মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় ঢেউয়ের তোড়ে গাওদিয়া ও লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড়নওপাড়া, সুন্দিসার, বাঘেরবাড়ি ও রাউৎগাঁওয়ে এ ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্ষার আগেই পদ্মার এ আগ্রাসী রূপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা। গত মঙ্গলবার থেকে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জিও ব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
উপজেলার খড়িয়া থেকে টঙ্গীবাড়ির দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৯ দশমিক এক কিলোমিটার এলাকায় পদ্মাতীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ভাঙন এলাকার মধ্যে গাওদিয়া, বড়নওপাড়া, সুন্দিসার, বাঘেরবাড়ি প্রকল্পের আওতায় থাকলেও রাউৎগাঁও বাইরে রয়েছে। এ এলাকায় নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। উপজেলা ভূমি অফিস থেকে ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় ঢেউয়ের আঘাতে মাটি সরে গেছে।
গৃহবধূ শিলা বেগম জানান, তিনদিন আগেও নদী দূরে ছিল। দু’দিনের ঝড়ে ঢেউয়ের আঘাতে ঘরের নিচের মাটি সরে গেছে। ভয়ে ছোট তিন সন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। দু’বছর আগে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ঘর তুলেছেন। এখন ঘর অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে ৫ হাজার টাকা লাগবে। তাঁর প্রশ্ন, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, ঘর সরাবেন কীভাবে?
শুক্রবার বিকেলে রাউৎগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তিন দিনের ভাঙনের তীব্রতায় আতঙ্কের ছাপ পদ্মাপাড়ের মানুষের চোখেমুখে। বাড়ি-ঘর ঝুঁকি রয়েছে। কোনো জনপ্রতিনিধি না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। স্থানীয় রেজু শেখ জানান, আবার বৈরী আবহাওয়া শুরু হলে অন্তত অর্ধশত বাড়ি পদ্মার গর্ভে বিলীন হবে। গৃহবধূ তুলি আক্তার বলেন, প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল জিও ব্যাগ ফেলবে। কিন্তু তার হদিস নেই।
এবার ভাঙলে আর বাঁচার উপায় নেই বলে জানান সত্তরোর্ধ্ব মনোয়ারা বেগম। তিনি আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে এবং পরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে ভাঙন ঠেকানোর দাবি জানান। লোকজন নিয়ে বাঁশ পুঁতে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টাকরছিলেন রাজ্জাক শেখ। তিনি বলেন, ‘আমরা কি দোষ করেছি? আমাদের এলাকা কেন বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বাইরে রাখা হলো?’
সদ্য স্বামীহারা রেহানা বেগমের ঘরের অর্ধেক নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। তিনি তাঁর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেকে নিয়ে বিপদে পড়েছেন। না পারছেন ঘরে থাকতে, না পারছেন এলাকা ছেড়ে যেতে। এ ছাড়া আতঙ্কিত চান মিয়া, জিতু শেখ ও ছাত্রলীগ নেতা শেখ মো. রিয়াদ নদী ভাঙনরোধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বৃহস্পতিবার বিকেলে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি তিন-চার দিনের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
মুন্সীগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, ৪৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে নতুন চার কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় আরও ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বাঁধ নির্মাণ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। কাজের অগ্রগতি ২০ শতাংশ। আতঙ্কের কিছু নেই। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর শুরু হবে তীর রক্ষা বাঁধের কাজ।
প্রিন্ট