রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার দেশের রেল বিভাগকে পরিত্যক্ত করেছিল। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে তা পুনরুদ্ধার করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৃথকভাবে রেলসেতু তৈরি হচ্ছে। সেখানে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন যাবে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করেও রুখতে পারেনি। জনগণের শক্তির ওপর ভর করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জনগণের টাকায় সেতু করব। যা তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। পদ্মা সেতুতেও রেল সেতু হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন চত্বরে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। রেলপথ মন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে সকল রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর থেকে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেগুলো চালু করেছে। দেশের সকল পরিবহনে ভাড়া বেড়েছে, কিন্তু ট্রেনে ভাড়া বাড়েনি। আগে যা ভাড়া ছিল, এখনো তাই আছে। প্রধানমন্ত্রীকে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি অবহিত করা হলে তাতে তিনি রাজি হননি। জনগণের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী ভাড়া অপরিবর্তিত রেখেছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু হয়েছে। ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের পর কম খরচে কম সময়ে ঢাকায় গরু পরিবহন করা যাবে। ট্রাকে করে নিলে গেলে যে খরচ হয়, তার চার ভাগের এক ভাগ খরচ হবে ক্যাটল ট্রেনে। এছাড়াও ঈদের পরে জুলাই মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে বন্ধ থাকা ট্রেন চালু হবে। এমনকি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বন্ধ হওয়া শাটল ট্রেন সেপ্টেম্বর মাসে চালু হবে। সোনামসজিদ স্থলবন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন নিয়ে কাজ শুরু করেছি। মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আগে রেলের প্রতি কারো দৃষ্টি ছিল না। বিএনপি রেলকে লুটপাট করেছে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা আবার জেগে উঠেছে। সবকিছু দূরে ঠেলে প্রধানমন্ত্রী আজকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতাসহ সুবিধা বঞ্চিতদের হাজারো সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছেন। এছাড়াও আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। রেলমন্ত্রী আরো বলেন, আপনারা কল্পনা করে দেখেন, ১৪ বছর আগে আপনাদের আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল। আর এখন কেমন আছেন? দেশের এত উন্নয়নের পরও যারা আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়াতে চায়, উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করতে চায়, তারাই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। এদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গঠন করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
পরে পতাকা উড়িয়ে ও বাঁশি বাজিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ, সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমান, সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, সংসদ সদস্য ফেরদৌসী ইসলাম জেসী জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন ও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা।
রেলমন্ত্রী দুপুরে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধন করলেও বিকেল থেকে চলবে ট্রেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে বিকেল ৪টায় ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। বিভিন্ন স্টেশন থেকে আম নিয়ে ট্রেনটি রাত ১টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। রহনপুর থেকে বিকেল ৪টায় ছাড়ার পর নাচোল স্টেশনে পৌঁছাবে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে, নেজামপুর রেলস্টেশনে ৪টা ৪০ মিনিটে, আমনুরা জংশনে বিকেল ৫টায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে ৬টায়, আমনুরা বাইপাস ও কাঁকানহাটে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে পৌঁছাবে।
এসব স্টেশন থেকে ঢাকায় আম পরিবহনে ব্যবসায়ী ও চাষিদের খরচ হবে প্রতি কেজিতে ১ টাকা ৩২ পয়সা। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৭টা ৩০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। ৭টা ৫৩ মিনিটে সারদহ রোড, রাত ৮টা ১৫ মিনিটে আড়ানি, ট্রেনটি আবদুল্লাপুরে পৌঁছাবে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে। এসব স্টেশন থেকে ঢাকায় আম পরিবহনে ব্যবসায়ীদের গুণতে হবে ১ টাকা ১৭ পয়সা। ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থেকে রাত ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁও রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। মাঝে জয়দেবপুর ও ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে আম বুকিং করার জন্য দাঁড়াবে। ট্রেনটি তেজগাঁও পৌঁছাবে রাত ১টা ১৫ মিনিটে।
- আরও পড়ুনঃ প্রথমবারের মতো টাকায় বিদেশি ঋণ পরিশোধ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে রাজধানীগামী ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনটি প্রথম চালু হয় ২০২০ সালের ৫ জুন। ওই বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত চলা ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে আম পরিবহন হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২ কেজি। এতে রাজস্ব আয় হয় ২ লাখ ১১ হাজার ৪৫৮ টাকা। দ্বিতীয় বারের মতো ২০২১ সালের ২৭ মে ট্রেনটি চালু করা হয়। সেই বছর আম পরিবহন করা হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৩ কেজি। রাজস্ব আদায় হয় ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯২০ টাকা। সর্বশেষ গত বছর এই ট্রেনে মোট ১ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৫ কেজি আম পরিবহন করা হয়। এতে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৪ টাকা আয় হয়েছিল।
প্রিন্ট