এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মাগুরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ ১৮ জন ব্যক্তি ও সংগঠনকে তাদের ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা প্রদান করেন। আজ রোববার ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ জেলা প্রশাসকের চাঁদের হাটের কনফারেন্স রুমে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ খায়রুল আলম সেখ।
এছাড়াও চাঁদের হাটের কনফারেন্স রুমে উপস্থিত ছিলেন, মাগুরা জেলা পুলিশ সুপার মোশিউদ্দৌলা রেজা বিপিএম, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক জাহিদুল আলম সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা বৃন্দগন। ভালো কাজের নাগরিক স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মাননা পেয়েছেন ডা: সুশান্ত কুমার বিশ্বাস, ১০ম বিসিএস এ ডেন্টাল সার্জন হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১৯৮৪ সালে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর বিভিন্ন হাসপাতালে সুনামের সাথে চাকুরি জীবন সম্পন্ন করে মাগুরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে অবসর গ্রহণ করেন।
কর্মজীবনের শুরু থেকেই সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে তিনি নিজের আগ্রহে এবং তাঁর সহধর্মিনী অনিমা রায় এর ঐকান্তিক উৎসাহে সপ্তাহে একদিন নিজ গ্রামে ১০০-২০০ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং সাধ্যমত প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করছেন। এভাবে তিনি অত্র অঞ্চলে মানবতার ফেরিওয়ালা ডাক্তার নামে সুপরিচিত। তাছাড়া শত ব্যস্ততার মাঝেও কৃষির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকে তাঁর পৈতৃক জমিতে নিজ তত্ত্বাবধানে নানান সবজি ও ফল-ফসল চাষ করেন। একইসাথে তাঁর একটি দেশি-বিদেশি গরুর খামার আছে।
পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একটি তারুণ্যনির্ভর ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে ‘বিডি ক্লিন মাগুরা’ পরিচ্ছন্ন মাগুরা জেলা গড়তে ২০২১ সাল থেকে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ‘বিডি ক্লিন মাগুরা’ প্রতি সপ্তাহে একদিন জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যত্র-তত্র পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে এবং লোকজনকে যেখানে-সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলার জন্য সচেতন করে এবং জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। গত মহান বিজয় দিবস – ২০২৩ উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা নিবেদনে মাগুরা পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডে একটি ময়লার ভাগাড় পরিচ্ছন্ন করে ফুল বাগানে রূপান্তর করেন তারা।
গ্রীণ ভয়েস মাগুরা এর উদ্যোগে টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন ও বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণের জন্য বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি আত্মরক্ষা ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ, শহরে বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম, মাস্ক বিতরণ ও অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী, এক টাকায় ইফতার বিতরণ কর্মসূচী, বিভিন্ন সামাজিক দিবস উদযাপন, অসহায় পরিবারের জন্য খাদ্যশস্য সহায়তা, ধর্মীয় উৎসবে অসহায় পরিবারের জন্য নতুন পোশাক বিতরণ ইত্যাদি কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে থাকে। এছাড়া অতিমারী করোনাকালীন টিকা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনলাইনে ফ্রি আবেদন করতে প্রতিষ্ঠানটি সাহায্য করেছে।
পল্লী চিকিৎসক কাজী তাসুকুজ্জামান; চিকিৎসা পেশায় সম্পৃক্ত থেকেও মাগুরা জেলার ইতিহাস সংরক্ষণে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। শুধু ইতিহাস সংরক্ষণ ও চিকিৎসা সেবাই নয়, তিনি মানবিক আলো ছড়াচ্ছেন সমাজসেবার ক্ষেত্রেও। যেসব সমাজহিতৈষী গুণীজন সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, ধর্ম ও রাজনীতিতে বিশেষ অবদান রেখে মাগুরা তথা জাতিকে সমৃদ্ধশালী করেছেন তাঁদের সৃষ্টিশীলতা, গবেষণা ও সাফল্যগাঁথা ‘মাগুরার গৌরবময় ইতিহাস’ গ্রন্থে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করার সদিচ্ছায়। বর্তমানে তিনি ‘কাজী আব্দুল হক মেমোরিয়াল কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এবং তাঁর সহধর্মিনী ‘মাগুরা জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র’ ও মাগুরা আর্কাইভ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তালযন্ত্র শিল্পী জগদীশ অধিকারী তবলায় প্রথম হাতেখড়ি নেন সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ বাবু ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (ভোলা বাবু) এর কাছে। শিল্পী বাবু জগদীশ অধিকারী ১৯৮৩ সালে মাগুরা জেলায় তবলা প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মাগুরা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ গুণী শিল্পী ঊনচল্লিশ বছর ধরে মাগুরা উদীচী, জেলা শিশু একাডেমীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছেন। তালযন্ত্রের পাশাপাশি চারু ও কারু শিল্পী হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ভাস্কর্য নির্মাণ করে যাচ্ছেন। তিনি এমন একজন প্রতিভাবান কারু শিল্পী যিনি মাত্র এক ঘন্টায় যেকোন ভাস্কর্য তৈরী করতে পারেন।
রুমানা একজন কেঁচো সার উৎপাদনকারী উদ্যোক্তা। উপজেলা কৃষি অফিস, শ্রীপুর, মাগুরা তাঁকে সর্বপ্রথম ২০০৯ সালে বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে একটি কৃষক প্রশিক্ষণের জন্য মনোনয়ন করে। প্রদর্শনী হতে তিনি লাভবান হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে কেঁচো সার উৎপাদন চালিয়ে যান এবং প্রতিবেশীদেরকে উদ্বুদ্ধ করে ৩০ (ত্রিশ) জন নারী কেঁচো সার উৎপাদনকারী তৈরী করেন। তাঁর এ কাজে উৎসাহ দেয়ার জন্য উপজেলা কৃষি অফিস, শ্রীপুর, মাগুরা কর্তৃক অনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে পুনরায় “কমিউনিটি বেইজড ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন” নামক আরোও একটি প্রদর্শনী তৈরি করতে দেয়া হয় এবং উপকরণ হিসেবে একটি কেঁচো সেপারেটর মেশিন, একটি প্যাকেটিং মেশিন ও একটি ওজন মেশিন দেয়া হয়। যার মাধ্যমে ৩০ (ত্রিশ) জন উপকারভোগী নারী সদস্যকে নিয়ে কেঁচো সার উৎপাদনকারী একটি সমিতি গঠন করা হয়। বর্তমানে তিনি বছরে প্রায় ৩,৬০,০০০ (তিন লক্ষ ষাট হাজার) টাকা আয় করছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মাগুরা বৈশ্বিক অতিমারী করোনা চলাকালীন জনসেবামূলক বিভিন্ন ধরণের কর্মকান্ডে যুক্ত ছিল। করোনা পরিস্থিতির সময়ে করোনা আক্রান্ত জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানো এবং করোনায় যারা মৃত্যুবরণ করে তাদের লাশ বহনসহ দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক সারা দেশের ন্যায় মাগুরা জেলাতেও কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মাগুরা কর্তৃক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে মাগুরা জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী মোট ৭৯ (ঊনআশি) জনের লাশ দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন, উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে উক্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। মহান আল্লাহর নির্দেশিত বিধান বাস্তবায়ন এবং পরকালীন মুক্তির আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মচারি ও কর্মীগণ কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছেন।
মোঃ নাজমুল হাসান ২০০৬ সালে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এম.বি.এ) ডিগ্রি অর্জন করে ২০১৬ পর্যন্ত ওয়াচকম টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড (বাংলালিংক) এ কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মাগুরা সদর উপজেলাধীন ১৩ নং গোপালগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একজন সফল বাণিজ্যিক কৃষি উদ্যোক্তা। সমন্বিত কৃষি উদ্যোগের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রকার মাছ চাষ, গরুর খামার, হাসের খাঁমার, খরগোসের খামার পরিচালনাসহ তিনি ২০ (বিশ) একর জমিতে দেশি বিদেশি ফলজ ও বনজ উদ্ভিদসমৃদ্ধ একটি বাগান এবং নার্সারি পরিচালনা করছেন। এ সমন্বিত খামারে ১০-১৫ জন শ্রমিকের স্থায়ী কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। একটি ব্যতিক্রমধর্মী, অর্গানিক এবং আধুনিক কৃষি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত সমন্বিত খামারটি স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে।
স্বাধীন মূখার্জী ঝিনাইদহ জেলার বাণিজ্যিক গাঁদা ফুল চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ৩০ (ত্রিশ) শতক জমিতে ২০২০ সালে গাঁদা ফুলের চারা রোপন করেন। অতিমারী কোভিড-১৯ সংক্রমণকালে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে পারেননি ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। পরবর্তীতে নতুন উদ্যোমে ২০২৩ সালে ১০ (ত্রিশ) শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু করে এবার তিনি লাভবান হন। বর্তমানে তিনি ৬০ (ষাট) শতক জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ সম্প্রসারণ করেছেন এবং স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি উৎপাদিত গাঁদাফুল রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় বিক্রি করছেন। ফুল ক্ষেতে কাজ করে অনেকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হচ্ছে এবং তাঁর সফলতায় অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই বাণিজ্যিক ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
নাসরিন খাতুন প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০২০ সালে ৯০০ (নয়শত) সিলিন্ডার (স্পন) নিয়ে শুরু করেন মাশরুম চাষ। অদম্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রথম বছরে তিনি প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রয় করেন। পরবর্তী বছর ২০২১ সালে তিনি ৩০০০ (তিন হাজার) সিলিন্ডার (স্পন) তৈরি করে চাষ করেন, যা থেকে প্রায় ৬ (ছয়) লক্ষ টাকা আয় হয়। এরপর ২০২২ সালে ৫০০০ (পাঁচ হাজার) সিলিন্ডার (স্পন) থেকে আয় হয় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং নিজের চাষের পাশাপাশি শুরু করেন অন্যান্য মহিলাদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান। তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ১৫ (পনের) জন মাশরুম চাষী স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং মাশরুমচাষীদের মাশরুম বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তিনি সহযোগিতা প্রদান করছেন।
আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর জনাব সাহা সরজিত কুমার তাঁর দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চা ও মেধা বিকাশের সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে একজন অনুসরণীয় শিক্ষক হিসেবে সকলের কাছে সমাদৃত হন। তাঁর ০৬ (ছয়) সন্তানসহ অগণিত ছাত্র-ছাত্রী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। তাঁর ছয় সন্তানের মধ্যে ২ (দুই) জন ফার্মাসিস্ট, ২ (দুই) জন ডাক্তার, একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং একজন শিক্ষক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। সুনাগরিক তৈরিতে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা এবং নিঃস্বার্থ অবদান সমাজে সকলের কাছে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মাগুরা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়, মাগুরা ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে সর্বমোট ৮৬ (ছিয়াশি) জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার সমাজের পিছিয়ে পড়া বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মূল স্রোতধারায় আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ অনুপ্রেরণায় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়ন ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার সংকল্প নিয়ে গত ০১ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মাগুরা জেলায় প্রথম এ বিশেষ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও কারিগরি প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহপাঠ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থাপনা কমিটি ও শিক্ষক-কর্মচারীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি সুনামের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। এ বিশেষ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জাতীয় দিবসে অংশগ্রহনের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে এবং পুরস্কার অর্জন করছে। উল্লেখ্য, এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরি সিকদার এর আঁকা ছবি ইদ-উল-ফিতর ২০২২ এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইদ শুভেচ্ছা কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়টিকে মাগুরা জেলার মধ্যে অন্যতম সেরা এবং মডেল বিদ্যালয়ে রুপান্তর করা সম্ভব হবে।
- আরও পড়ুনঃ বাঘায় নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে মডেল মসজিদের কার্যক্রম শুরুঃ দুঃস্থদের চাল ও ট্রাই সাইকেল বিতরণ
মোঃ ফখরুল আলম করোনা অতিমারীর প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতে সংকটকালে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে তিনি নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন পারিবারিকভাবে ফ্রি শিক্ষার ব্যবস্থা। তিনি একটি দানবাক্স তৈরী করে গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে ঘুরে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচ যোগান। তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহার্য কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষগুলো শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা কোন শ্রেণি কক্ষ এবং চেয়ার টেবিল নেই। স্কুলটিতে তিনি ফ্রি খাবারেরও ব্যবস্থা করেন এবং এর ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় আগ্রহী হয়। তিনি মনে করেন যে, শুধুমাত্র নিজের সন্তানের কথা চিন্তা করলেই চলবে না বরং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সর্বস্তরের মানুষের ছেলে মেয়েদের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন।
দিশা বিশ্বাস ছোটবেলা থেকেই তাঁর ক্রিকেট খেলার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। খেলাধুলার জন্য মাঠের স্বল্পতা থাকায় বাড়ির আঙিনা বা খোলা কোন জায়গায় ক্রিকেট খেলতে নেমে পড়তেন। গ্রামের মেয়ে হওয়ায় অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও কখনও লক্ষ্য থেকে বিচ্যূত হননি তিনি। মাগুরাতে তিনি ক্রিকেট কোচ সৈয়দ সাদ্দাম হোসেন গোর্কী ও রাজীবুল ইসলামের অধীনে প্র্যাকটিস করতেন। ২০১৬ সালে প্লেয়ার হান্টের মাধ্যমে তিনি বিকেএসপিতে যোগ দেন। তিনি ডানহাতি ব্যাটার এবং ডানহাতি মিডিয়াম ফাস্ট বোলার হিসেবে অলরাউন্ড নৈপুণ্য প্রদর্শন করে থাকেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলে সুযোগ পান এবং ২০২৩ সালে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ নারী দলের অধিনায়ক হিসেবে সাউথ আফ্রিকায় তিনি এবং তাঁর দল দারুন পারফরমেন্স করেন। তাঁর অদম্য মানসিক শক্তি, অক্লান্ত পরিশ্রম ও অনুশীলন এবং বিকেএসপির কোচদের সঠিক পরামর্শ তাকে আজকের অবস্থানে আসতে সাহায্য করেছে।
চুমকী খাতুন ২০০৩ সালে ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশ জায়গায় মাত্র ১৩,০০০ (তের হাজার) টাকা পুঁজি নিয়ে ‘ফারুক নার্সারী’ নামে বাণিজ্যিক নার্সারী কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে ০৫ (পাঁচ) একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এ নার্সারীতে প্রায় ৩৭০ (তিনশত সত্তর) প্রজাতির বিভিন্ন বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছের চারা আছে। নার্সারীতে বর্তমানে গাছের সংখ্যা প্রায় ১,৭০,০০০ (এক লক্ষ সত্তর হাজার) টি যার মধ্যে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গাছের চারা রয়েছে। নার্সারীতে চারা উৎপাদন ও বিক্রয়ের মাধ্যমে তাঁরা সাবলম্বী হয়েছেন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী তৈরি করেছেন। জনাব মোছাঃ চুমকী খাতুনের নার্সারীতে বর্তমানে ০৭ (সাত) জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন।
ছোটবেলা থেকেই কঠোর পরিশ্রমী সুশেন কুমার বালা অন্যের জমিতে ধান, পাট, গম ইত্যাদি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরবর্তীতে নিজের জমিতে আধুনিক চাষপদ্ধতি অনুসরণ করে উন্নত জাতের শাক-সবজি, রঙিন ফুলকপি (জাত-Cauliflower Hybrid Carotena, Cauliflower Hybrid Valentena), ব্রকলি, লেটুস পাতা, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি ফসল উৎপাদন ও বিপননের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হন। জেলা প্রশাসন, মাগুরা ও উপজেলা কৃষি অফিস, শ্রীপুর এর তত্ত্বাবধানে উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন ও বিপননের জন্য প্রয়োজনীয় সার, বীজ সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তিনি উন্নত মানের শাক-সবজি চাষ সম্প্রসারণ এবং অন্যান্য কৃষক-কৃষাণীকে নিরাপদ সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি শাক-সবজির চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নতমানের রপ্তানীযোগ্য ফল-ফলাদির চাষ করার পরিকল্পনা করছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে লিচু, আম, কমলা, আপেলকুল বরই, ড্রাগন, পেয়ারা, স্ট্রবেরি ইত্যাদি।
আব্দুল্লাহ এর ছাত্রজীবনে সাপ্তাহিক ‘পল্লীবার্তা’ পত্রিকায় তাঁর সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয়। একজন সাহসী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত জনাব আব্দুল্লাহ ওয়াজেদ ‘কুমার’ নদের উপর স্থাপিত বাঁধ কাটা নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারে সাথে স্থানীয় জনগণের সংঘর্ষে ০৯ (নয়) জন চাষীর মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ করায় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন। পরবর্তীতে খুলনার তৎকালীন জনপ্রিয় ‘সাপ্তাহিক দেশের ডাক’ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বাঙালীদের স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে সমর্থন জানিয়ে উক্ত পত্রিকায় সম্ভাব্য বাংলাদেশের মানচিত্র ছাপা হলে পাকিস্তানিরা ঐ পত্রিকাটির ছাপাখানা জ্বালিয়ে দেয়। তিনি ‘দৈনিক দেশ’সহ বিভিন্ন পত্রিকায় উচ্চ পদে কর্মরত ছিলেন। তৎকালীন চীনা প্রেসিডেন্ট Dong Biwu এর ঢাকা সফরের সময়ে, চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের উপর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে তিনি বিশেষভাবে আলোচিত হন। বাঙালীদের স্বাধিকার আদায়ের বিভিন্ন পর্যায়ে জনমত গঠন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে জনগণের কাছে প্রকৃত সত্য প্রকাশে তিনি সর্বদা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
মোঃ রহুল আমিন দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে ২০১২ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহম্মদপুর থেকে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালনসহ প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য এবং কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা শুরু করেন এবং অর্জিত মুনাফা দিয়ে ডেইরি ফার্ম নির্মাণ করে দুগ্ধ উৎপাদন ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি ০৩ (তিন) একর জমিতে মৎস্য চাষ করছেন। স্থানীয় বাজারে তিনি একটি কুঁড়া ও পালিশ মিল স্থাপন করেছেন। বর্তমানে তাঁর অধীনে ২২ জন শ্রমিক কর্মরত আছেন, এছাড়া তিনি গ্রামের অনেক বেকার যুবককে খামার স্থাপন করে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছেন। এই সমস্ত উদার ও ভালো মনের ব্যক্তি বর্গদের কাছে পেয়ে জেলা প্রশাসন সম্মাননা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
প্রিন্ট