ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo লালপুরের গোপালপুরে রেলগেটম্যানকে মারধরের ঘটনায় মামলা Logo লালপুরে নারী সহকর্মীর অন্তরঙ্গ ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার সিডিএ কর্মকর্তা বরখাস্ত Logo নলছিটিতে এক দশকের ভোগান্তি শেষে শুরু হলো রাস্তায় ইউনিব্লক নির্মাণ Logo বদলিজনিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান Logo চরভদ্রাসনে ভুবনেশ্বর নদ পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উদ্যোগ Logo আমাদের রবীন্দ্র চর্চা বাড়াতে হবেঃ অর্দ্ধেন্দু প্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় Logo শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবেঃ -অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম Logo তানোরে ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রম উদ্বোধন Logo বং সিনেমাটিক ডিজিটাল মার্কেটিং এর আয়োজনে কলকাতায় ‘বঙ্গ সন্তান সম্মান- ২০২৪ Logo কালুখালীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

রাজবাড়ী ও পাবনা জেলার সীমান্তবর্তী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত গোয়ালন্দের চরাঞ্চলের মানুষ

চারদিকে নদীবেষ্টিত রাজবাড়ী ও পাবনা জেলার সিমান্তে  গোয়ালন্দের পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে কিছু অংশ নিয়ে রাখাল গাছি,  বেতক, কুশাহাটা, বনভাবল,জয়পুর, চর পালন্দ, দেওলি, পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ঢালার চর ইউনিযনের লতিফপুর, নারাদা, কুকলির চর, খাসপুর।  মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ অঞ্চলের মানুষ। পেশায় জেলে কিংবা শ্রমিক। হাজার মানুষ জীবন-জীবিকা নির্ভর করে মাছ শিকার ও কৃষি কাজে। অব্যাহত নদী ভাঙন ও প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এসব মানুষের কপালে জোটে না প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা।  ওই এলাকার শিশুরাও শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত। প্রাথমিক শিক্ষাই তাদের শেষ। নেই মাধ্যমিক স্কুল, স্থানীয়দের  দাবী চরে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠার।
গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন প্রায় ১০ হাজার মানুষ  এই চরে বসবাস করে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ঢালার চরের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। নদীপথে ট্রলার ছাড়া এখানে  যেতে আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রসূতি মায়েরা শঙ্কিত থাকেন তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে। এই দূর্গোম চরের মানুষ বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ  ও গর্ভবতী নারীরা রয়েছেন সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এসব চরাঞ্চলে রোগীরা বাস করেন মৃত্যুভয় নিয়ে। অনেক গর্ভবতী মহিলা হাসপাতালে নেওয়ার পথেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। চরাঞ্চল থেকে  মূল ভূখণ্ডে যাওয়ার বাহন নৌকা। রোগী  নিয়ে  রাজবাড়ী অথবা পাবনা জেলায় যাওয়ার পথে নৌকায় সন্তান প্রসব হয়ে যাওয়ার  নজিরও রয়েছে। যথা সময়ে নৌকা বা ট্রলার না পাওয়ায় বেশ কয়েকজন প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
অপর দিকে শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত  এ এলাকার শিশুরা। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এখানে। চরাঞ্চলের ছেলে মেয়েদের ৫ম শ্রেণির পর্যন্ত পড়াশোনা ইতি টানতে হয়।  বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নাই । মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই মেয়েদের কে বাল্যবিয়েতে বসতে হয়। ছেলে শিক্ষার্থী জড়িয়ে পড়েন বাবার পেশায়। বেতকা গ্রামের মোছা. মাজেদা বেগম বলেন, আমরা চরাঞ্চলের মানুষ বিপদের মধ্যে আছি। নৌকা ছাড়া আমাদের যাতায়াতের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা নাই।  কমেলা বেগম বলেন, আমরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।  বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলার থাকে ঝুঁকি নিয়ে। অনেক গর্ভবতী মহিলা হাসপাতালে নেওয়ার পথেই বাচ্চা প্রসাব করে।  এখানে যাতায়াত ও  চিকিৎসা সেবা না থাকায় অনেক রোগী পথেই মারা যায়।
বেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন,  আমাদের পড়াশোনা ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শেষ। হাই স্কুল না থাকায়  আমাদের আর পড়াশোনা করার সুযোগ নাই।  আমরা এখানে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার দাবী জানাই।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারসিম তারান্নুম হক বলেন,  আমরা চেষ্টা করছি সীমিত সামথের্যর মধ্যেই চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে। ওখানে প্রতি মাসেই আমাদের ইপিআই কর্মীরা যায়। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক হয়। ওখানে  স্যাটেলাইট ক্লিনিক স্থাপনের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। স্যাটালাইট ক্লিনিক স্থাপনের জন্য জমি নিয়ে কথা চলছে। জমির কাগজ পত্র জমা দিলে  আমি উদ্ধোর্তন কতৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.  জাকির হোসেন বলেন, ওখানে সরকারের নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে, তাদের কে  বিভিন্ন ভাতা দেওয়া হয়।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্প রয়েছে।  আমরা প্রায়ই যাওয়া আসা করি। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ওখানে মাধ্যমিক স্কুল প্রয়োজন।  সেটা আমরাও উপলব্ধি করি। সরকারি বা এমপিও ভুক্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার সুযোগ থাকে সেটা আমরা চেষ্টা করবো।  পাশাপাশি ওখানে ব্যাক্তি পর্যায়ে যদি কেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার জন্য এগিয়ে আসে তাদের কে আমরা উৎসাহ দিবো।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

লালপুরের গোপালপুরে রেলগেটম্যানকে মারধরের ঘটনায় মামলা

error: Content is protected !!

রাজবাড়ী ও পাবনা জেলার সীমান্তবর্তী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত গোয়ালন্দের চরাঞ্চলের মানুষ

আপডেট টাইম : ০২:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০২৩
আবুল হোসেন, রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি :
চারদিকে নদীবেষ্টিত রাজবাড়ী ও পাবনা জেলার সিমান্তে  গোয়ালন্দের পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে কিছু অংশ নিয়ে রাখাল গাছি,  বেতক, কুশাহাটা, বনভাবল,জয়পুর, চর পালন্দ, দেওলি, পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ঢালার চর ইউনিযনের লতিফপুর, নারাদা, কুকলির চর, খাসপুর।  মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ অঞ্চলের মানুষ। পেশায় জেলে কিংবা শ্রমিক। হাজার মানুষ জীবন-জীবিকা নির্ভর করে মাছ শিকার ও কৃষি কাজে। অব্যাহত নদী ভাঙন ও প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এসব মানুষের কপালে জোটে না প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা।  ওই এলাকার শিশুরাও শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত। প্রাথমিক শিক্ষাই তাদের শেষ। নেই মাধ্যমিক স্কুল, স্থানীয়দের  দাবী চরে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠার।
গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন প্রায় ১০ হাজার মানুষ  এই চরে বসবাস করে। পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার ঢালার চরের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। নদীপথে ট্রলার ছাড়া এখানে  যেতে আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রসূতি মায়েরা শঙ্কিত থাকেন তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে। এই দূর্গোম চরের মানুষ বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ  ও গর্ভবতী নারীরা রয়েছেন সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এসব চরাঞ্চলে রোগীরা বাস করেন মৃত্যুভয় নিয়ে। অনেক গর্ভবতী মহিলা হাসপাতালে নেওয়ার পথেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। চরাঞ্চল থেকে  মূল ভূখণ্ডে যাওয়ার বাহন নৌকা। রোগী  নিয়ে  রাজবাড়ী অথবা পাবনা জেলায় যাওয়ার পথে নৌকায় সন্তান প্রসব হয়ে যাওয়ার  নজিরও রয়েছে। যথা সময়ে নৌকা বা ট্রলার না পাওয়ায় বেশ কয়েকজন প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
অপর দিকে শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত  এ এলাকার শিশুরা। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এখানে। চরাঞ্চলের ছেলে মেয়েদের ৫ম শ্রেণির পর্যন্ত পড়াশোনা ইতি টানতে হয়।  বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাল্যবিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নাই । মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই মেয়েদের কে বাল্যবিয়েতে বসতে হয়। ছেলে শিক্ষার্থী জড়িয়ে পড়েন বাবার পেশায়। বেতকা গ্রামের মোছা. মাজেদা বেগম বলেন, আমরা চরাঞ্চলের মানুষ বিপদের মধ্যে আছি। নৌকা ছাড়া আমাদের যাতায়াতের জন্য অন্য কোন ব্যবস্থা নাই।  কমেলা বেগম বলেন, আমরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।  বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলার থাকে ঝুঁকি নিয়ে। অনেক গর্ভবতী মহিলা হাসপাতালে নেওয়ার পথেই বাচ্চা প্রসাব করে।  এখানে যাতায়াত ও  চিকিৎসা সেবা না থাকায় অনেক রোগী পথেই মারা যায়।
বেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন,  আমাদের পড়াশোনা ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শেষ। হাই স্কুল না থাকায়  আমাদের আর পড়াশোনা করার সুযোগ নাই।  আমরা এখানে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার দাবী জানাই।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারসিম তারান্নুম হক বলেন,  আমরা চেষ্টা করছি সীমিত সামথের্যর মধ্যেই চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে। ওখানে প্রতি মাসেই আমাদের ইপিআই কর্মীরা যায়। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিক হয়। ওখানে  স্যাটেলাইট ক্লিনিক স্থাপনের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। স্যাটালাইট ক্লিনিক স্থাপনের জন্য জমি নিয়ে কথা চলছে। জমির কাগজ পত্র জমা দিলে  আমি উদ্ধোর্তন কতৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.  জাকির হোসেন বলেন, ওখানে সরকারের নিরাপত্তা কর্মসূচি রয়েছে, তাদের কে  বিভিন্ন ভাতা দেওয়া হয়।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ন প্রকল্প রয়েছে।  আমরা প্রায়ই যাওয়া আসা করি। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ওখানে মাধ্যমিক স্কুল প্রয়োজন।  সেটা আমরাও উপলব্ধি করি। সরকারি বা এমপিও ভুক্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার সুযোগ থাকে সেটা আমরা চেষ্টা করবো।  পাশাপাশি ওখানে ব্যাক্তি পর্যায়ে যদি কেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার জন্য এগিয়ে আসে তাদের কে আমরা উৎসাহ দিবো।

প্রিন্ট