ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে পদ্মায় স্পিড বোট দুর্ঘটনার চার দিন পর বুধবার(৮ ফেব্রুয়ারী) নদীতে ভাসমান অবস্থায় আরও দুটি লাশ উদ্ধার করেছে ডুবুরিদল। এ নিয়ে গত চার দিনে মোট ৫টি মরদেহ উদ্ধার হলো। চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা’র সার্বিক ত্বাবধানে গত দুদিন ধরে চলছে পদ্মা নদীতে স্পিড বোট দুর্ঘটনায় নিখোঁজ থাকা ব্যাক্তিদের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে ডুবুরি দল। তারই ধারাবাহীকতায় বোট দুর্ঘটনায় নিখোঁজ থাকার চার দিন পর বুধবার দুপুরে নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় আরও দুটি লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
এ দিকে নিখোঁজ ব্যাক্তিদের সন্ধানে আসা স্বজনদের আহাজরিতে ভারি হয়ে উঠেছে নদী পারের বাতাস। কখন সন্ধান মিলবে তাদের স্বজনের মরদেহের। আজ উদ্ধার হওয়া সদরপুর উপজেলার সমশের মাতুব্বরের ডাঙ্গীর বাসিন্দা ছুরমান শেখের ছেলে খোকান শেখ(৪০) এর লাশ সনাক্ত করেন তার স্ত্রী সাহেদা বেগম ও ফরিদপুর মুন্সির বাজার এলাকার জয় গোপাল গোস্বামীর ছেলে বলরাম গোস্বামী(৩৩)এর লাশ শনাক্ত করেন তার ভাই কৃষ্ণ গোপাল গোস্বামী। পরে নিজ নিজ স্বজনদের কাছে মরদেহ দুটি হস্তান্তর করেন ইউএনও।
বুধবার বিকেলে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন (ডিডিএলজি) মোঃ আসলাম মোল্যা,উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ কাউছার,ইউএনও তানজিলা কবির ত্রপা ও সদও ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আজাদ খান। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্ষন শেষে জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার বলেন “ দুর্ঘটনাস্থলটি ঢাকার দোহারের ভেতর হলেও লাশ গুলো উদ্ধার হচ্ছে চরভদ্রান উপজেলার পদ্মার সিমানা হতে। স্পিড বোট দুর্ঘটনায় নিখোঁজ মরদেহ উদ্ধারে ইউএনও,চরঝাউকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান,সদ ইউপি চেয়ারম্যান ও নিহতের স্বজনেরা ডুবুরি দলের সাথে সারাদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল ইউএনও কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিহতের পরিবারের পাশো দারানোর জন্য। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারে যদি কোন উপার্যনক্ষম ব্যাক্তি থাকে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা হবে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশ কোন মানুষ অসহায় থাকবেনা। জেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে আছে। এ পর্যন্ত ৫টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। একজনের লাশ এখনও নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ লাশটি না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের উদ্ধার অভিযান চলবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার(৭ ৮ ফেব্রুয়ারী ) সন্ধায় গাজিরটেক ইউনিয়নের চর অযোধ্যা তেলিডাঙ্গী গ্রামের কুদ্দুস খন্দকারের ছেলে রানা খন্দকার(২২) ও ফরিদপুর সদরের হাট গোবিন্দপুর গ্রামের মোঃ কাইয়ুম আলী মৃধার ছেলে মোঃ দাউদ মৃধা(৩৮)এর লাশ উদ্ধার করে নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। উল্লেখ্য গত রবিবার (৫ ৮ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৯টার দিকে ঢাকার দোহার ও চরভদ্রাসন উপজেলার চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের বর্ডার এলাকার পদ্মা নদীতে দুটি স্পিড বোটের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুটি বাহনই উল্টে যায়। এতে ঘটাস্থলেই ফরিদপুরের কোতয়ালী থানার গুহ লক্ষীপুর এলাকার শুকুমার হালদার(৬৫)নামের একজনের মৃত্যু হয়। তিনি ঐ এলাকার শিরিশ হালদারের পুত্র।এই ঘটনায় কয়েকজন আহত ও বেশ কয়েকজন নিখোঁজ ছিল।
স্পিড বোট দুর্ঘটনা ও লাশ উদ্ধারের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা বলেন ‘ এই দুর্ঘটনাটি মর্মান্তিক ও অত্যান্ত দু:খজনক। গত দুদিন ধরে ঢাকা, ফরিদপুর ও চরভদ্রাসন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নিখোঁজ ব্যাক্তিদের লাশ উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৫টি লাশ উদ্ধার হয়েছে এখনও নিখোঁজ থাকা সদর ইউনিয়নের ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রামের শহিদুল ইসলাম(৩৮)নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধারে কাজ করছে ডুবুরি দল।
এ সময় সকল যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরে নদী চলা চলের আহŸবান জানিয়ে তিনি আরও বলেন ঘটনার দিন সকালে ঘন কুয়াসা থাকার কারনে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া বোট দুটির মালিক নদীর ঐ পারের ঢাকা জেলার। চরভদ্রাসন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ দাফন কাফনের জন্য প্রাথমিক অবস্থায় পরিবার প্রতি ৫হাজার করে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। চরভদ্রাসন থানায় একটি মামলা হয়েছে এই দুর্ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে দ্রæত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানা ইউএনও।
এ ছাড়া স্পিড বোট দুর্ঘটনায় নিখোজ ব্যাক্তিদের সন্ধানে ডুবুরি দলের পাশাপাশি চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান বদু মৃধা ও স্বজনেরা নদীতে বোট নিয়ে উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখেছে।