ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু Logo লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় ও কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ৭ই ডিসেম্বর কর্মশালা সফল করার লক্ষ্যে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে সার পচার, বিতরণে অনিয়ম, হট্টগোল ও মারপিট Logo ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে Logo সুন্দরবন প্রেসক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন Logo বাগাতিপাড়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে স্বামীর আত্মহত্যা ! Logo কালুখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ Logo বাগাতিপাড়ায় জাটকা মাছ জব্দ করে দন্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

চরভদ্রাসনে বিত্তবানদের মাঝে ভিজিডি কার্ড বিতরনের অভিযোগ!

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তানিয়া আক্তার তার নিজ পরিবার, জ্ঞাতিগোষ্ঠী ও বিত্তবানদের মাঝে ভিজিডি (ভিডব্লিউবি) কার্ড বিতরন করেছেন বলে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মৃধা পরিবারের মেয়ে বলে ওই মহিলা ইউপি সদস্যর অনিয়মের বিরুদ্ধে দুস্থরা অভিযোগ দায়েরের হিম্মত করে না। এতে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আশপাশের ৯টি গ্রামের অসহায়, দুস্থ ও বিধবারা।
জানা যায়, উপজেলা থেকে ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ পাওয়ার পর ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার মিলে অভ্যান্তরিন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কার্ডের চুড়ান্ত তালিকা তৈরীর জন্য ওই মহিলা সদস্য প্রায় অর্ধশত দুস্থ পরিবারের নামের তালিকা দেওয়ার অনুমতি পান। কিন্তু যাচাই বাছাই কমিটির কোনো নির্দেশনা অনুসরন না করে ওই মহিলা সদস্য প্রভাব প্রতিপত্তির জোরে এলাকার বিত্তবান ও স্বজনদের মাঝে সবগুলো ভিজিডি কার্ড বিতরন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলা কামার ডাঙ্গী গ্রামে ওই মহিলা সদস্য তানিয়া আক্তারের  বাড়ীর পাশে তার চাচা এলাকার কোটিপতি পরিবার পরশ মৃধার বাড়ী। আর কোটিপতি পরশ মৃধার পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২টি ভিজিডি (ভিডব্লিউবি) কার্ড ও একটি ১৫ টাকার কার্ড। কোটিপতি পরশ মৃধার দুই ছেলে শহীদ মৃধা ও জাহিদ মৃধা গত ১০ বছর ধরে সৌদি আরব দেশে দুটি গাড়ীর গ্রেজের ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছেন।
ইতোমধ্যে এ কোটিপতি পরিবারটি ঢাকার সাভার এলাকায় দু’টি বাড়ী গড়েছেন ও ফরিদপুর জেলা শহরে আরও দু’টি বাড়ী সহ উপজেলা সদর বাজারে বড় বড় দোকান পজেশনের মালিকানা রয়েছেন। ওই কোটিপতি পরিবারের প্রবাসী ব্যাবসায়ী বড় ছেলে শহীদ মৃধার স্ত্রী সাজেদা আক্তারের নামে এ বছর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে একটি ভিজিডি (ভিডব্লিউবি) কার্ড। আবার কোটিপতি পরশ মৃধার স্ত্রী আহাল্লাদি বেগমের নামে রয়েছে আরেকটি ১৫ টাকা দরে চালের কার্ড।
এ ছাড়া ওই মহিলা সদস্যর আপন বোন ছনিয়া আক্তারের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে একটি ভিজিডি কার্ড, আরেক সৌদী প্রবাসী চাচা রবি মৃধার স্ত্রী লিপি আক্তারের নামে রয়েছে একটি কার্ড। মহিলা সদস্যর জ্ঞাতিগোষ্ঠী ও বিত্তবানদের মাধ্যে জলিল মৃধা, রশিদ মৃধা, হালিম মৃধা ও জমেলা খাতুনের নামে কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার কার্ড বিতরনের অনিয়মের ব্যাপারে ওই মহিলা সদস্য তানিয়া আক্তারকে জিজ্ঞেস করলে সে মুঠোফোনের জানায়,(রেকর্ড সংরক্ষিত), “আমার ইউপি নির্বাচন চালাকালিন এলাকার যারা জান-জীবন দিয়ে আমার জন্য কষ্ট করেছে এ বছর আমি তাদের সন্তুষ্টির জন্য ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ দিয়েছে। এটা আমার ভুল হয়েছে, এরকম ভুল আর হবে না”। ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান জানান, “ ওই মহিলা সদস্যকে বার বার নিষেধ করেছি, কিন্তু সে কারো কথা শুনে নাই”। এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বলেন, “আসলে আমরা ভিজিডি (ভিডব্লিউবি) কার্ডগুলো যাচাই করার জন্য সময় পেয়েছি খুব কম, তারপরও অনিয়মের বিষয়টি যাচাই করে কার্ড বাতিল করা যাবে”। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, “যেসব দুস্থরা অভিযোগ নিয়ে আসে তাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন, আমি ব্যবস্থা নিবো”।
আর ওই এলাকার অসহায়, দুস্থ, বিধবা, দিনমজুর, রিক্সাচালক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানায়, মহিলা সদস্য তানিয়া আক্তার নির্বাচিত হওয়ার পর আমরা সরকারি কোনো সাহায্যতো পায়ই নাই, বরং আমাদের নামের আগে বরাদ্দকৃত ১৫ টাকার কার্ডগুলোও কেটে মহিলা সদস্যর স্বজনদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে এলাকার সংখ্যালঘু কিছু হিন্দু পরিবার জানায়, “ ওই মহিলা সদস্যর পরিবার মনে করে হিন্দুরা ভোট দেয় নাই, তাই গত এক বছরে সরকারি সাহায্য, শীতবস্ত্র ও সবগুলো কার্ড তার আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিতরন করা হয়েছে। আমরা দুস্থ হয়েও কিছুই পাই নাই”।
উল্লেখ্য. ভিজিডি (ভিডব্লিউবি) কার্ড বরাদ্দ প্রকল্পর আওতায় এলাকার অসহায়, দুস্থ, বিধবা বা যার ০৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশর বেশী জমি নাই তারাই কেবল এ কার্ডের সুবিধা পাওয়ার বিধান রাখে।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু

error: Content is protected !!

চরভদ্রাসনে বিত্তবানদের মাঝে ভিজিডি কার্ড বিতরনের অভিযোগ!

আপডেট টাইম : ০৫:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩
মোঃ আসলাম বেপারী, স্টাফ রিপোর্টার, চরভদ্রাসন :
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তানিয়া আক্তার তার নিজ পরিবার, জ্ঞাতিগোষ্ঠী ও বিত্তবানদের মাঝে ভিজিডি (ভিডব্লিউবি) কার্ড বিতরন করেছেন বলে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মৃধা পরিবারের মেয়ে বলে ওই মহিলা ইউপি সদস্যর অনিয়মের বিরুদ্ধে দুস্থরা অভিযোগ দায়েরের হিম্মত করে না। এতে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আশপাশের ৯টি গ্রামের অসহায়, দুস্থ ও বিধবারা।
জানা যায়, উপজেলা থেকে ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ পাওয়ার পর ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার মিলে অভ্যান্তরিন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে কার্ডের চুড়ান্ত তালিকা তৈরীর জন্য ওই মহিলা সদস্য প্রায় অর্ধশত দুস্থ পরিবারের নামের তালিকা দেওয়ার অনুমতি পান। কিন্তু যাচাই বাছাই কমিটির কোনো নির্দেশনা অনুসরন না করে ওই মহিলা সদস্য প্রভাব প্রতিপত্তির জোরে এলাকার বিত্তবান ও স্বজনদের মাঝে সবগুলো ভিজিডি কার্ড বিতরন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলা কামার ডাঙ্গী গ্রামে ওই মহিলা সদস্য তানিয়া আক্তারের  বাড়ীর পাশে তার চাচা এলাকার কোটিপতি পরিবার পরশ মৃধার বাড়ী। আর কোটিপতি পরশ মৃধার পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২টি ভিজিডি (ভিডব্লিউবি) কার্ড ও একটি ১৫ টাকার কার্ড। কোটিপতি পরশ মৃধার দুই ছেলে শহীদ মৃধা ও জাহিদ মৃধা গত ১০ বছর ধরে সৌদি আরব দেশে দুটি গাড়ীর গ্রেজের ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছেন।
ইতোমধ্যে এ কোটিপতি পরিবারটি ঢাকার সাভার এলাকায় দু’টি বাড়ী গড়েছেন ও ফরিদপুর জেলা শহরে আরও দু’টি বাড়ী সহ উপজেলা সদর বাজারে বড় বড় দোকান পজেশনের মালিকানা রয়েছেন। ওই কোটিপতি পরিবারের প্রবাসী ব্যাবসায়ী বড় ছেলে শহীদ মৃধার স্ত্রী সাজেদা আক্তারের নামে এ বছর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে একটি ভিজিডি (ভিডব্লিউবি) কার্ড। আবার কোটিপতি পরশ মৃধার স্ত্রী আহাল্লাদি বেগমের নামে রয়েছে আরেকটি ১৫ টাকা দরে চালের কার্ড।
এ ছাড়া ওই মহিলা সদস্যর আপন বোন ছনিয়া আক্তারের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে একটি ভিজিডি কার্ড, আরেক সৌদী প্রবাসী চাচা রবি মৃধার স্ত্রী লিপি আক্তারের নামে রয়েছে একটি কার্ড। মহিলা সদস্যর জ্ঞাতিগোষ্ঠী ও বিত্তবানদের মাধ্যে জলিল মৃধা, রশিদ মৃধা, হালিম মৃধা ও জমেলা খাতুনের নামে কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার কার্ড বিতরনের অনিয়মের ব্যাপারে ওই মহিলা সদস্য তানিয়া আক্তারকে জিজ্ঞেস করলে সে মুঠোফোনের জানায়,(রেকর্ড সংরক্ষিত), “আমার ইউপি নির্বাচন চালাকালিন এলাকার যারা জান-জীবন দিয়ে আমার জন্য কষ্ট করেছে এ বছর আমি তাদের সন্তুষ্টির জন্য ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ দিয়েছে। এটা আমার ভুল হয়েছে, এরকম ভুল আর হবে না”। ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ খান জানান, “ ওই মহিলা সদস্যকে বার বার নিষেধ করেছি, কিন্তু সে কারো কথা শুনে নাই”। এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বলেন, “আসলে আমরা ভিজিডি (ভিডব্লিউবি) কার্ডগুলো যাচাই করার জন্য সময় পেয়েছি খুব কম, তারপরও অনিয়মের বিষয়টি যাচাই করে কার্ড বাতিল করা যাবে”। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, “যেসব দুস্থরা অভিযোগ নিয়ে আসে তাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন, আমি ব্যবস্থা নিবো”।
আর ওই এলাকার অসহায়, দুস্থ, বিধবা, দিনমজুর, রিক্সাচালক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানায়, মহিলা সদস্য তানিয়া আক্তার নির্বাচিত হওয়ার পর আমরা সরকারি কোনো সাহায্যতো পায়ই নাই, বরং আমাদের নামের আগে বরাদ্দকৃত ১৫ টাকার কার্ডগুলোও কেটে মহিলা সদস্যর স্বজনদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে এলাকার সংখ্যালঘু কিছু হিন্দু পরিবার জানায়, “ ওই মহিলা সদস্যর পরিবার মনে করে হিন্দুরা ভোট দেয় নাই, তাই গত এক বছরে সরকারি সাহায্য, শীতবস্ত্র ও সবগুলো কার্ড তার আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিতরন করা হয়েছে। আমরা দুস্থ হয়েও কিছুই পাই নাই”।
উল্লেখ্য. ভিজিডি (ভিডব্লিউবি) কার্ড বরাদ্দ প্রকল্পর আওতায় এলাকার অসহায়, দুস্থ, বিধবা বা যার ০৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশর বেশী জমি নাই তারাই কেবল এ কার্ডের সুবিধা পাওয়ার বিধান রাখে।

প্রিন্ট