ঢাকা , বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল পানি জরিপে পদ্মায়

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নীচে এখন ধু ধু বালুর চর। চলতি বছর জানুয়ারির শুরুতেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি’র প্রবাহ কমেছে।

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের ১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গঙ্গার পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেছেন। পদ্মা নদীর পাবনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের অন্তত ৬টি পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন তারা। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে নির্ধারিত হয় উভয় পরে সম্মতিক্রমে গৃহীত ফর্মুলা মোতাবেক ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে দুই দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে ঐতিহাসিক গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি কার্যকরের ২৭তম বছর শুরু হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ দিন (১-১০ জানুয়ারি) গড়ে পানি পাওয়া গেছে ৬৩ হাজার ১১৩ কিউসেক। মাঝের ১০ দিন (১১ থেকে ২০ জানুয়ারি) গড়ে পানি প্রবাহ ছিল ৪৮ হাজার ৫১৮ কিউসেক। এই ১০ দিনে প্রবাহ কমেছে ৪ হাজার ৫৯৫ কিউসেক। প্রথম ১০ দিন নদীর গভীরতা ছিল গড়ে ১৬ দশমিক ৩৭ মিটার। গত ১০ দিনে গভীরতা কমেছে দশমিক ৮৫ মিটার। প্রথম ১০ দিন মোট পানিপ্রবাহ ছিল ৬ লাখ ৩১ হাজার ১২৭ কিউসেক এবং দ্বিতীয় ১০ দিনে সেই প্রবাহ হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৮২ কিউসেক। গত ১০ দিনে প্রবাহ কমেছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৫ কিউসেক। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, গঙ্গার উজানে ভারত চুক্তি অনুযায়ী পানি না ছেড়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলেই ভাটিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটায় বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গঙ্গার পানির ওপর নির্ভরশীল এলাকাগুলোতে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পে সৃষ্টি হয়েছে বিড়ম্বনা। ভারত-বাংলাদেশের পানি প্রবাহের যৌথ পর্যবেক্ষণ চলবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাঁচাতে হলে পদ্মায় পানি লাগবে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মার পানি ধরে রাখতে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের যে পরিকল্পনা ছিল সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্ষা মৌসুমে ব্যারেজে পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে। ঐতিহাসিক ওই পানি চুক্তিতে গঙ্গার পানি বণ্টনের সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। সেখানে শুষ্ক ও ভরা মৌসুমে ভারত-বাংলাদেশ কোন প্রক্রিয়ায় কতটুকু পানি ভাগাভাগি করবে তার গ্যারান্টি কজ রয়েছে।

যৌথ নদী কমিশন সূত্র জানায়, প্রতিবারের মতো এ বছরও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারি থেকে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট ও ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে পানি পর্যবেক্ষণ শুরু করছেন যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা। প্রথম দুই মাস ভারতের পক্ষে পানি পর্যবেক্ষণ করবেন দেশটির পানি কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অঙ্কিত দুদেজা ও সহকারী পরিচালক মুকেশ কুমার শর্মা। বাংলাদেশের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম।

জেআরসি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি পরিমাপ করা হয় ৭৮ হাজার ২৪৪ কিউসেক, ২০২২ সালে ১ জানুয়ারি পানি পরিমাপ করা হয় ১ লাখ ১৮ হাজার ২০ কিউসেক, ২০২৩ সালে পানির পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৭৩০ কিউসেক ও ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি পানির পরিমাপ করা হয় ৭৫ হাজার ৪০৯ কিউসেক।
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল পানি জরিপে পদ্মায়

আপডেট টাইম : ০২:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নীচে এখন ধু ধু বালুর চর। চলতি বছর জানুয়ারির শুরুতেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি’র প্রবাহ কমেছে।

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের ১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গঙ্গার পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেছেন। পদ্মা নদীর পাবনা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের অন্তত ৬টি পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন তারা। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে নির্ধারিত হয় উভয় পরে সম্মতিক্রমে গৃহীত ফর্মুলা মোতাবেক ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে দুই দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, গত ১ জানুয়ারি থেকে ঐতিহাসিক গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি কার্যকরের ২৭তম বছর শুরু হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ১০ দিন (১-১০ জানুয়ারি) গড়ে পানি পাওয়া গেছে ৬৩ হাজার ১১৩ কিউসেক। মাঝের ১০ দিন (১১ থেকে ২০ জানুয়ারি) গড়ে পানি প্রবাহ ছিল ৪৮ হাজার ৫১৮ কিউসেক। এই ১০ দিনে প্রবাহ কমেছে ৪ হাজার ৫৯৫ কিউসেক। প্রথম ১০ দিন নদীর গভীরতা ছিল গড়ে ১৬ দশমিক ৩৭ মিটার। গত ১০ দিনে গভীরতা কমেছে দশমিক ৮৫ মিটার। প্রথম ১০ দিন মোট পানিপ্রবাহ ছিল ৬ লাখ ৩১ হাজার ১২৭ কিউসেক এবং দ্বিতীয় ১০ দিনে সেই প্রবাহ হয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ১৮২ কিউসেক। গত ১০ দিনে প্রবাহ কমেছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪৫ কিউসেক। দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন করেছেন।
জানা গেছে, গঙ্গার উজানে ভারত চুক্তি অনুযায়ী পানি না ছেড়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলেই ভাটিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটায় বিরূপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গঙ্গার পানির ওপর নির্ভরশীল এলাকাগুলোতে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পে সৃষ্টি হয়েছে বিড়ম্বনা। ভারত-বাংলাদেশের পানি প্রবাহের যৌথ পর্যবেক্ষণ চলবে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাঁচাতে হলে পদ্মায় পানি লাগবে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মার পানি ধরে রাখতে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের যে পরিকল্পনা ছিল সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্ষা মৌসুমে ব্যারেজে পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে। ঐতিহাসিক ওই পানি চুক্তিতে গঙ্গার পানি বণ্টনের সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। সেখানে শুষ্ক ও ভরা মৌসুমে ভারত-বাংলাদেশ কোন প্রক্রিয়ায় কতটুকু পানি ভাগাভাগি করবে তার গ্যারান্টি কজ রয়েছে।

যৌথ নদী কমিশন সূত্র জানায়, প্রতিবারের মতো এ বছরও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারি থেকে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট ও ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে পানি পর্যবেক্ষণ শুরু করছেন যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা। প্রথম দুই মাস ভারতের পক্ষে পানি পর্যবেক্ষণ করবেন দেশটির পানি কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অঙ্কিত দুদেজা ও সহকারী পরিচালক মুকেশ কুমার শর্মা। বাংলাদেশের ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম।

জেআরসি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি পরিমাপ করা হয় ৭৮ হাজার ২৪৪ কিউসেক, ২০২২ সালে ১ জানুয়ারি পানি পরিমাপ করা হয় ১ লাখ ১৮ হাজার ২০ কিউসেক, ২০২৩ সালে পানির পরিমাণ ছিল ৯০ হাজার ৭৩০ কিউসেক ও ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি পানির পরিমাপ করা হয় ৭৫ হাজার ৪০৯ কিউসেক।