মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের পানিঘাটা গ্রামের একটি মাঠ থেকে দুই ভাইয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত দুই ভাই হলেন সবুজ (২৫) ও হৃদয (১৮)। তারা পানিঘাটা এলাকার মঞ্জুর মোল্লার ছেলে। সবুজ পেশায় একজন কৃষক এবং হৃদয় এসএসসি পরীক্ষার্থী। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে এই হত্যাকান্ড হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দুইজন কে আটক করেছে। দুই সহোদরের মর্মান্তিক এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় বাড়িতে চলছে কান্নার আহাজারি এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া ।
পুলিশ এবং স্থানীয়রা জানান, রবিবার সকালে পানিঘাটা গ্রামের কয়েকজন কৃষক মাঠে কাজ করতে গিয়ে দুইজনের লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়ে থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মাগুরার পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌজা রেজা এবং সার্কেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার আভিযোগে পুলিশ বিপ্লব ও হাসিব নামের দুই যুবককে আটক করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের দ্বন্ধে এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল সিদ্দিকী লিটন এবং স্থানীয় ইউপি তোরাফে হোসেন মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে এই দ্ব›দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। শনিবার নহাটা হাইস্কুল মাঠে তোরাফ হোসেনের নেতৃত্বে নৌকা প্রতীক প্রাপ্ত স্থানীয় এমপি ড. শ্রী বীরেন শিকদার কে নিয়ে একটি নির্বাচনী জনসভা করেন। যে অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোস্তফা কামাল এবং প্রতিপক্ষ স্থানীয় আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাদের বাদ রেখে তিনি ওই জনসভা করেন। পাল্টা কর্মসূচী হিসাবে মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে ড. শ্রী বীরেন শিকদার কে উপস্থিত রেখে আজ রবিবার বিকেলে আরেকটি নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এই অনুষ্ঠানকে পন্ড করতে এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এই হত্যাকান্ড সংঘঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নিহত দুই সহোদরের বড় ভাই আবুল কালাম এবং সেজভাই আব্দুল্লাহ বলেন, গতকাল রাত আটটার দিকে তাদের বাড়িতে এসে সবুজ ও হৃদয়কে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশী ফারুক শিকদারের ছেলে বিপ্লব ও হাসিব। তাদের জন্য গভীর রাত প্রর্যন্তু বাড়ির সবাই অপেক্ষার পর ফিরে না আসায় ফোন করলে সবুজের ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং হৃদয়ের ফোন কল ঢুকলেও রিসিভ না করায় দু:শ্চিন্তায় পড়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাদের সন্ধান না পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। সকালে পাশর্^বর্ত্বী ক্ষেতে দুই ভাইয়ের গলাকাটা লাশের সন্ধান পেয়ে বাড়িতে নেমে আসে শোকের ছায়া। দুই সহোদরের মা শাহানারা খাতুন এবং বাবা মঞ্জুর মোল্যা বলেন এটি পরিকল্পিত হত্যাকন্ড।ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. তোরাফ হোসেন বলেন, হত্যাকান্ডের কারন সম্পকে আমি অভিহিত নই। মোস্তাফা কামাল সিদ্দিকী লিটন বলেন, আমার নির্বাচনী জনসভাকে পন্ড করতে প্রতিপক্ষ তোরাফ চেয়ারম্যান পরিকল্পিতভাবে আমার দুই আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করেছে।
- আরও পড়ুনঃ নড়াইলে জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত
মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বোরহান উল ইসলাম বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।
প্রিন্ট