ঢাকা , শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo হাতিয়ায় হলিশ সহ ৬টি ট্রলারে ৯৩জন জেলেকে আটক করেছে কোষ্টগার্ড Logo নড়াইলে দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার-৪ Logo চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় মিলি বিশ্বাসের পথসভা অনুষ্ঠিত Logo কাশিমপুর কারাগারে ঠাঁই হল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী’র Logo চট্টগ্রামের পটিয়ার পাহাড়ি এলাকা থেকে ৭ শিক্ষার্থী অপহ্রতঃ মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্ত Logo নড়াইলের লোহাগড়ার কাউলিডাঙ্গা বিলে যুবক খুন Logo অভিযুক্ত দুইজনের মধ্যে গ্রেপ্তার এক Logo হত্যা মামলায় কারাগারে আইভী Logo রাজবাড়ীতে পুড়ে গেছে ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টার Logo গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মহোদয়ের দিনাজপুর জেলায় আগমন
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

যেভাবে হত্যা করা হয় সাংবাদিক নাদিমকে

-সাংবাদিক নাদিম।

দীর্ঘদিন ধরেই সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর বিরুদ্ধে আনা তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের সংবাদ সম্মেলনসহ বেশ কয়েকটি নিউজ করেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম -এর জামালপুর করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিম।

সেইসব নিউজের পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নাদিমসহ আরও কয়েকজনের নামে মামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু।

এছাড়াও চেয়ারম্যান বাবু নিজে এবং তার ছেলে ফয়সালও তাকে বেশ কয়েকবার হুমকি দেন।এরই জেরে বুধবার (১৪ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বকশিগঞ্জ উপজেলার পাথাটিয়া এলাকার ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে অতর্কিত আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়।

এরপর দেশীয় অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায় এবং তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। ওই সময় সহকর্মী মুজাহিদ তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করে দুর্বৃত্তরা।

পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী মুজাহিদ ও স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

পরে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বেলা পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে নাদিমকে হত্যার উদ্দেশ্য মারধরের কিছু চিত্র দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম সড়ক দিয়ে আসার সময় হঠাৎ তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি। পরে আরও কয়েকজন মোটরসাইকেল যোগে এসে আহত নাদিমকে মারতে মারতে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। পাঁচ থেকে ৬ জন মারধরে অংশ নিলেও এসময় চারপাশে আরও ৫-৬ জন হামলাকারীকে দেখা গেছে ফুটেজে।

প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু গণমাধ্যমকে বলেন, বকশিগঞ্জ কলেজের পাশে অফিস থেকে কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে বাড়ির দিকে রওনা দিই আমি ও গোলাম রাব্বানী নাদিম। পথে বকশিগঞ্জ পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অতর্কিতভাবে সামনে থেকে আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেওয়া হয় নাদিমকে। এরপর ১০-১২ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে এক অন্ধকার গলিতে নিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে।

সেই সময় তিনি (মুজাহিদ) তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয় এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হয় জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মুজাহিদ বলেন, এক পর্যায়ে লুঙ্গি পরা একটি ছেলে আমাকে মারধর করে।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজন চাচ্ছিল সিসিটিভির আওতার বাইরে নাদিমকে নিয়ে যেতে। যে গলিতে নাদিমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে ছোট একটি ইটের দেয়াল ছিল। ইটের দেয়ালের পেছনে চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু দাঁড়িয়েছিল। আর তার ছেলে ফয়সাল সেই ইটের দেয়াল লাথি দিয়ে ভেঙে একটি ইট হাতে নিয়ে আঘাত করে নাদিমকে।

নিহত নাদিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বলেন, মূলত গত কয়েক মাস আগে বকশিগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের কমিটি প্রকাশ হয়। সেই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনের বাবা রাজাকার- এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে। যার দায় পড়ে আমার বাবার ওপর। আমার বাবা নাকি সেই সংবাদে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছ থেকে হুমকি আসে। এর কয়েকদিন পর মধ্যবাজার এলাকায় বাবার ওপর একটি হামলা হয়। সেই হামলায় যুবলীগ নেতা শামীম খন্দকার ও ইসমাইল হোসেন নেতৃত্ব দেন। তার কয়েকদিন পর মাহমুদ আলম বাবু চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে বেশ কয়েকটি নিউজ করেন বাবা। এ ঘটনায় বাবাকে কয়েকবার হুমকি দেন বাবু চেয়ারম্যান ও তার ছেলে ফয়সাল।

আরেকটি আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে বাবু চেয়ারম্যান সরাসরি সাংবাদিক নাদিমকে খুন করার হুমকি দেন উল্লেখ করে নিহতের ছেলে বলেন, পরে সেই নিউজগুলোর কারণে বাবু চেয়ারম্যান বাবার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দেন। সেই মামলা খারিজের খবর পাওয়ার পর আবারও বাবাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের ছেলে ফয়সাল বাবাকে মেরে ফেলতে চায়। সেই হুমকিই বাস্তবায়ন করলো চেয়ারম্যান, তার ছেলে ও তাদের লোকজন।

আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বলেন, আমার বাবা আজ দুনিয়াতে নেই। আমি এই হত্যার বিচার চাই। জড়িতদের ফাঁসি চাই।

ঘটনার মূল অভিযুক্ত বকশীগঞ্জ সদর উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। যিনি কিনা উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে গোলাম রব্বানি নাদিমের মেয়ে রাব্বিয়াতুল জান্নাত বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু আমার বাবার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। আগেও নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন, মামলাও দিয়েছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজনই তাকে হত্যা করেছেন। তারা অনেকবার হুমকি দিয়েছেন বাবাকে, বুধবার (১৪ জুন) রাতে সেই হুমকি বাস্তবে রূপ দিয়েছেন চেয়ারম্যান ও তার ছেলে। আমি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছি। তারা আমার বাবাকে ধরে মারতে মারতে একটি গলিতে নিয়ে গিয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে।

বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আজিজুর রহমান বলেন, সাংবাদিক নাদিমের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। ঘটনার পর যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন আমি হাসপাতালে ছিলাম না। আমাদের জরুরি বিভাগের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তিনি (নাদিম) অচেতন ছিলেন। পরে সকালে গিয়ে তার অবস্থা সিরিয়াস দেখে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিক্যালে রেফার করি। এসময় তার কপালে ক্ষত ছিল।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) রাত ১০টার দিকে সাংবাদিক নাদিমের মরদেহ বকশীগঞ্জ গরুহাটিতে তার নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছায়। পরে শুক্রবার (১৬ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

অন্যদিকে, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

হাতিয়ায় হলিশ সহ ৬টি ট্রলারে ৯৩জন জেলেকে আটক করেছে কোষ্টগার্ড

error: Content is protected !!

যেভাবে হত্যা করা হয় সাংবাদিক নাদিমকে

আপডেট টাইম : ০৩:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক :
দীর্ঘদিন ধরেই সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুর বিরুদ্ধে আনা তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের সংবাদ সম্মেলনসহ বেশ কয়েকটি নিউজ করেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম -এর জামালপুর করেসপন্ডেন্ট গোলাম রাব্বানী নাদিম।

সেইসব নিউজের পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নাদিমসহ আরও কয়েকজনের নামে মামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু।

এছাড়াও চেয়ারম্যান বাবু নিজে এবং তার ছেলে ফয়সালও তাকে বেশ কয়েকবার হুমকি দেন।এরই জেরে বুধবার (১৪ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বকশিগঞ্জ উপজেলার পাথাটিয়া এলাকার ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে অতর্কিত আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়।

এরপর দেশীয় অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত তাকে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায় এবং তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। ওই সময় সহকর্মী মুজাহিদ তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করে দুর্বৃত্তরা।

পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সহকর্মী মুজাহিদ ও স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।

পরে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) বেলা পৌনে ৩টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে নাদিমকে হত্যার উদ্দেশ্য মারধরের কিছু চিত্র দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম সড়ক দিয়ে আসার সময় হঠাৎ তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি। পরে আরও কয়েকজন মোটরসাইকেল যোগে এসে আহত নাদিমকে মারতে মারতে অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। পাঁচ থেকে ৬ জন মারধরে অংশ নিলেও এসময় চারপাশে আরও ৫-৬ জন হামলাকারীকে দেখা গেছে ফুটেজে।

প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর সহকর্মী আল মুজাহিদ বাবু গণমাধ্যমকে বলেন, বকশিগঞ্জ কলেজের পাশে অফিস থেকে কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে বাড়ির দিকে রওনা দিই আমি ও গোলাম রাব্বানী নাদিম। পথে বকশিগঞ্জ পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অতর্কিতভাবে সামনে থেকে আঘাত করে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেওয়া হয় নাদিমকে। এরপর ১০-১২ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়ক থেকে মারধর করতে করতে টেনেহিঁচড়ে এক অন্ধকার গলিতে নিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে।

সেই সময় তিনি (মুজাহিদ) তাদের আটকাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয় এবং হত্যার হুমকি দেওয়া হয় জানিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক মুজাহিদ বলেন, এক পর্যায়ে লুঙ্গি পরা একটি ছেলে আমাকে মারধর করে।

তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের লোকজন চাচ্ছিল সিসিটিভির আওতার বাইরে নাদিমকে নিয়ে যেতে। যে গলিতে নাদিমকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানে ছোট একটি ইটের দেয়াল ছিল। ইটের দেয়ালের পেছনে চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবু দাঁড়িয়েছিল। আর তার ছেলে ফয়সাল সেই ইটের দেয়াল লাথি দিয়ে ভেঙে একটি ইট হাতে নিয়ে আঘাত করে নাদিমকে।

নিহত নাদিমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বলেন, মূলত গত কয়েক মাস আগে বকশিগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের কমিটি প্রকাশ হয়। সেই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনের বাবা রাজাকার- এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে। যার দায় পড়ে আমার বাবার ওপর। আমার বাবা নাকি সেই সংবাদে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছ থেকে হুমকি আসে। এর কয়েকদিন পর মধ্যবাজার এলাকায় বাবার ওপর একটি হামলা হয়। সেই হামলায় যুবলীগ নেতা শামীম খন্দকার ও ইসমাইল হোসেন নেতৃত্ব দেন। তার কয়েকদিন পর মাহমুদ আলম বাবু চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে বেশ কয়েকটি নিউজ করেন বাবা। এ ঘটনায় বাবাকে কয়েকবার হুমকি দেন বাবু চেয়ারম্যান ও তার ছেলে ফয়সাল।

আরেকটি আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে বাবু চেয়ারম্যান সরাসরি সাংবাদিক নাদিমকে খুন করার হুমকি দেন উল্লেখ করে নিহতের ছেলে বলেন, পরে সেই নিউজগুলোর কারণে বাবু চেয়ারম্যান বাবার নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দেন। সেই মামলা খারিজের খবর পাওয়ার পর আবারও বাবাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের ছেলে ফয়সাল বাবাকে মেরে ফেলতে চায়। সেই হুমকিই বাস্তবায়ন করলো চেয়ারম্যান, তার ছেলে ও তাদের লোকজন।

আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বলেন, আমার বাবা আজ দুনিয়াতে নেই। আমি এই হত্যার বিচার চাই। জড়িতদের ফাঁসি চাই।

ঘটনার মূল অভিযুক্ত বকশীগঞ্জ সদর উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। যিনি কিনা উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে গোলাম রব্বানি নাদিমের মেয়ে রাব্বিয়াতুল জান্নাত বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু আমার বাবার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। আগেও নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন, মামলাও দিয়েছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজনই তাকে হত্যা করেছেন। তারা অনেকবার হুমকি দিয়েছেন বাবাকে, বুধবার (১৪ জুন) রাতে সেই হুমকি বাস্তবে রূপ দিয়েছেন চেয়ারম্যান ও তার ছেলে। আমি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছি। তারা আমার বাবাকে ধরে মারতে মারতে একটি গলিতে নিয়ে গিয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে।

বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আজিজুর রহমান বলেন, সাংবাদিক নাদিমের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। ঘটনার পর যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন আমি হাসপাতালে ছিলাম না। আমাদের জরুরি বিভাগের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, তিনি (নাদিম) অচেতন ছিলেন। পরে সকালে গিয়ে তার অবস্থা সিরিয়াস দেখে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিক্যালে রেফার করি। এসময় তার কপালে ক্ষত ছিল।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) রাত ১০টার দিকে সাংবাদিক নাদিমের মরদেহ বকশীগঞ্জ গরুহাটিতে তার নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছায়। পরে শুক্রবার (১৬ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

অন্যদিকে, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।


প্রিন্ট