ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির বিপক্ষে যাওয়ায় ১৫ নেতাকে শোকজ Logo নতুন নেতৃত্বের আ’লীগ চায় বিএনপি Logo বোয়ালমারীতে ইউনিটি ফর ইউনিভার্স হিউম্যান রাইটস অব বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পরিচিতি সভা Logo লালপুরে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সরল আটক Logo গোদাগাড়ীতে ইউপি বিএনপি’র কর্মী সভা Logo চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব বন্ধে কঠোর হুশিয়ারি রবি’র Logo তানোরে ব্র্যাকের বীজ ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ Logo রূপগঞ্জে সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্য প্রতিরোধ ও দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে শান্তি সমাবেশ Logo সদরপুর প্রেসক্লাবের বিশেষ সভা Logo ফরিদপুর জেলা খেলাঘরের উদ্যোগে তপন বোস স্মৃতি পদক ও গুণীজন সম্মাননা প্রদান
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কোটি টাকার লোভে আরাভ সেজেছিলেন চাঁদপুরের লিমন

আলোচিত সোনা কারবারি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভের জেল খাটার নামে প্রতারণা বিষয় নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। তার আসল আশ্রয়দাতা কে, তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে থাকলেও তদন্তকারী সংস্থাগুলো কয়েকজনের নাম উদঘাটন করতে পেরেছে। ওইসব নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে বনানীতে এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে রক্ষা করতে দীর্ঘদিন গুলশান ও বনানী এলাকায় দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর সোহেল রানা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। সোহেল রানা বর্তমানে বরখাস্ত হয়ে ভারতের একটি কারাগারে আটক আছেন। চাঁদপুরের কচুয়ার আইনপুর এলাকার বাসিন্দা আবু ইউসুফ লিমনকে কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আরেকটি জজ মিয়ার নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করেন। টাকা দেওয়া ছাড়াও জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর আশ্বাস দিয়ে আরাভের পরিবর্তে লিমনকে কারাগারে থাকতে বলা হয়। তাছাড়া পরিবারের ভরণপোষণ করার কথাও বলা হয়েছিল। কারাগারে যাওয়ার আগে তাকে লাখ টাকাও দিয়েছেন আরাভ। আর এসব কাজ চূড়ান্ত করার বিষয়টি পুুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অবহিত ছিলেন বলে একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।

এদিকে নিরপরাধ লিমন পরিবার গতকাল সোমবার দেশ জানান, সহজ-সরল ছেলেটিকে আরাভ চক্র খুনের মামলার আসামি পর্যন্ত বানিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশও জড়িত। বড় মাপের ক্রিকেটার ও টাকার প্রলোভন দেখিয়েছে চক্রটি। আরাভ নিজেকে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন। লিমনকে কারাগার থেকে বের করতে ৫ লাখ টাকার ঋণ করেছেন লিমনের বাবা নুরুজ্জামান। তিনি কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের কার্যালয়ে এমএলএস পদে চাকরি করছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, আরাভ আপাদমস্তকের একজন প্রতারক। গরিব ও নিরীহ একটি ছেলেকে ‘খুনি’ বানাতে চেয়েছে। আরাভের অপকর্মে বেশি সহায়তা করেছে ইন্সপেক্টর সোহেল রানা। আর তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের আশকারা পেয়ে সোহেল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের শেল্টারে না পেলে আরাভ এত বড় সাহস দেখাতে পারত না। তিনি আরও বলেন, আরাভকে যারা সহায়তা করেছেন তাদের তালিকা প্রায় গুটিয়ে আনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। লিমনকে লোভনীয় অফার দেওয়া হয়েছিল। কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাসের পাশাপাশি তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর সেই অফারে লিমনও স্বাদ নেয়। চলে যায় সোজা কারাগারে। এসব বিষয় আমাদের নজরে এলে গোপনে তদন্ত করি। পুলিশের কয়েকটি ইউনিটও আলাদাভাবে তদন্ত করে সত্যতা পায়। তথ্যগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়।

-আরাভ খান।

আরেক জজ মিয়ার নাটক : পুলিশ সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আলোচিত জজ মিয়ার মতোই আরেক জজ মিয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন আরাভ। পুলিশ হত্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নামেন তিনি। দেশত্যাগের আগে আবু ইউসুফ লিমনকে বাছাই করেন তিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে কৌশলে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন আরাভ। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি ‘ওপরের মহলকে’ ম্যানেজ করার কথা বলে হাতিয়ে নেন অর্থ। সহায়তা করেন আরেকটি জজ মিয়ার নাটক বানাতে। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর রবিউল ইসলাম আপন সেজে ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন লিমন। ৯ মাস কারাভোগের পর তিনি জামিন পান। ২০১৬ সালে লিমন এসএসসি পাস করেছেন। পরে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায় ম্যার্টসে চার বছরমেয়াদি কোর্সে অংশ নেন। কিন্তু আরাভের পরামর্শে তিনি ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং ক্রিকেট খেলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার সিংগাড্ডা ইউনিয়নের আইনপুর উত্তরপাড়া। আয়শা আকতার লিজা ও খাদিজা আক্তার তিশা নামে তার দুই বোন আছে। অভাব অনটনের মধ্যে লিমন বড় হয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

লিমনের বাবা নুরুজ্জামান গতকাল বলেন, “আরাভকে আমরা ‘আপন’ হিসেবেই চিনি। সে একটা মহাপ্রতারক। সে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আমার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছে। আপন আমাকে জানিয়েছিল, আপনার ছেলেকে আমি ছোট ভাই হিসেবে দেখি। তাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানো হবে। আপনাদের কোনো অভাব-অনটন থাকবে না। প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়া হবে। এসব কথা বলার পর আমার মনে ‘খটকা’ লাগে। এরই মধ্যে লিমনকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নিখোঁজ থাকায় কচুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।” তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি জানতে পারি লিমন কারাগারে আছে। পরে আমি কাশিমপুর কারাগারে যাই। কিন্তু করোনা প্রকোপের কারণে তার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। গ্রামের বাড়িতে এসে লোকজনকে বিষয়টি অবহিত করি। ছেলের মুক্তির জন্য একটি এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করে লিমনকে কারাগার থেকে বের করা হয়। আপন আমাদের জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে।’ তাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান নুরুজ্জামান।

জাতীয় পরিচয়পত্রেও জালিয়াতি : সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে জানায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশকারা পেয়ে অল্প সময়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামিদামি মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আড়ালে সোনা চোরাকারবার চালান। ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাতে পিয়াসাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলে আরাভের নামটিও উঠে আসে। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের কারণে তার নামটি প্রকাশ করা হয়নি। সমাজের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ছবি উঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার কাজটিও চালাতেন আরাভ।

সোনা কারবারি আরাভ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া এলাকায় রবিউল ইসলাম ওরফে হৃদয় ওরফে সোহাগ মোল্লা নামে পরিচিত। তিন ভাইবোনের মধ্যে আরাভ বড়। বিয়ে করেছেন পাঁচটি। তার একটি সন্তান আছে। কিছুদিন আগে সন্তান ও বাবা-মা ও দুই বোনকে দুবাই নিয়ে যান আরাভ। দেশে এলেও এলাকায় তেমন একটা যেতেন না। বেশিরভাগ সময় থাকেন গুলশান ও বনানী এলাকার অভিজাত হোটেলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আরাভ মহাজালিয়াতি চক্রের সদস্য। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রেও তিনি জালিয়াতি করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম লেখা আছে রবিউল ইসলাম। বাবার নাম মতিউর রহমান, মায়ের নাম লাকি এবং স্ত্রীর নাম রুমা। তিনি মাধ্যমিক পাস করেছেন এবং জন্মস্থান বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া ইউনিয়নে। অথচ তার বাড়ি গোপালগঞ্জ।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির বিপক্ষে যাওয়ায় ১৫ নেতাকে শোকজ

error: Content is protected !!

কোটি টাকার লোভে আরাভ সেজেছিলেন চাঁদপুরের লিমন

আপডেট টাইম : ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক :

আলোচিত সোনা কারবারি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভের জেল খাটার নামে প্রতারণা বিষয় নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। তার আসল আশ্রয়দাতা কে, তা এখনো ধোঁয়াশার মধ্যে থাকলেও তদন্তকারী সংস্থাগুলো কয়েকজনের নাম উদঘাটন করতে পেরেছে। ওইসব নাম যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে বনানীতে এসবির পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে রক্ষা করতে দীর্ঘদিন গুলশান ও বনানী এলাকায় দায়িত্বরত ইন্সপেক্টর সোহেল রানা সব ধরনের সহায়তা করেছেন। সোহেল রানা বর্তমানে বরখাস্ত হয়ে ভারতের একটি কারাগারে আটক আছেন। চাঁদপুরের কচুয়ার আইনপুর এলাকার বাসিন্দা আবু ইউসুফ লিমনকে কোটি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে আরেকটি জজ মিয়ার নাটক সাজানোর পরিকল্পনা করেন। টাকা দেওয়া ছাড়াও জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর আশ্বাস দিয়ে আরাভের পরিবর্তে লিমনকে কারাগারে থাকতে বলা হয়। তাছাড়া পরিবারের ভরণপোষণ করার কথাও বলা হয়েছিল। কারাগারে যাওয়ার আগে তাকে লাখ টাকাও দিয়েছেন আরাভ। আর এসব কাজ চূড়ান্ত করার বিষয়টি পুুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অবহিত ছিলেন বলে একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।

এদিকে নিরপরাধ লিমন পরিবার গতকাল সোমবার দেশ জানান, সহজ-সরল ছেলেটিকে আরাভ চক্র খুনের মামলার আসামি পর্যন্ত বানিয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশও জড়িত। বড় মাপের ক্রিকেটার ও টাকার প্রলোভন দেখিয়েছে চক্রটি। আরাভ নিজেকে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন। লিমনকে কারাগার থেকে বের করতে ৫ লাখ টাকার ঋণ করেছেন লিমনের বাবা নুরুজ্জামান। তিনি কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের কার্যালয়ে এমএলএস পদে চাকরি করছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, আরাভ আপাদমস্তকের একজন প্রতারক। গরিব ও নিরীহ একটি ছেলেকে ‘খুনি’ বানাতে চেয়েছে। আরাভের অপকর্মে বেশি সহায়তা করেছে ইন্সপেক্টর সোহেল রানা। আর তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের আশকারা পেয়ে সোহেল বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের শেল্টারে না পেলে আরাভ এত বড় সাহস দেখাতে পারত না। তিনি আরও বলেন, আরাভকে যারা সহায়তা করেছেন তাদের তালিকা প্রায় গুটিয়ে আনা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। লিমনকে লোভনীয় অফার দেওয়া হয়েছিল। কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাসের পাশাপাশি তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর সেই অফারে লিমনও স্বাদ নেয়। চলে যায় সোজা কারাগারে। এসব বিষয় আমাদের নজরে এলে গোপনে তদন্ত করি। পুলিশের কয়েকটি ইউনিটও আলাদাভাবে তদন্ত করে সত্যতা পায়। তথ্যগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়।

-আরাভ খান।

আরেক জজ মিয়ার নাটক : পুলিশ সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আলোচিত জজ মিয়ার মতোই আরেক জজ মিয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন আরাভ। পুলিশ হত্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নামেন তিনি। দেশত্যাগের আগে আবু ইউসুফ লিমনকে বাছাই করেন তিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে কৌশলে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন আরাভ। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি ‘ওপরের মহলকে’ ম্যানেজ করার কথা বলে হাতিয়ে নেন অর্থ। সহায়তা করেন আরেকটি জজ মিয়ার নাটক বানাতে। ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর রবিউল ইসলাম আপন সেজে ঢাকা মুখ্য মহানগর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন লিমন। ৯ মাস কারাভোগের পর তিনি জামিন পান। ২০১৬ সালে লিমন এসএসসি পাস করেছেন। পরে কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ায় ম্যার্টসে চার বছরমেয়াদি কোর্সে অংশ নেন। কিন্তু আরাভের পরামর্শে তিনি ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন এবং ক্রিকেট খেলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার সিংগাড্ডা ইউনিয়নের আইনপুর উত্তরপাড়া। আয়শা আকতার লিজা ও খাদিজা আক্তার তিশা নামে তার দুই বোন আছে। অভাব অনটনের মধ্যে লিমন বড় হয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

লিমনের বাবা নুরুজ্জামান গতকাল বলেন, “আরাভকে আমরা ‘আপন’ হিসেবেই চিনি। সে একটা মহাপ্রতারক। সে আমেরিকার নাগরিক ও চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আমার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছে। আপন আমাকে জানিয়েছিল, আপনার ছেলেকে আমি ছোট ভাই হিসেবে দেখি। তাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করা হয়েছে। তাকে জাতীয় দলের ক্রিকেটার বানানো হবে। আপনাদের কোনো অভাব-অনটন থাকবে না। প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ দেওয়া হবে। এসব কথা বলার পর আমার মনে ‘খটকা’ লাগে। এরই মধ্যে লিমনকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নিখোঁজ থাকায় কচুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।” তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি জানতে পারি লিমন কারাগারে আছে। পরে আমি কাশিমপুর কারাগারে যাই। কিন্তু করোনা প্রকোপের কারণে তার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। গ্রামের বাড়িতে এসে লোকজনকে বিষয়টি অবহিত করি। ছেলের মুক্তির জন্য একটি এনজিও থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করে লিমনকে কারাগার থেকে বের করা হয়। আপন আমাদের জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে।’ তাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান নুরুজ্জামান।

জাতীয় পরিচয়পত্রেও জালিয়াতি : সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে জানায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশকারা পেয়ে অল্প সময়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামিদামি মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার আড়ালে সোনা চোরাকারবার চালান। ২০২১ সালের ২ আগস্ট রাতে পিয়াসাসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলে আরাভের নামটিও উঠে আসে। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের কারণে তার নামটি প্রকাশ করা হয়নি। সমাজের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ছবি উঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার কাজটিও চালাতেন আরাভ।

সোনা কারবারি আরাভ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া এলাকায় রবিউল ইসলাম ওরফে হৃদয় ওরফে সোহাগ মোল্লা নামে পরিচিত। তিন ভাইবোনের মধ্যে আরাভ বড়। বিয়ে করেছেন পাঁচটি। তার একটি সন্তান আছে। কিছুদিন আগে সন্তান ও বাবা-মা ও দুই বোনকে দুবাই নিয়ে যান আরাভ। দেশে এলেও এলাকায় তেমন একটা যেতেন না। বেশিরভাগ সময় থাকেন গুলশান ও বনানী এলাকার অভিজাত হোটেলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আরাভ মহাজালিয়াতি চক্রের সদস্য। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্রেও তিনি জালিয়াতি করেছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম লেখা আছে রবিউল ইসলাম। বাবার নাম মতিউর রহমান, মায়ের নাম লাকি এবং স্ত্রীর নাম রুমা। তিনি মাধ্যমিক পাস করেছেন এবং জন্মস্থান বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া ইউনিয়নে। অথচ তার বাড়ি গোপালগঞ্জ।


প্রিন্ট