বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মাগুরা জেলা শাখার উদ্যোগে সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, একই ধারার, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা চালুর দাবিতে আজ ১৪ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার সকাল ১১টায় সৈয়দ আতর আলী পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী শম্পা বসুর সভাপতিত্বে আলোচনা করেন মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হাকিম বিশ্বাস, নাজির আহমেদ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ কাজী নজরুল ইসলাম ফিরোজ, মাগুরা ডিইউ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক এটিএম আনিসুর রহমান, মাগুরা রেডিয়েন্ট স্কুলের পরিচালক শরীফ তেহরান টুটুল। সভা পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মাগুরা জেলা শাখার সংগঠক গোলাম পারভেজ। আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তাগণ বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও এই রাষ্ট্র তার ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বদলে টাকা যার শিক্ষা-স্বাস্থ্য তার এই নীতিতে পরিচালিত হয়েছে দেশ। শিক্ষার সংকট বহুগুণে বেড়েছে। তাই বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে আইয়ুব সরকারের যে শিক্ষা সংকোচন নীতি এদেশের ছাত্রসমাজ প্রতিহত করেছিল, তারই ‘প্রেতাত্মা’ সওয়ার হয়েছে স্বাধীন দেশের শাসকশ্রেণির উপর।
৬২’র শিক্ষা আন্দোলনের চেতনাকে পদদলিত করা হয়েছে। শরীফ কমিশন প্রণীত শিক্ষানীতি আর স্বাধীনতাত্তোর দেশে প্রণীত সবকটি শিক্ষানীতির অন্তর্গত মৌলচরিত্র এক ও অভিন্ন। নতুন মোড়কে হাজির করা হয়েছে শিক্ষার বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি। সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক সেক্যুলার বৈষম্যহীন একই ধারার গণতান্ত্রিক শিক্ষার দাবি উপেক্ষিত হয়েছে বারেবারে। শিক্ষার প্রধান ধারাই এখন বেসরকারি ধারা।
বর্তমানে দেশের মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৯৫ ভাগই বেসরকারি। শিক্ষার মর্মবস্তুকে ধ্বংস করে সিলেবাসে যুক্ত করা হয়েছে সাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণা। জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমছে প্রতিবছর। এ বছর শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের মাত্র ১১.৫৭ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে নানান পরীক্ষা-নীরিক্ষা। সম্প্রতি ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২০’ এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। কারিকুলামে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকুচিত করা হয়েছে, শিক্ষাকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে কারিগরিকরণের দিকে।
পাঠদান ও পরীক্ষাপদ্ধতিতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তা চমকপ্রদ হলেও অবকাঠামোসহ শিক্ষাব্যবস্থার খোলনলচে বদল ব্যতীত এটির প্রয়োগ নতুন করে শুধু জটিলতাই তৈরি করবে। নতুন পদ্ধতির সাপেক্ষে দক্ষ শিক্ষক গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। বছরের শুরুতে ভুলে ভরা নিম্ন মানের পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের হাতে। এ যেন শিক্ষা আর শিক্ষার্থীদের প্রতি শাসকশ্রেণির নির্মম পরিহাস। প্রতিটি শিক্ষা উপকরণের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তার সাথে যুক্ত আছে বর্ধিত বেতন ফি। এই ক্রমবর্ধমান শিক্ষা ব্যয়ের ফলে সৃষ্ট আর্থিক সংকটে ঝরে পড়ছে দেশের বিশাল অংশের শিক্ষার্থীরা।
আলোচনা সভা থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে সকল বৈষম্য দূর করে শিক্ষার অধিকার রক্ষার দাবিতে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানান হয়।
প্রিন্ট