ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা বারাংকুলা জে এস দাখিল মাদরাসা সুপার এম এ শাহিদ মিয়াকেঅপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী, মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সদস্যবৃন্দ।
রোববার সকালে মাদরাসার সামনের সড়কে প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী সময় ধরে এ কর্মসূচী পালন করা হয়।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নিয়ে অভিভাবক সদস্য মতিয়ার রহমান শেখ, আসাদুজ্জামান,শিক্ষক ওসমান গণি ও এলাকাবাসীর পক্ষে আব্দুল্লা মোল্যা বলেন,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বই ক্রয়, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা এবং শৌচগার-কমনরুম সংস্কারের নামে মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল। এই টাকা থেকে তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের টাকা কম দিয়েছেন। এছাড়া শৌচগার-কমনরুমের নামমাত্র সংস্কার কাজ করিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিভাবক সদস্য আসাদুজ্জামান বলেন, ১৫ জন গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য আর্থিক অনুদান হিসেবে ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। ছাত্র-ছাত্রী জন প্রতি ৫০০০ টাকা বরাদ্দের তালিকা করেছেন মাদরাসা সুপার। তিনি ১০ জনকে দুই হাজার ও পাঁচ জনকে দুই হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে পাঁচ হাজার টাকার ঘরে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিবন্ধী বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সহায়তা ব্যয় ৫০ হাজার টাকা তিনটি হুইল চেয়ারক্রয় করেছেন ২৪ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা ২৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সুপারের সকল অপকর্ম করার সহযোগীতা করেছেন মাসদারা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মানছুর আলী। এজন্য সভাপতির অনাস্থা চেয়ে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর পরিচালনা কমিটির ছয়জনের স্বাক্ষরিত একটি দরখাস্তজমা দিয়েছি গত ২৫ জানুয়ারী।
অন্য সদস্য মতিয়ার রহমান শেখ বলেন, বই পত্র লাইব্রেরী শিক্ষা উপকরণ এবং গবেষণা সরঞ্জাম ক্রয় বাবদ বরাদ্দ এসেছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ খাতে ব্যয় করেছেন ৯১ হাজার টাকা। ৫৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়াও মাদরাসার ভবন সংস্কার ও বিশুদ্ধ পানি, শৌচগার উন্নয়নে বরাদ্দকৃত টাকা এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। ৬০ হাজার টাকা ব্যয় করে ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মাদরাসার শিক্ষক ওসমাণ গণি বলেন, আমাদের শিক্ষকদের জন্য প্রমোদনা এসেছে এক লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে গড়ে আট হাজার টাকা। সেখানে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আট হাজার টাকার ঘরে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। আমরা মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আমাদের নিরুপায় হয়ে স্বাক্ষর করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমাদের পক্ষ থেকে সুপারকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আমাদের বলে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে রাজনীতি করছি। তিনি আমাদের হুমকি প্রদান করেন। আমরা ১১জন শিক্ষক কর্মচারী সমন্বয়ে সুপারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মানসুর আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নিয়ম মেনে কাজ করা হয়েছে। অনস্থার বিষয়ে বলেন, বোর্ড সভাপতির অনুমোদন দেয়। তাঁরা আমার বিরুদ্ধে বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে সুনেছি। বোর্ড যাচাই-বাছাই করে দেখুক আমার অপরাধ কি? যদি আমি অপরাধী হই তাহলে অপসারণ করবে।
মাদরাসা সুপার এম এ শাহিদ মিয়া সমকালকে জানান,তাঁর বিরুদ্ধে এলাকাবাসী ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। সব কাজ নিয়ম মেনে করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর করা তিনটি মামলা এখনও আদালতে চলমান আছে।
তিনি বলেন, সরকার থেকে ২০২২ সালে বিভিন্ন খাতে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে এ মাদরাসা উন্নয়নে। আমরা সেটা ২০২৩ সালে পেয়েছি। কিছু কাজ এখনও চলমান রয়েছে। এছাড়া অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বরাদ্দের ৭৫ হাজার টাকা ১৫ জনের মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে কয়েকজনের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে অসহায় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বন্টন করা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষকদের মধ্যে তিনজন শিক্ষক টাকা পাওয়ার আওতায় বাহিরে ছিলেন, অন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে কিছু টাকা কর্তন করে ওই তিনজনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোজ্জাম্মেল হক সমকালকে জানান, মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিন্ট