জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা নীতিমালা প্রত্যাখান করে আট দাবি জানিয়েছে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি)।
রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের দপ্তরে গিয়ে এ স্মারকলিপি দেন সংগঠনের নেতারা। পরে অন্যান্য কমিশনারদের কাছেও এ স্মারকলিপি পৌঁছে দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে ও ভোটকক্ষের সংবাদ সংগ্রহে অনুমতি না নেয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ভোটের দিন ইন্টারনেট সচল রাখতে নির্দেশনা প্রদান করার দাবিও তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া ভোটের দিন মোটরসাইকেল ব্যবহারের যে বিধিনিষেধ তা বাতিলের দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, নির্বাচন কমিশনের অনুমতিপ্রাপ্ত কার্ডধারী সাংবাদিকদের কোনো ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষে (গোপন ভোট কক্ষ নয়) প্রবেশ করতে কারও কোনো অনুমতির প্রয়োজন পড়বে না। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সাংবাদিক কার্ডই চূড়ান্ত অনুমতিপত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। কেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি নেয়ার বিষয়টি বাতিল করতে হবে।
এ ছাড়া দাবিতে বলা হয়, নির্বাচন কাভারেজে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দিতে হবে। দেশের এমন অনেক ভোটকেন্দ্র আছে যেখানে গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। এ ছাড়া ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচারে ইসির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক এই যুগে তাৎক্ষণিক সংবাদ প্রচার করতে হয়। সরাসরি সম্প্রচার হলে ভোট নিয়ে প্রশ্ন অনেকাংশে কমে যাবে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ভোটকক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট বা ভোটারদের সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। নির্বাচনের সঙ্গে এসব ব্যক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন, তাদের বক্তব্য ছাড়া কোনো মাধ্যমের প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিক নাম ব্যবহার করে রাজনৈতিকভাবে ডিসি (জেলা প্রশাসক) অফিস কিংবা নির্বাচন অফিস থেকে কার্ড সংগ্রহ করে থাকেন। সাংবাদিক কার্ড যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয় সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হতে হবে।
এতে বলা হয়, এ ছাড়া কোনো গণমাধ্যমকর্মী অহেতুক দীর্ঘক্ষণ কোনো ভোটকক্ষে অবস্থান করেন না, যদি না ভোটে কোনো ধরনের অনিয়মের চিত্র তাদের কাছে ধরা পড়ে। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, একটি ভোটকক্ষে ১০ মিনিটের বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারবেন না। সাংবাদিকদের কাজ সময় দিয়ে বেঁধে ওদেয়ার বিষয়টি বাতিলের দাবি জানাই আমরা।
এতে আরো বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা কিংবা আলোচিত প্রার্থীরা যখন ভোট দিতে যান, তখন ছবি, ফুটেজ কিংবা সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকেন টেলিভিশন ও পত্রিকার সংবাদকর্মীরা। এ ক্ষেত্রে অনেক সংবাদকর্মীকে একত্রে কোনো কক্ষে প্রবেশ করতে হয়। এ ছাড়া সাধারণত কোনো ঘটনা ছাড়া একাধিক গণমাধ্যমকর্মী একটি কেন্দ্রে প্রবেশও করেন না। তাই দুজনের অধিক একটি কক্ষে ঢুকতে পারবেন না বলে নীতিমালায় যে ধারাটি রয়েছে, তা বাতিল করা উচিত বলে মনে করি আমরা।
তাদের দাবি, ভোটের দিন নির্বাচনে ইন্টারনেটের ব্যবহার সচল রাখতে নির্দেশনা প্রদান করবে নির্বাচন কমিশন।
আরএফইডির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি আরও বলা হয়, সংবিধানের ৩৯(১) অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এ নিশ্চয়তা কোনো শর্তযুক্ত নয়। সুতরাং কোনো বিধিবিধান, আইন এ স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। আর যদি তা করা হয় তাহলে তা হবে সংবিধানের লঙ্ঘন।
প্রিন্ট