আসন্ন ঈদের পরেই দেশের সব স্কুলে পৌঁছে দেয়া হবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী। ইতোমধ্যে এই দুই শ্রেণীর অধিকাংশ বইয়ের ভুল চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনী আকারে প্রস্তুত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এই সংশোধনীগুলোর সফট কপির পাণ্ডুলিপি দেয়া হবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর বা মাউশিতে। পরে মাউশি সেগুলো স্কুলে স্কুলে প্রধান শিক্ষক বরাবরে পৌঁছে দেবে। আর প্রত্যেক শ্রেণিশিক্ষক সফট কপির অনুরূপ মূল পাঠ্যবইয়ে সংশোধন করে শিক্ষার্থীদের মিলিয়ে পড়াবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সব ক’টি বইয়ের বেশকিছু ভুল-অসঙ্গতির সংশোধনী ইতোমধ্যে তৈরি করেছে এনসিটিবি। একটি কমিটির মাধ্যমে তারা এই সংশোধনী তৈরি করেছে। কিছুদিন আগে ওই কমিটি লিখিত আকারে সংশোধনীগুলো এনসিটিবিতে জমা দিয়েছে। এখন এগুলো মাউশিতে পাঠাবে এনসিটিবি। আর ঈদের পরে স্কুলে স্কুলে প্রধান শিক্ষকদের কাছে এই সংশোধনী পাঠাবে মাউশি।
এনসিটিবি সূত্র মতে, সংশোধনী চূড়ান্ত হলে সেগুলোর সফট কপি প্রধান শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হবে। আসন্ন পবিত্র ঈদের পর তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো সম্ভব হবে। প্রধান শিক্ষকরা সংশোধনীগুলো বিষয়ভিত্তিক শ্রেণিশিক্ষকের কাছে দিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠাবেন। তখন শ্রেণিশিক্ষক সংশোধনী অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বইগুলো সংশোধন করার নির্দেশনা দেবেন। গতকাল মঙ্গলবার এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো: ফরহাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যেসব প্রস্তাব পেয়েছি তার আলোকে এখন সংশোধনীর কাজ চলছে। এটা শেষ হলেই তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আগামী বছর থেকে অন্যান্য শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই বদলে যাচ্ছে। যদিও বিতর্কের মুখে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর জন্য প্রণীত ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দু’টি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি।
তখন এনসিটিবি জানিয়েছিল, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়েরও কিছু অধ্যায় সংশোধন করা হবে। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত হয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সব ক’টি বইয়েরই ভুল-অসঙ্গতিগুলোর সংশোধনী দেয়া হবে। যদিও শিক্ষাবর্ষের সাড়ে চার মাস হতে চললেও কাজটি শেষ করতে পারেনি এনসিটিবি। এনসিটিবির কর্মকর্তা বলেন, এবার মূলত বানান ও তথ্যগত ভুলগুলো সংশোধন করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বই পরিমার্জনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হবে।
এ দিকে এনসিটিবি বলছে নতুন শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা বইয়ে অন্তত চারটি পৃষ্ঠায় বানানসংক্রান্ত সংশোধনী আনা হয়েছে। যেমন পৃষ্ঠা ৬-এর এক জায়গায় আছে ‘তুই, ‘তোরা’ ‘তোকে’। সংশোধন অনুযায়ী এটি হবে ‘তুই, ‘তোর’ ‘তোকে’। ৭১ পৃষ্ঠায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের বাবার নাম লেখা হয়েছে জহীর মোহাম্মদ আবু আলী সাবের। সংশোধন অনুযায়ী এটি হবে ‘জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের’। পৃষ্ঠা ১১৫ তে লেখা আছে ‘হুড়াহুড়ি’, যা হবে ‘কোলাহল’।
ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ে অন্তত সাতটি পৃষ্ঠায় সংশোধন করা হচ্ছে। যেমন বইটির পৃষ্ঠা ২০-এর এক জায়গায় বলা আছে, ‘নাইট্রোজেন গ্যাস আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়’। এই ভুলটি সংশোধন করে করা হচ্ছে ‘কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহার করা হয়’। আবার একই বইয়ের ১৪৮ পৃষ্ঠার শেষ লাইনে আছে, এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যাওয়ার সময় আলো ঠিক একইভাবে বিপরীত দিকে ‘প্রতিসরিত’ হয়। সংশোধনী হলো ‘প্রতিফলিত’। ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বইয়ে অন্তত পাঁচটি পৃষ্ঠায় ছয়টি বানান সংশোধন করার জন্য খসড়া করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণীর ডিজিটাল প্রযুুক্তি বইয়ের ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৪, ৯৮, ৯৯ ও ১০০ পৃষ্ঠায় থাকা বাংলাদেশের মানচিত্রে ময়মনসিংহ বিভাগটি বাদ পড়েছে। এখন সংশোধনীতে মানচিত্রে ময়মনসিংহ বিভাগটি সঠিক স্থানে বিবেচনা করতে বলা হচ্ছে। গণিত বইয়েও আসছে কিছু সংশোধনী।
অপর দিকে সপ্তম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে অন্তত ২২টি পৃষ্ঠায় কিছু সংশোধনী আনার জন্য খসড়া করেছে এনসিটিবি। যেমন ১৪৫ পৃষ্ঠায় ১ ও ২ নম্বর লাইনে আছে ‘মোরা জানি না কো রাজা রাজ-আইন, মোরা পারি না শাসন-উদূখল!’ সংশোধনীতে এটি বাদ দেয়া হচ্ছে। ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ বইয়ের ৯৭ পৃষ্ঠার এক জায়গায় আছে, ‘১৫ আগস্ট ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৌবহরে একসঙ্গে আক্রমণ করেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর-১০-এর নৌ-কমান্ডোরা। তারা কিন্তু একসঙ্গে আক্রমণ করেছিলেন সেই সময় আকাশবাণীতে প্রচার হওয়া একটি গান।’ সংশোধনীতে এটি হবে ‘সেই সময়ে ‘আকাশবাণী’ নামক একটি রেডিও স্টেশনে প্রচার হওয়া একটি গান শুনে মুক্তিযুদ্ধের নৌ-কমান্ডোরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৌবহরে একসঙ্গে আক্রমণ করেন।’
সপ্তম শ্রেণীর শিল্প ও সংস্কৃতি বইয়ে অন্তত ১৭টি পৃষ্ঠায় সংশোধনী আসছে। সপ্তম শ্রেণীর ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়েও অন্তত চারটি পৃষ্ঠায় সংশোধনী আনার জন্য খসড়া করা হয়েছে। যেমন ১১০ পৃষ্ঠায় গ্লুকোজের সংকেতে কিছু সংশোধন করা হচ্ছে। এভাবে ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে সংশোধনী আনার জন্য খসড়া করেছে এনসিটিবি।
প্রিন্ট