কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনে এক জোট হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জোটের স্বার্থে এই আসনে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ইনুর পক্ষে ভোট করলেও এবার তাঁরা আর ‘ভাড়া খাটতে’ চান না।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের অনড় অবস্থানের কারণে জাসদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। কামারুল মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র থেকে এমপি প্রার্থী হয়েছেন।
এখন পর্যন্ত কুষ্টিয়া-২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি আওয়ামী লীগ। ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে এখানে জোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হতে পারে—এটি অনেকটা নিশ্চিত। এই আসনে কামারুল আরেফিন ছাড়াও ৯ জন প্রার্থী মাঠে আছেন।
শেষ পর্যন্ত কামারুল ভোটের মাঠে থাকলে নৌকার প্রার্থীর জন্য ভোটের সমীকরণ বেশ জটিল হবে। ভোটাররা বলছেন, ভোটের মাঠে মূল খেলোয়াড় কামারুল নিজেই প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে নিয়ে জাসদের ইনু এখন বিপাকে। এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে জাসদ নেতা-কর্মীদের মধ্যে। ভেড়ামারা উপজেলায় জাসদ কিছুটা সক্রিয় থাকলেও মিরপুরে ঝিমিয়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগ ও জাসদের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত জাতীয় তিনটি নির্বাচনে কামারুল নৌকাকে জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা ইনুর পক্ষে কাজ করেছেন। এবার তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, তাঁরা আর জাসদের হয়ে ভাড়া খাটবেন না, নিজেদের প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন।
বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নৌকা প্রতীকে জোট প্রার্থী হাসানুল হক ইনুর পক্ষে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সে সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা নেই। বরং শুরুর দিকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে।
এবার আর অন্যের জন্য ঘাম ঝরাতে রাজি নন আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফিন। তিনি প্রতিদিন ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ শান্তি সমাবেশ করছেন। সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। এসব সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো।
এমনকি জাসদের মূল ঘাঁটি ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রামেও কামারুল বেশ বড় শান্তি সমাবেশ করেছেন। দুটি উপজেলাতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কামারুলের নেতা-কর্মীরা। কামারুলকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারাও তাঁদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
এ পরিস্থিতিতে জাসদ নেতাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে! তাঁরা এখন কামারুলকে বাগে আনতে প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন।
মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আলী বলেন, ‘কামারুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণে নেতা-কর্মীদের মাঝে কিছুটা সংশয় কাজ করছে। বিষয়টির সমাধান না হলে কী হবে সেটা বলা মুশকিল। আমরাও বিষয়টি নিয়ে ভাবছি, কীভাবে সমাধান করা হয়।
এ নিয়ে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী কামারুল আরেফিন। তাঁর জন্য দলের নেতা-কর্মীরা এক হয়ে কাজ করবে। আমরা কারও পক্ষে আর ভাড়া খাটতে রাজি নই। আমাদের সংগঠন বাঁচাতে হলে নিজেদের এমপি প্রয়োজন।
জেলা জাসদ সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, ‘হাসানুল হক ইনু যদি ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পান, তাহলে নৌকার নেতা-কর্মীরা তাঁর পক্ষে কাজ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল সক্রিয় থাকায় নেতা-কর্মীদের মাঝে অন্য রকম বার্তা যাচ্ছে।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আমার ওপর কোনো চাপ নেই, বরং সকলে উৎসাহ দিচ্ছে। উনি (হাসানুল হক ইনু) জাতীয় নেতা, নৌকা প্রতীক পেলে উনি নির্বাচন করবেন, আমিও জনতার নেতা হয়ে মাঠে থাকব।
প্রিন্ট