ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

স্বপ্নের সেতু এখন বিনোদন স্পট

সরকারি সাড়া না পেয়ে গ্রামবাসীরা ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করেন যা দেশের তৃতীয় ভাসমান সেতু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

দেশের তৃতীয় ভাসমান সেতু হচ্ছে ফরিদপুরের টিটা ভাসমান সেতু যেটি আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দসহ ছয়টি ইউনিয়নের ১২ হাজার মানুষের স্বপ্ন পূরণের নাম।

মধুমতি নদীর বাওরের উপর নির্মিত সাড়ে ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ্য ভাসমান সেতুটি গ্রামবাসীরা নিজ উদ্যোগে ও অর্থায়নে তৈরি করেছেন।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নসহ আশপাশের ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছে একটি ভাসমান সেতু। ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ জেলা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার শত শত মানুষ এসে ভিড় জমায় সেতুটি দেখতে।

এলাকাবাসীর ভোগান্তি লাঘবের পাশাপাশি ভাসমান সেতুটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়ে ওঠেছে। সেতুটি ঘিরে আশপাশে গড়ে ওঠেছে দোকানপাট, ভাসমান ফুর্ড কর্ণারসহ স্থায়ীভাবে নানা ধরনের খাবারের দোকান। যদিও করোনা মহামারির কারণে দর্শনার্থীদের ভিড় কম তবুও থেমে নেই। আগে যেখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটতো এখন সেখানে শত শত মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

মধুমতি নদীর বাঁওড়ের ওপর নির্মাণ করা এ সেতুটি পৌনে ৯ হাজার ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া। ভাসমান সেতুটি গ্রামের মানুষের নিজ উদ্যোগে তৈরি করা হয়। এতে অবশ্য ৫২ জন ব্যক্তি আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। আর সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এখানে একটি সেতু নির্মাণের। কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেলেও সেই দাবি পূরণ হয়নি কয়েক গ্রামের মানুষের। এছাড়া শিশু ও শিক্ষার্থীরা পারাপারে অসুবিধার সম্মুখীন হতেন। এতে অর্থ ও সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হতেন সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, উপজেলার ১০টি গ্রামের প্রায় হাজার পনের মানুষ প্রতিদিন এ শাখা নদের (বাঁওড়) মধ্য দিয়ে নৌকায় পারাপার হতেন। এতে কৃষিপণ্য ও নানা ধরনের মালামাল নিয়ে পার হতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হতো। তাই টিটা, টিটা পানাইল, পানাইল, শিকারপুর, ইকরাইল ও কুমুরতিয়া গ্রামের লোকজন মিলে একটি ভাসমান সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রক্রিয়ায় অর্থ সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেন এলাকার প্রায় ৫২ জন ব্যক্তি। এছাড়া অসংখ্য মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় ভাসমান সেতুটি নির্মাণের পর গত বছরের ২৮ মার্চ উন্মুক্ত করা হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, এখানে পারাপারের জন্য মাত্র একটি খেয়া নৌকা ছিলো। এ ঘাট পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন হাজার হাজার মানুষ। এতে তাদের অর্থ ও সময় নষ্ট হতো। এ ভাসমান সেতু নির্মাণ হওয়ায় তাদের আর অপেক্ষা করতে হয় না।

টগরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইমাম হাসান শিপন জানান, এ অঞ্চলে একটি কলেজ, দুটি উচ্চবিদ্যালয়, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও পোস্ট অফিস রয়েছে। নানা প্রয়োজনে মানুষকে এখানে আসতে হয়। বহু আবেদন-নিবেদন করার পরও ওই স্থানে কোনো সেতু নির্মাণ না হওয়ায় আমরা টিটা খেয়াঘাট এলাকায় চার টন ক্ষমতাসম্পন্ন এ ভাসমান সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

তিনি আরও জানান, এ সেতু নির্মাণে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। আর এ সেতুটি ৮ হাজার ৮৫২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ। এতে ২৫০ লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৮৫২টি প্লাস্টিকের ড্রাম ও ৬০ স্টিল পাত দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতুর ওপর দিয়ে চার টন ক্ষমতাসম্পন্ন ছোট আকারের যান চলাচল করতে পারে।

তিনি বলেন, সেতুটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- এর মাঝামাঝি ১২ ফুট চওড়া ও ছয় ফুট উঁচু রাখা হয়েছে; যাতে করে সেতুর নিচ দিয়ে বাঁওড়ে যেতে নৌকা চলাচলে কোনো অসুবিধা না হয়।

 

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান বলেন, সেতুটি আমাদের আলফাডাঙ্গা উপজেলাকে ভিন্নভাবে পরিচিতি এনে দিয়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এ সেতু দেখতে আসেন। এটি একটি বিনোদনের স্পট হিসেবে পরিণত হয়েছে। পিকনিকের জন্য অনেকেই এখানে আসেন।



প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
error: Content is protected !!

স্বপ্নের সেতু এখন বিনোদন স্পট

আপডেট টাইম : ০৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২১
মোঃ ইকবাল হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ :

সরকারি সাড়া না পেয়ে গ্রামবাসীরা ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করেন যা দেশের তৃতীয় ভাসমান সেতু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

দেশের তৃতীয় ভাসমান সেতু হচ্ছে ফরিদপুরের টিটা ভাসমান সেতু যেটি আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দসহ ছয়টি ইউনিয়নের ১২ হাজার মানুষের স্বপ্ন পূরণের নাম।

মধুমতি নদীর বাওরের উপর নির্মিত সাড়ে ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ্য ভাসমান সেতুটি গ্রামবাসীরা নিজ উদ্যোগে ও অর্থায়নে তৈরি করেছেন।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নসহ আশপাশের ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের স্বপ্ন পূরণ করেছে একটি ভাসমান সেতু। ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ জেলা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার শত শত মানুষ এসে ভিড় জমায় সেতুটি দেখতে।

এলাকাবাসীর ভোগান্তি লাঘবের পাশাপাশি ভাসমান সেতুটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়ে ওঠেছে। সেতুটি ঘিরে আশপাশে গড়ে ওঠেছে দোকানপাট, ভাসমান ফুর্ড কর্ণারসহ স্থায়ীভাবে নানা ধরনের খাবারের দোকান। যদিও করোনা মহামারির কারণে দর্শনার্থীদের ভিড় কম তবুও থেমে নেই। আগে যেখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটতো এখন সেখানে শত শত মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

মধুমতি নদীর বাঁওড়ের ওপর নির্মাণ করা এ সেতুটি পৌনে ৯ হাজার ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া। ভাসমান সেতুটি গ্রামের মানুষের নিজ উদ্যোগে তৈরি করা হয়। এতে অবশ্য ৫২ জন ব্যক্তি আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। আর সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এখানে একটি সেতু নির্মাণের। কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেলেও সেই দাবি পূরণ হয়নি কয়েক গ্রামের মানুষের। এছাড়া শিশু ও শিক্ষার্থীরা পারাপারে অসুবিধার সম্মুখীন হতেন। এতে অর্থ ও সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হতেন সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, উপজেলার ১০টি গ্রামের প্রায় হাজার পনের মানুষ প্রতিদিন এ শাখা নদের (বাঁওড়) মধ্য দিয়ে নৌকায় পারাপার হতেন। এতে কৃষিপণ্য ও নানা ধরনের মালামাল নিয়ে পার হতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হতো। তাই টিটা, টিটা পানাইল, পানাইল, শিকারপুর, ইকরাইল ও কুমুরতিয়া গ্রামের লোকজন মিলে একটি ভাসমান সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রক্রিয়ায় অর্থ সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেন এলাকার প্রায় ৫২ জন ব্যক্তি। এছাড়া অসংখ্য মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় ভাসমান সেতুটি নির্মাণের পর গত বছরের ২৮ মার্চ উন্মুক্ত করা হয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, এখানে পারাপারের জন্য মাত্র একটি খেয়া নৌকা ছিলো। এ ঘাট পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন হাজার হাজার মানুষ। এতে তাদের অর্থ ও সময় নষ্ট হতো। এ ভাসমান সেতু নির্মাণ হওয়ায় তাদের আর অপেক্ষা করতে হয় না।

টগরবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইমাম হাসান শিপন জানান, এ অঞ্চলে একটি কলেজ, দুটি উচ্চবিদ্যালয়, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক ও পোস্ট অফিস রয়েছে। নানা প্রয়োজনে মানুষকে এখানে আসতে হয়। বহু আবেদন-নিবেদন করার পরও ওই স্থানে কোনো সেতু নির্মাণ না হওয়ায় আমরা টিটা খেয়াঘাট এলাকায় চার টন ক্ষমতাসম্পন্ন এ ভাসমান সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

তিনি আরও জানান, এ সেতু নির্মাণে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। আর এ সেতুটি ৮ হাজার ৮৫২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ। এতে ২৫০ লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৮৫২টি প্লাস্টিকের ড্রাম ও ৬০ স্টিল পাত দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতুর ওপর দিয়ে চার টন ক্ষমতাসম্পন্ন ছোট আকারের যান চলাচল করতে পারে।

তিনি বলেন, সেতুটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- এর মাঝামাঝি ১২ ফুট চওড়া ও ছয় ফুট উঁচু রাখা হয়েছে; যাতে করে সেতুর নিচ দিয়ে বাঁওড়ে যেতে নৌকা চলাচলে কোনো অসুবিধা না হয়।

 

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান বলেন, সেতুটি আমাদের আলফাডাঙ্গা উপজেলাকে ভিন্নভাবে পরিচিতি এনে দিয়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এ সেতু দেখতে আসেন। এটি একটি বিনোদনের স্পট হিসেবে পরিণত হয়েছে। পিকনিকের জন্য অনেকেই এখানে আসেন।



প্রিন্ট