মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ‘জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের’ ব্যানারে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাতজন নেতার স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে অর্থপাচার মামলায় নয়জন নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ আসামি শ্রেণিভুক্ত করার প্রক্রিয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হয়। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাতজন হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অনিমেষ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাহিদ ব্যাপারী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক দীপক মজুমদার, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ নাসির, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাহেব সরোয়ার ও জেলা বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার পাল।
লিখিত বক্তব্যে আরও যে দুই নেতার নাম উল্লেখ করা হয় কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না তারা হলেন- ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ বোস এবং জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য খলিফা কামাল উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে এ নয়জনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অনিমেষ রায়। পরে নেতারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “ফরিদপুরের কুখ্যাত দুর্নীতিবাজ দুই ভাই বরকত-রুবেলসহ ১০ জনের নামে অর্থপাচার মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। ওই অভিযোগপত্রে তাদের সম্পদের ও অর্থনৈতিক দুর্নীতির হিসাবে গড়মিল থাকায় আদালতের নির্দেশে পুনঃতদন্ত প্রতিবেদনে জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কিছু বর্তমান, সাবেক নেতা ও জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কিছু নেতৃবৃন্দকে জড়িয়ে নতুন করে অভিযোগপত্র প্রদান করা হয় মর্মে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে।
এতে বলা হয়, “বিগত দিনগুলোতে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের সময়ে তার ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের হাত ধরে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জামায়াত, বিএনপিসহ স্বাধীনতা বিরোধীরা ফরিদপুর আওয়ামী রাজনীতিতে প্রবেশ করে। তাদের প্রধানতম এজেন্ট সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেল দুই ভাই ছলেবলে কলেকৌশলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের ফরিদপুর থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ভয়ংকর ব্লু-প্রিন্ট বাস্তবায়ন শুরু করে।
“এ মামলায় বরকত-রুবেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের দুঃশাসন, অপকর্মের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেছিল আদালতে প্রদত্ত ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে অন্যান্য অনেকের সঙ্গে চক্রান্তমূলকভাবে তাদের বিরুদ্ধাচারণ করায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের নাম বলে। বরকত- রুবেলের ১৬৪ ধারার জবানবন্দির ভিত্তিতে আমাদের নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হলে আমরা যেমন ব্যক্তিজীবন, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব, তেমনিভাবে ফরিদপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও এ বিষয়টি বিশাল বড় একটি ক্ষতির কারণ হবে।”
২০২০ সালের ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় রুবেল-বরকতের নামে দুই হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা পাচারেরে অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০২১ সালের ৩ মার্চ রুবেল-বরকতের সঙ্গে খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরসহ ১০ জনকে আসামি করে অভিযোগড়পত্রৃ দেওয়া হয়।
আদালতের নির্দেশে ২২ জুন আরও ৩৭ জনকে আসামি করে সম্পূরক অবিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি। ওই ৩৭ জনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগর উল্লেখিত নয় নেতা রযেছেন।
এ মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আলালত-৯ এ বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ৫ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতের সামনে উপস্থাপন করার কথা।
প্রিন্ট