দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে মহম্মদপুর উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নির্মাণাধীন মডেল মসজিদের সম্পন্ন হওয়ার কাজ। ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয়ে নির্মাণ কাজ শতকরা ১০ ভাগ অগ্রগতি হওয়ার পর এক বছরের অধিক সময় কাজটি বন্ধ রেখে ২০২১ সালে প্রথম তলা, ২০২২ সালে ২য় তলা এবং ২০২৩ সালের মে সাসে তৃতীয় তলা ছাঁদ ঢালাই শেষ হওয়ার পর তিন মাসের অধিক সময় ফের কাজ বন্ধ রাখায় পূর্নাঙ্গ রুপের মডেল মসজিদ টি উপজেলাবাসীর দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
কাজের অগ্রগতি অতিশয় ধীরগতি হওয়ায় স্থানীয় মুছল্লিদের মধ্যে কেবল অসন্তোস নয়, মসজিদটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ ঠিকাদারের গাফিলতির কথা জানালেও তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ বরাদ্দের স্বল্পতার কারনে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় পূন: দরপত্র আহব্বান করতে বিভাগীয় দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রকল্প বাস্তয়নকারী সংস্থা মাগুরা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার হুসাইন। আজ শুক্রবার দুপুরে মসজিদটি পরিদর্শনে দেখা যায় দীর্ঘদিন কাজ না করায় ক্রমাগত নষ্টো হচ্ছে নির্মাণাধীন ভবনটি। লতা পতায় ঘিরে গেছে চারিপাশ। দেখে মনে হয় হাজার বছর আগের ফেলে রাখা অব্যহৃত জীর্ণ ভবন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ, দেশে পর্যাপ্ত মসজিদ থাকলেও একই স্থান থেকে বিভিন্ন ইসলামিক কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো মডেল মসজিদ নেই। তাই এ ধরনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরে মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে মাগুরার মহম্মদপুর ২০২০ জুলাই মাস থেকে উপজেলায় ৪ তলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কাজ শুরুর তিন বছরের অধিক সময় অতিক্রম হলেও কাজের অগ্রগতি শতকরা ৪০ ভাগ সম্পন্ন হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে রাখেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ কাজের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেছে। কারন এই কাজের বাস্তবায়ন সময় ছিল ১৮ মাস। তবে সংশ্লিষ্ঠরা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে কাজের সময় কয়েক দফা বর্ধিত করা হয় বলে জানিয়েছেন গনপূর্ত বিভাগ। এদিকে দীর্ঘ সময় কাজটি বন্ধ থাকায় নির্মাণাধীন ভবনে মরিচা পড়ে নষ্টো হয়ে গেছে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা বাংলাদেশে মোট ৫৬০টি মসজিদের নির্মান কাজ শুরু হয়। প্রতিটি মসজিদ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭৩ টাকা। ৪ তলা বিশিষ্ট এই মসজিদে থাকবে লাইব্রেরী, গাড়ি পার্কিং ও লিফট, একসাথে ১ হাজার পুরুষ ও মহিলা মুসল্লির পৃথক ওজু ও নামাজের ব্যবস্থা, পাঠাগার, গবেষণা কেন্দ্র, হজ্ব যাত্রীদের নিবন্ধন, পর্যটকদের আবাসন ব্যবস্থা, দাওয়াতি কার্যক্রম, হিফজ মাদ্রাসা, মক্তব, মৃত ব্যক্তির গোসলের ব্যবস্থা, মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের আবাসন প্রকল্পসহ বহুমুখী ইসলামি কার্যক্রম।
তাছাড়া মসজিদটিকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য রয়েছে নানা পরিকল্পনা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজের অগ্রগতি সীমিত হওয়ায় এবং অধিক সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় মডেল মসজিদটির ভবিষৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস লিটন ট্রেডাস ঝিনাইদহ কাজ শুরু করার প্রায় তিন বছরের অধিক সময় পার হলেও কাজের অগ্রগতি মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ।
জানা গেছে, ইসলামি মূল্যবোধের প্রসার এবং ধর্মীয় গোড়ামি দুর করতে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওয়ায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে মোট ৫৬০টি মসজিদের নির্মান কাজের প্রথম পর্যায়ে ২৫০টি মসজিদের নির্মান কাজ শেষ হওয়ায় সেখানে সেখানে গত বছর থেকেই ইসলামিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। নান্দনিক নির্মাণ শৈলীতে বেশ আকর্শর্ণীয় ৪ তলা বিশিষ্ট এই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নয়নাভিরাম কারুকাজ যে কারোর নজড় কাড়বে। দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ মিণার থেকে ভেসে আসবে আজানের ধ্বনি। মসজিদে রয়েছে মনোরম বিশালাকৃতির তিনটি গুম্বুজ। ভেতরে নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে ইসলামি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নকশার কারুকাজ। কিন্তু একই সাথে শুরু হওয়া দেশের বিভিন্ন স্থানের ২৫০টি মডেল মসজিদ বিভিন্ন প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করলেও মহম্মদপুর মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ ধীর গতিতে হওয়ায় কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুরে মসজিদটি পরিদর্শনে দেখা যায় দীর্ঘদিন কাজ না করায় ক্রমাগত নষ্টো হচ্ছে নির্মাণাধীন ভবনটি। লতা পতায় ঘিরে গেছে চারিপাশ। দেখে মনে হয় হাজার বছর আগের ফেলে রাখা জীর্ণ ভবন। স্থানীয় বয়জৈষ্ঠ মুসল্লি আলহাজ্ব আকমল হোসেন বলেন, ভেবেছিলাম মৃত্যুর আগে মডেল মসজিদে নামাজ পড়বো কিন্তু তা বোধ হয় আর হবে না।
মাগুরা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ঠিকাদারের কাজের গাফিলতি নিয়ে আমি গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, মাগুরার জেলা প্রশাসকসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে অবহিত করেছি। এবং কাজের গতি বৃদ্ধি করার জন্য ঠিকাদারের সাথেও বারবার কথা বলেছি। কিন্তু কোন ফল পাইনি।
নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মিজানুর রহমান লিটন বলেন, গণপূর্ত বিভাগ সময়মত বিল না দেওয়ায় এবং কাজটি পুরতন রেটের হওয়ায় আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। যে কারনে কাজ বন্ধ করে রেখেছিলাম তবে শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ ছুটিতে ইন্ডিয়া থাকায় হোয়াটসঅ্যাপে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার কারন জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও গনপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আল্লাহ্হেল কাফী বলেন, দ্রæত কাজ শেষ করতে ঠিকাদার কে তাগিদ করা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তয়নকারী সংস্থা মাগুরা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার হুসাইন বলেন, কাজ বন্ধ থাকায় আমি মহম্মদপুর মডেল মসজিদ পরিদর্শন করেছি। দ্রæত কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদার কে অবহিত করার পর তিনি আর কাজ করবেন না বলে জানিয়েছেন। আমরা পূন: দরপত্র আহŸান করতে বিভাগীয় দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছি। ফাইলটি খুলনা থেকে ঢাকা প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে পৌছলে সেখান থেকে নতুন করে টেন্ডার আহŸান করা হবে।
প্রিন্ট