পার হওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে সকালে একটি ফেরিতে উঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যাত্রীদের চাপে ব্যর্থ হলে ফেরিটি বন্ধ রাখা হয়। পরে চেষ্টা করে ঘাটে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে পার করা হয়েছে। তবে এরপরই যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় একটি রো-রো ফেরি যাত্রীদের নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে গেছে বলে আমি জানতে পেরেছি। তবে এ বিষয়ে ফেরি কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা হয়তো বিআইডব্লিটিসির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেরিটি ছেড়েছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

ঈদে বাড়ি ফিরতেই হবে!

আপডেট টাইম : ১১:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মে ২০২১
ডেস্ক রিপোর্টঃ :

সামনে ঈদ। ফিরতে হবে বাড়ি। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান অপেক্ষায় পথচেয়ে বসে আছে বাড়িতে। নতুন জামা-কাপড় নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। এদিকে প্রিয়জনের টানে কংক্রিটের নগরীতে শ্বাস আটকে আসা জীবন থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়ে ঈদকে সামনে রেখে বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী। নাড়ির টান কোনো বাধা মানে না।

হঠাৎ করেই ফেরি বন্ধের ঘোষণার খবর না পেয়ে হাজার হাজার যাত্রী শনিবার ভোরে এসে ভিড় জমায় শিমুলিয়া ঘাটের পদ্মার পাড়ে। অথচ ফেরি ছাড়ছে না। রোদের তাপ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে অস্থিরতা। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সাধারণ যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্স ও ছোট গাড়ির সংখ্যাও।

ঠিক একই চিত্র শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটেও। প্রয়োজনীয় কাজে ঢাকাগামী যাত্রীর সংখ্যাও এ ঘাটে হাজার হাজার। একই সাথে ভোর থেকেই ঘাট এলাকায় দেখা যায় বেশ কিছু রোগীসহ অ্যাম্বুলেন্স, কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি, রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকও। ভোর থেকে ফেরি ছাড়ার অপেক্ষায় ঘাটের পল্টুনে অপেক্ষা করে হাজার হাজার যাত্রী। ফেরিঘাটের রাস্তায় বাড়তে থাকে গাড়ির সিরিয়াল। ফেরি ছাড়বে কিনা তখনো জানা নেই কারও।

যাত্রীচাপে সকাল ৯টার দিকে একটি রো-রো ফেরি সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। দুপুর ১টার দিকে ফেরিটি শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে নোঙর করে।

এছাড়াও বাংলাবাজার ঘাট থেকে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি কিছু গাড়ি পার করার জন্য একটি ফেরি পন্টুনে প্রস্তুত করলে প্রায় এক হাজার যাত্রী ফেরিটিতে উঠে যায়। পরে ঘাট কর্তৃপক্ষ কিছু যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স পার হবার ব্যবস্থা করে দেয়। কুমিল্লা নামের মিডিয়াম ফেরিটি দুপুরের দিকে শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে যায় বলে ঘাট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় পদ্মা পার হয়ে আসা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে। বাস বন্ধ, কয়েকটি মাইক্রোবাস রয়েছে। এছাড়া থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্রা ও ইজিবাইক) ও মোটরসাইকেল রয়েছে ঘাটে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা যাত্রীরা ঘাট এলাকায় এসে গাড়ি না পেয়ে বিপাকে পড়েছে।

মাইক্রোবাসে বরিশালের জন্য নিচ্ছে ১ হাজার করে টাকা আর মোটরসাইকেলে নিচ্ছে ১ হাজার ৫শ’ টাকা। এছাড়াও দূরপাল্লায় থ্রি-হুইলার সাধারণত যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ঘাটে গাড়ির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।

ফুলঝুড়ি বেগম নামের খুলনার এক যাত্রী বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে ভোরে এসেছি। আর দুপুরে এসে পৌঁছালাম বাংলাবাজার ঘাটে। ফেরি ছাড়বে না ছাড়বে না করে একটা ফেরি ছাড়ল হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে। এখন এই পাড়ে এসে তো বাড়ি যাওয়ার গাড়ি পাচ্ছি না। বাস তো বন্ধই। মাইক্রোবাসও নাই। অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কীভাবে বাড়ি যাব জানি না। রোজা রেখে এত কষ্ট সহ্য করা যায় না।

ইদ্রিস ফকির নামের গোপালগঞ্জের এক যাত্রী বলেন, ঘাটে কোনো গাড়ি নাই। তিন চাক্কার গাড়িতে এতদূরে যাওয়াও ঝুঁকি। তারপরও মাহিন্দ্রা (থ্রি-হুইলার) ঠিক করেছি তিনগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে।

মো. ইব্রাহিম আকন নামের ভাঙ্গাগামী যাত্রী বলেন, ঈদের আগে বাড়ি যেতে হয়। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। আজকে পদ্মা পার হতে যে দুর্ভোগ হয়েছে তার এই জীবনে হয় নাই। সরকারি সিদ্ধান্তের কোনো কিছুই বুঝি না। ফেরি চলবে না তা একদিন আগেই জানিয়ে দিতো। আবার বন্ধ ঘোষণার পরও তো ফেরি চলেছে। এদিকে মার্কেট খোলা। ঢাকায় গাড়ি চলছে। অথচ দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ। ঘাটে নেমে একশ’ টাকার ভাড়া পাঁচশ’ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া আরো দূরের যাত্রীরা তো গাড়িই পাচ্ছে না।

বাংলাবাজার ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাবাজার ঘাট থেকে কুমিল্লা নামের একটি ফেরি গাড়ি ও যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে শিমুলিয়ার উদ্দেশে। এর পরেই শাহ পরান নামের একটি রো-রো ফেরি যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে যায়।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি গাড়ি পার করার জন্য ফেরি খুলে দিলে যাত্রীরা গিয়ে উঠে পড়ে। ঘাট এলাকায় অসংখ্য যাত্রী রয়েছে। তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ক্রিটিক্যাল রোগীদের পার হওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে সকালে একটি ফেরিতে উঠানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যাত্রীদের চাপে ব্যর্থ হলে ফেরিটি বন্ধ রাখা হয়। পরে চেষ্টা করে ঘাটে আটকে থাকা অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে পার করা হয়েছে। তবে এরপরই যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় একটি রো-রো ফেরি যাত্রীদের নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে গেছে বলে আমি জানতে পেরেছি। তবে এ বিষয়ে ফেরি কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা হয়তো বিআইডব্লিটিসির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেরিটি ছেড়েছে।


প্রিন্ট